Connect with us

টালিউড

বিয়ের পর আমার কাজ বেড়েছে: তাসনিয়া ফারিণ

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

তাসনিয়া ফারিণ (ছবি: র‌্যাফ ক্লিক)

অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ এখন কলকাতায়। অনেকদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় তার কাজের কথা চলছে। এতে চঞ্চল চৌধুরীর থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। 

আজ (২৭ অক্টোবর) প্রকাশিত আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাসনিয়া ফারিণ বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই টোনিদার (অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর ডাকনাম) সঙ্গে কথা চলছে। তার সঙ্গে কাজের জন্য মুখিয়ে আছি।’

গত ১৮ জুলাই ভারতে মুক্তি পেয়েছে অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী পরিচালিত ‘ডিয়ার মা’। তাসনিয়া ফারিণ উল্লেখ করেন, ‘আমি ও চঞ্চলদা টোনিদার বাড়িতে একসঙ্গে বাংলা সিনেমাটি দেখেছি। জয়া আহসান আপু কী ভালো অভিনয় করেছেন। সিনেমাটির বিষয়বস্তু খুবই স্পর্শকাতর। প্রতিটি দৃশ্য ভীষণ যত্ন নিয়ে ক্যামেরায় ধরেছেন টোনিদা।’

তাসনিয়া ফারিণ (ছবি: র‌্যাফ ক্লিক)

আনন্দবাজারকে তাসনিয়া ফারিণ জানান, গত ২৩ অক্টোবর কলকাতায় এসেছেন তিনি। এর আগে সর্বশেষ গত বছর কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এসেছিলেন তিনি। মাঝে ভিসা না পাওয়ায় দেবের সঙ্গে একটি সিনেমায় অভিনয় করা হয়নি তার। এখন সেই সমস্যা মিটে গেছে।

এবারের যাত্রায় কোয়েল মল্লিক অভিনীত ‘স্বার্থপর’ সিনেমার প্রিমিয়ারে দেবের সঙ্গে তাসনিয়া ফারিণের প্রথমবার সামনাসামনি দেখা হয়েছে। এর আগে তাদের শুধু কথা হয়েছে মোবাইল ফোনে।

তাসনিয়া ফারিণ (ছবি: র‌্যাফ ক্লিক)

২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অতনু ঘোষের ‘আরো এক পৃথিবী’র মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তাসনিয়া ফারিণের। এতে প্রতীক্ষা চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন তিনি। গত বছর মুক্তি পাওয়া ধ্রুব হাসানের ‘ফাতিমা’র মাধ্যমে বাংলাদেশে রুপালি পর্দায় পা রাখেন এই তারকা। এটি ইরানের চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার এনে দিয়েছে তাকে।

গত জুনে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইনসাফ’-এর মাধ্যমে নাচ-গান-অ্যাকশনে ভরপুর বাণ্যিজিক সিনেমায় প্রথমবার কাজ করেছেন তাসনিয়া ফারিণ। সঞ্জয় সমদ্দারের পরিচালনায় এতে পুলিশ কর্মকর্তা জাহান খান চরিত্রে দেখা গেছে তাকে।

তাসনিয়া ফারিণ (ছবি: র‌্যাফ ক্লিক)

আনন্দবাজারের প্রশ্ন ছিলো, দুই বাংলার কাজের ধরন কি খুব আলাদা? তাসনিয়া ফারিণের উত্তর, “কাজের ধরন হয়তো একটু আলাদা। আমাদের স্বাধীন কাজ পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় হয়তো বেশি হয়। তবে কলকাতার কাজ অনেক বেশি সুসংগঠিত, পেশাদার। এর বাইরে পার্থক্য তেমন কিছুই কিন্তু নেই। একই ভাষা, দুই দেশের পরিবেশ এক। পার্থক্য কই? আমার কাছে তো ভারত ‘দ্বিতীয় বাড়ি’।”

তাসনিয়া ফারিণ বলেন, ‘আমি আমার দেশ নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত। গর্ব করার কারণও আছে। আমার দেশের মুক্তিযুদ্ধ আমাকে গর্বিত করে। অনেক কষ্টে স্বাধীন হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের রক্তে, আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য। বাংলাদেশে এখন ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। আমিও কাজ করছি। সিনেমার বাজেট আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। বড় বাজেটের কাজ হচ্ছে। আমরা আগে যে গল্প বলতাম, সেটা আরো বড় পরিসরে বলতে পারছি। বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে শুটিং হচ্ছে। গত কয়েক বছর দেখেছি, ঈদকে কেন্দ্র করে বাংলা সিনেমার ভালো ব্যবসা হচ্ছে। এজন্য প্রযোজনায় পেশাদারিত্ব এসেছে। যদিও সিনেমাহল সংখ্যা নিয়ে এখনো প্রশ্ন আছে।’

তাসনিয়া ফারিণ (ছবি: র‌্যাফ ক্লিক)

একই ঈদে বেশিসংখ্যক সিনেমার মুক্তিকে ইতিবাচকভাবেই দেখেন তাসনিয়া ফারিণ। তার দৃষ্টিতে, ‘একটা প্রতিযোগিতা থাকা দরকার। অবশ্যই সুস্থ প্রতিযোগিতা। আমি কোনো অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখিনি। গত ঈদে যেমন আমার, জয়া আপা ও শাকিব খান ভাইয়ের সিনেমা মুক্তি পেলো। আমরা সিনেমাহলে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই সবার সিনেমা দেখেছি, পরস্পরের প্রশংসা করেছি। এটাই হওয়া উচিত ইন্ডাস্ট্রিতে। উৎসবের আনন্দ তাতে আরো বাড়ে। একইসঙ্গে বিনোদন অঙ্গন ও আমাদের কাজ নিয়ে আলোচনা হয়।’

