Connect with us

আলাপচারিতা

বাংলাদেশি হয়ে কলকাতার সিনেমা পরিচালনা করতে পারা আমার জন্য সম্মানের: সঞ্জয় সমদ্দার

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: অপূর্ব ফটোগ্রাফি)

ওপার বাংলার সুপারস্টার জিতের অভিনয় ও প্রযোজনায় ‘মানুষ’ মুক্তি পেয়েছে গত ২৪ নভেম্বর। এর মাধ্যমে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করলেন পরিচালক সঞ্জয় সমদ্দার। তিনিই সিনেমার গল্প লিখেছেন। এখন ওপার বাংলার দর্শকদের প্রশংসায় ভাসছেন এই নির্মাতা। তবে মেয়ের অসুস্থতার কারণে দেশে ফিরে এসেছেন। সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় ১০ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: দেশে চলেন এলেন যে?
সঞ্জয় সমদ্দার: কলকাতায় একটি প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু আমার মেয়ে দিজুর অসুস্থতার কথা জানানোর পর জিৎ দাদা বলেন, ‘আগে সন্তানের খেয়াল রাখো।’ তিনি সবসময় পরিবারকে প্রাধান্য দেন। এটা তার বড় একটা গুণ।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সিনেমা মুক্তির পর জিৎ কী বললেন?
সঞ্জয় সমদ্দার: জিৎ দাদা অনেক খুশি। তিনি লাইভে আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। আমার সঙ্গে আবার কাজ করার ইচ্ছের কথাও জানিয়েছেন। তার মুখে এটা শোনার পর ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। একজন সুপারস্টারের মুখে আলাদাভাবে আমার কথা শুনে খুব ভালো লেগেছে।

সঞ্জয় সমদ্দার ও জিৎ (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: জিতের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা নিশ্চয়ই ভোলেননি?
সঞ্জয় সমদ্দার: জিৎ দাদার সঙ্গে সেই সাক্ষাৎ আজীবন মনে থাকবে। কলকাতায় গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্টের গোপাল মাদনানি দাদার রুমে বসলাম। জিৎ দাদা লাঞ্চ করে এলেন। তিনি একজন প্রাণবন্ত মানুষ। তার একটা পরিমণ্ডল আছে, যেটা ইতিবাচকভাবে ছড়িয়ে পড়ে অর্থাৎ মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়। তার যে দিকটি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো মানুষকে তিনি সম্মান করেন। সেদিন প্রথমেই জানতে চাইলেন, ‘কী খাবেন?’ একটা কিছু হলেই চলবে বললাম। তিনি বললেন, ‘খাওয়া হলো স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপার, যেকোনো একটা কিছু হলে কীভাবে হবে?’ এরপর যোগ করলেন, ‘ভাত তো খাবেন, সঙ্গে কী রাখবো আর?’ তিনি ভেটকি মাছের পাতুরি অর্ডার দিলেন। খাওয়া তো মুখ্য নয়, আন্তরিকতাই আসল। যে সময়ে পৌঁছেছিলাম তখন লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছিলো। তিনি এটি খেয়াল রেখেছিলেন। মানুষ হিসেবে তিনি সত্যিই দারুণ।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশের পরিচালক হলেও নিজের প্রথম সিনেমা বানালেন টালিগঞ্জে, তার ওপর এতে অভিনয় ও প্রযোজনা করেছেন ওপার বাংলার সুপারস্টার জিৎ। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো না ব্যাপারটা?
সঞ্জয় সমদ্দার: স্বপ্নের চেয়েও বড় দিক হলো, এটা আমার জন্য সম্মানের। আমি খুব সৌভাগ্যবান যে, এমন একটি সুযোগ পেয়েছি এবং জিৎ দাদা আমাকে ডেকেছেন। এটি সত্যিই আনন্দের। নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে একটি পরিচ্ছন্ন ও ভালো সিনেমা নির্মাণের চেষ্টা করেছি। আমার ভাবনায় ছিলো– যদি ভালো কাজ করতে পারি তাহলে অন্য পরিচালকেরা অনুপ্রাণিত হবেন। আমার সমসাময়িক কিংবা পরে যারা নির্মাণে আসবেন তাদের মনে বিশ্বাস জন্মাবে যে, পরিচালকদের কোনো সীমান্ত থাকে না। তারা সুযোগ পেলে অন্যান্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজ করতে পারবেন।

‘মানুষ’ সিনেমার দৃশ্যে জিৎ ও অয়ন্যা (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘মানুষ’ গল্পটি মাথায় এলো কীভাবে, বাস্তবের কারো জীবনে কি এটি অনুপ্রাণিত?
সঞ্জয় সমদ্দার: করোনাকালে গল্পটি আমার মাথায় আসে। তখন আমরা একে অপরের সঙ্গে ফোনেই আলাপ করতাম বেশি। সেই সময় অনেকে দেখা হলেই বলতেন, এ যাত্রায় যদি কোনোভাবে বেঁচে যাই তাহলেই শুকরিয়া। তখন বুঝলাম, মানুষের জন্য বেঁচে থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জীবনে অনেক কিছু পেতে চাই, অনেক কিছু করতে চাই; কিন্তু কখনও কখনও মনে হয় জীবনটাই তো অনিশ্চিত! ফলে আমার মনে হলো, আমাদের জীবন দর্শন কিংবা আমরা যা যা ভাবি, সেসবের কোনো কিছুই মূলত আবশ্যকীয় নয়। পরিস্থিতির সঙ্গে সবই পাল্টে যায়। সেখান থেকেই মূলত ‘মানুষ’ গল্পটি মাথায় আসে। এতে বাবা-মেয়ের আবেগঘন কিছু মুহূর্ত আছে। এগুলোর শুটিং করতে গিয়ে আমার মেয়ে দিজুকে অনেক মিস করেছি। ওর বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। সিনেমাটির শিশুশিল্পী অয়ন্যাকে দেখলে আমার মেয়ের কথা মনে পড়তো।

‘মানুষ’ সিনেমার পোস্টারে জিৎ (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সিনেমাটির টাইটেল গান আপনারই লেখা। গল্প লেখার সময় কি এই ভাবনা ছিলো?
সঞ্জয় সমদ্দার: না। সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য তৈরি করে শুটিং শুরুর পর মনে হতে থাকে, সিনেমার মেজাজ তৈরির জন্য একটি গান দরকার। তখন গানটির ভাবনা মাথায় আসে। এটি সিনেমার মেজাজ তৈরির জন্য জুতসই লেগেছে। ‘আজকে যা ঠিক কালকে তা ভুল/মানুষ নিয়তির হাতের পুতুল’ লাইন দুটির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছি, আমরা হয়তো অনেকেই অনেক কিছু ভাবলেও নিয়তিকে কখনো এড়াতে পারি না।

বিদ্যা সিনহা মিম ও সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: যৌথ প্রযোজনা ছাড়া ভারতীয় সিনেমায় বাংলাদেশের পরিচালক ও অভিনেত্রী সচরাচর দেখা যায় না। ‘মানুষ’ সেদিক থেকে ব্যতিক্রম। সিনেমাটিতে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসিপি) মন্দিরা চরিত্রে বিদ্যা সিনহা মিমকে নির্বাচনের কথা বলুন।
সঞ্জয় সমদ্দার: যখন অভিনয়শিল্পী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো তখন জিৎ দাদা উল্লেখ করেন, দেশীয় পুলিশ অফিসারের মতো দেখতে এমন একজনকে লাগবে। তিনি বলেন, ‘মিমের উচ্চতা ভালো, তার সঙ্গে আমার কাজও হয়েছে আগে।’ তখনই মিমকে চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৮ সালে জিৎ দাদার প্রযোজনায় ‘সুলতান-দ্য সেভিয়ার’ সিনেমায় অভিনয় করেছে মিম। তাকে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে বললাম, গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র আছে, যদি তুমি অভিনয় করতে চাও। মিম বললো, ‘দাদা ঠিক আছে, তাছাড়া আপনার সঙ্গে তো আমার আগেও কাজ হয়েছে।’ আমার ‘মনের মানুষ’ নাটকে ছিলো মিম। মন্দিরা চরিত্রে তাকে বেশ মানিয়েছে। মিম থাকায় খুশি হয়ে গিয়েছিলাম এজন্য যে, আমার দেশের একজন অভিনয়শিল্পীকে পাচ্ছি। আমার দেশ থেকে আমি একাই গিয়েছিলাম। যেদিন মিমের সঙ্গে শুটিং করলাম মনে হলো, দেশের একটা মানুষ অন্তত আছে!’

