Connect with us

মঞ্চ-শিল্প

শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে দাঁড়িয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগ

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছেন ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ (ছবি: ফেসবুক)

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ পদত্যাগ করেছেন। গতকাল (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন তিনি। তখন মঞ্চে থাকা শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের আয়োজনে মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসবের সমাপনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। এভাবে পদত্যাগের কারণ হিসেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন পর্যায়ের অসহযোগিতার কথা জানিয়েছেন তিনি। অনুষ্ঠানে এসব নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা গেছে তাকে।

২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পান নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করলেন তিনি।

ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ (ছবি: ফেসবুক)

পদত্যাগ প্রসঙ্গে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘গণঅভ্যু্ত্থানে প্রাণ হারানো অনেকের কথা ভেবে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। এ দায়িত্ববোধের জন্য নিজের নাট্যচর্চা বন্ধ করেছি, সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত জীবন ছিলো না। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জন্য শতভাগ কাজ করেছি। সবার আগে শিল্পকলা একাডেমি– এই নীতি অনুসরণ করেছি। কোনও জায়গায় অর্থনৈতিক অনিয়ম ও অনৈতিক কাজ করতে দিতে চাইনি। এসব কাজ করেছিলাম, শর্ত ছিলো যেন সচিবালয় কোনও হস্তক্ষেপ না করে। ইদানীং ব‍্যাপক আকারে হস্তক্ষেপ হচ্ছে। আমি আর বিস্তারিত বললাম না।’

শিল্পকলা একাডেমির সদ্য সাবেক মহাপরিালক যোগ করেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে যেন ০ দশমিক ৫ ভাগ বাজেট বরাদ্দ আসে। সেই বরাদ্দ আসে নাই। আমরা চেয়েছিলাম ১৬৫ কোটি টাকা, সেটা তারা দেয় নাই। তার মনে করে যেন এটা তাদের নিজের টাকা, এভাবে তারা বন্টন করে।  এতোদিন কাজ করেছিলাম একটি মূলনীতি নিয়ে যে, সমাজের কেন্দ্রে শিল্পকলা স্থাপিত হোক, গণমুখী শিল্পচর্চা হোক, উৎসবমুখর বাংলাদেশ হোক ও হাজার নদীর বাংলাদেশে হাজার মত-পথ, ‍ধর্ম-বর্ণ মিলে একসঙ্গে যেন কাজ করতে পারি। আমার লক্ষ‍্য ছিলো– শিল্পকলাতে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা আসুক, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা আসুক।’

মুনীর চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, “মুনীর চৌধুরী আমার প্রাণের মানুষ, যাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি বারবার। তিনি সেই মানুষ, যিনি কখনও ভাবেন নাই নাটক করতে হলে কিছু দরকার আছে। তিনি সেই মানুষ যিনি জেলখানায় বসে ‘কবর’ লিখেছিলেন। জেলখানায় কোনও আর্থিক অনুদান কিংবা সহায়তা কিছু না পেয়ে কয়েদিরা ভাষা আন্দোলনের পরে ১৯৫৩ সালে নাটকটি মঞ্চায়ন করেছিলেন। মুনীর চৌধুরী নামে আমি গর্ববোধ করি। মুনীর চৌধুরীর নামে বলতে চাই, আমার বয়স হয়েছে ৭০ বছর। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জন্য যে কাজ করেছি, তাতে এখন আর মন্ত্রণালয়ে গিয়ে লড়াই করে তাদের হাত-পা ধরার কোনও জায়গা নাই, আমার দরকারও নাই। মন্ত্রণালয় তার মতো চলুক। মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা বুঝুক গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা কাজ করেছি। সেইভাবে যদি তারা একটু ভেবে কাজ করেন।”

ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ (ছবি: ফেসবুক)

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সকর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিল্পীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাবেক মহাপরিচালক বলেন, ‘তাদের ব্যাপক কর্মকাণ্ডের জন্য বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে প্রচুর নাট্যচর্চা ও শিল্পকর্ম হচ্ছে, সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ আসলেই ফিরে পেয়েছে। এখন সঠিক সময় বলে মনে করি, আর বোধহয় ভবিষ্যতে কাজ করা সম্ভব হবে না এখানে। আমার পদত্যাগপত্র আপনাদের সামনে সচিবের কাছে হস্তান্তর করছি।’’

পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আবার বলতে শুরু করেন সৈয়দ জামিল আহমেদ, ‘আমার এখন নিজের কাজে ফিরে যাওয়া দরকার। আমলাতন্ত্রের পেছনে দশবার ফোন দিয়ে টাকা আদায় করা যা আমার ব্যক্তিগত কাজের জন্য না, শিল্পকলা একাডেমির জন্য দরকার। সেই কাজ যদি না করতে দেয় আর আমাদের যদি পরে পদে পদে বাধা দেয় তাহলে এখানে থেকে লাভ নেই। তাই পদত্যাগ করা আমার সুচিন্তিত ভাবনা। এজন্য গতকাল (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত এ নিয়ে ভেবে সচিবকে দিলাম। যেহেতু পদত্যাগপত্র দিয়েছি, আমাকে বলতে বাধা দেওয়া হয়েছিলো যে, ‘আদিবাসী’ বলতে পারবো না। আজ বলছি, আদিবাসীদের দাবি পূর্ণ হোক, তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধ হোক, তাদের অধিকার অর্জিত হোক। একইসঙ্গে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ কায়েম হোক। জুলাই-আগস্টে প্রাণ হারানো শহীদদের রক্ত সার্থক হোক। আমরা গণঅভ্যুত্থানের কথা ভুলে যাচ্ছি। গণঅভ্যুত্থানে আমরা যে বৈষম‍্যবিরোধী বাংলাদেশ চেয়েছিলাম সেটা সত‍্যিকারভাবে সার্থক হোক। সেজন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ভবিষ্যতে নিরলস পরিশ্রম করে যাবে।’

ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ (ছবি: ফেসবুক)

সৈয়দ জামিল আহমেদ ১৯৫৫ সালের ৭ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার স্নাতক প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন সৈয়দ জামিল আহমেদ। ১৯৮৯ সালে তিনি ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক থেকে থিয়েটার আর্টসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রি। তার উল্লেখযোগ্য নাট্য প্রযোজনার মধ্যে রয়েছে ‘কমলা রানীর সাগর দীঘি’ (১৯৯৭), ‘এক হাজার আর এক থি রাত’ (১৯৯৮), ‘বেহুলার ভাসান’ (২০০৪), ‘পাহিয়ে’ (২০০৬), ‘সং ভং চং’ (২০০৬)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এই বিভাগেই শিক্ষকতা করছেন গুণী এই ব্যক্তি।

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