তাসনিয়া ফারিণ বিশ্বাস করেন, ‘কেউ কখনো কারো জায়গা দখল করতে পারে না। যদি দখল করতেই পারতো, তাহলে ওপার বাংলা থেকে আমায় অভিনয়ের ডাক পেয়ে এপার বাংলায় আসতে হতো না। এপার বাংলার কেউ সেই কাজ করে দিতেন। আমাকে এত ঝক্কি নিয়ে ডাকা হতো না। তাই আমি কারো বা কেউ আমার রিপ্লেসমেন্ট হতে পারবে না। ইধিকা পাল আমাদের দেশে যথেষ্ট ভালো কাজ করছেন। আবার আমাদের চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান কিংবা মোশাররফ করিম কলকাতার সিনেমায় অভিনয় করছেন। এই আদান-প্রদান দরকার। এতে আমাদের কাজের সুযোগ বাড়বে। আর আমি ঈর্ষায় ভুগি না। নিজের কাজ মন দিয়ে করি। এর বাইরে আর কিচ্ছু নিয়ে ভাবি না।’

তাসনিয়া ফারিণ (ছবি: র‌্যাফ ক্লিক)

পশ্চিমবঙ্গে নারীকেন্দ্রিক কিংবা মসলাদার বাণিজ্যিকসহ সব ধরনের সিনেমায় কাজ করার ইচ্ছে আছে ফারিণের। তার মতে, ‘যেকোনো অভিনয়শিল্পীর সব স্বাদের সিনেমায় কাজ করা উচিত। মসলাদার সিনেমা হয় বাণিজ্যর স্বার্থে। আবার অন্যধারার সিনেমায় কাজ করলে নিজের উৎকর্ষতা বাড়ে।’

কয়েক বছর ধরে দুই বাংলায় বড় পর্দায় নায়িকানির্ভর সিনেমার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তাসনিয়া ফারিণের অভিমত, পরিবর্তন আরো বেশি হওয়া দরকার ছিলো। তিনি মনে করেন, নারীর অবস্থান যতোটা বদলানো দরকার ছিলো সেই অনুযায়ী পরিবর্তন আসেনি। তার কথায়, ‘আমার লড়াই বা যাত্রাপথ খুব কঠিন ছিলো। আমাদের এক টাকা পারিশ্রমিক বাড়াতে অনেকটা পথ পেরোতে হয়। সেখানে একটা নতুন নায়ক দুটো সিনেমা করেই পারিশ্রমিক বাড়িয়ে ফেলেন। নারীকেন্দ্রিক সিনেমায় নারী নির্যাতন নয়তো নারীর অধিকারের নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখা হয় নায়িকাদের। তার বাইরে আমাদের কেউ বের করতে চান না! অথচ সিনেমা ভালো ব্যবসা না করলে দোষ দেওয়া হয় নারীকেন্দ্রিক সিনেমা বলেই চললো না! নারীকেন্দ্রিক সিনেমাকে কিন্তু আহামরি বাজেট ও হিট হওয়ার মতো গল্প দেওয়া হয় না। নায়কদের ক্ষেত্রে কিন্তু এসবের খামতি থাকে না। কিন্তু আশা করা হবে নায়কদের সমান ব্যবসা দেবে নায়িকারা! নারীর কাজ ও তার লড়াই সিনেমায় উদযাপন হয় কই? তাহলে আমরা কোথায় এগোলাম?’

তাসনিয়া ফারিণ (ছবি: র‌্যাফ ক্লিক)

ছোটপর্দার গণ্ডি পেরিয়ে তাসনিয়া ফারিণ এখন দুই দেশের বড় পর্দায় নিয়মিত কাজের মনস্থির করেছেন। এজন্য অনেকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। সেই সুবাদে সুযোগও আসছে। তবে আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেণ, ‘ছোট পর্দার নাটক আর করবো না তা কিন্তু নয়। ওই মাধ্যমই তো আমাকে তাসনিয়া ফারিণ বানিয়েছে।’

যদিও শুধু বাংলাদেশেই আগামীতে ছোট পর্দা নিয়ে ভাববেন তাসনিয়া ফারিণ। কলকাতায় টেলিভিশনের জন্য কাজ করার ইচ্ছে তার নেই। কারণ সেক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় দিতে হবে তাকে।

তাসনিয়া ফারিণ (ছবি: ফেসবুক)

২০২১ সালে ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জিফাইভে মুক্তিপ্রাপ্ত মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আট পর্বের ওয়েব সিরিজ় ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’ দুই বাংলায় তাসনিয়া ফারিণকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। ফারুকী এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। শিল্পীদের কি রাজনীতির আঙিনায় পা রাখা উচিত? আনন্দবাজারের এই প্রশ্নে তাসনিয়া ফারিণের ভাষ্য, ‘প্রত্যেকের স্বাধীন ইচ্ছা আছে। আমি রাজনীতি বুঝি না। তাই কোনোদিন এই ময়দানে পা রাখবো না। যার মনে হবে তিনি কাজটা পারবেন, সেই ব্যক্তি রাজনীতিতে আসতেই পারেন।’

বিয়ে ও ব্যক্তিজীবন প্রসঙ্গে তাসনিয়া ফারিণ বলেন, ‘বিয়ের সঙ্গে অভিনয়ের সত্যিই বিরোধ নেই। আমি তো দেখছি, বিয়ের পর আমার কাজ বেড়েছে! আমার স্বামী কোনো দিন কাজ ছাড়ার কথা বলেনি। নায়িকাদের বিয়ে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্যাবু ভেঙেছে। হলিউড থেকে শুরু করে আমাদের দেশ, নায়িকাদের বিয়ে নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামান না!’

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