‘মানুষ’ সিনেমার দৃশ্যে জিৎ ও সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: পশ্চিমবঙ্গের ১১৮টি সিনেমাহলে মুক্তি পেলো ‘মানুষ’। কেমন সাড়া পেলেন?
সঞ্জয় সমদ্দার: সিঙ্গেল স্ক্রিনের সিনেমাহল থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছি। বিভিন্ন সিনেমাহল ঘুরে দেখেছি, সংলাপের মাঝে মাঝে দর্শকেরা হাততালি দিচ্ছেন। সিনেমা উপভোগ শেষে পরিচালকের প্রশংসা করেছেন অনেকে। এটি একটি পারিবারিক সিনেমা, তাই পরিবারের সঙ্গে বসে বিভিন্ন বয়সী দর্শক উপভোগ করেছেন। ৬৫-৭০ বয়সী দম্পতিরাও সিনেমাহলে ‘মানুষ’ দেখেছেন। যেমনটা চেয়েছিলাম তেমনই হয়েছে।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশে এখন ভারতীয় সিনেমা মুক্তিতে বাধা নেই। তাছাড়া ‘মানুষ’ বাংলা সিনেমা। বাংলাদেশে কি এটি মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে?
সঞ্জয় সমদ্দার: ‘মানুষ’ বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা এখনো চলছে। যদি দেশে মুক্তি পায় তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না। সিনেমাটি দেখার পর দর্শকেরা ভালো-মন্দ দুটি কথা বলবেন, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। অপেক্ষায় আছি এখনো। তবে নিশ্চিতভাবে কিছু জানি না।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: নূর)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বেশকিছু টেলিভিশন নাটক পরিচালনা করেছেন আপনি। এরপর ওয়েব সিরিজ আর ওয়েব ফিল্ম বানিয়েছেন। এবার সিনেমা নির্মাণ করলেন। পরবর্তী লক্ষ্য কী?
সঞ্জয় সমদ্দার: নতুন অনেক কাজের কথাবার্তা চলছে। এখন সিনেমা আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই থাকতে চাই। সিনেমা অনেক বড় বিষয়। দুম করে বলে দিলাম আর হয়ে গেলো– বিষয়টি মোটেও তেমন না। তবে আগামী মাসের (ডিসেম্বর) মধ্যে নতুন কিছু একটার ঘোষণা দেওয়ার ইচ্ছে আছে। আমার পাণ্ডুলিপিগুলো প্রস্তুত আছে। সবসময় বিশ্বাস করি, কাজের মধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য একটা কাজ শেষ হওয়ার পর যতো দ্রুত সম্ভব আরেকটি কাজে যুক্ত হতে চাই।

আলাপচারিতা

ভক্তদের ভালোবাসার কথা ভাবলে নীরবে আমার চোখে জল চলে আসে: নাসিরউদ্দিন খান

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: ফেসবুক)

‘সিন্ডিকেট’ ও ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ ওয়েব সিরিজের সুবাদে অভিনেতা নাসিরউদ্দিন খানের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছে তার নতুন সিনেমা ‘প্রহেলিকা’। এতে ক্লাসিক্যাল সংগীতজ্ঞ জামশেদ চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত সিনেমাটি নিয়ে দারুণ সাড়া পাচ্ছেন তিনি। সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় ১০ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘প্রহেলিকা’য় আপনার চরিত্রের কারিশমা কী?
নাসিরউদ্দিন খান: কারিশমা কী ঠিক জানি না। এখানে আমার চরিত্রটি একটু আলাদা। সে একজন ক্লাসিক্যাল সংগীতজ্ঞ। বাকিটা দর্শকরা সিনেমাহলেই দেখছেন।

‘প্রহেলিকা’ সিনেমায় নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: রঙ্গন মিউজিক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘প্রহেলিকা’য় মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন হলো?
নাসিরউদ্দিন খান: সত্যি বলতে, তার সঙ্গে কাজ করে আমি আপ্লুত। তিনি আমাদের দেশের অনেক পুরনো এবং খুবই ভালো অভিনেতা। আমরা তাকে নানামাত্রিক চরিত্রে দেখেছি। ‘প্রহেলিকা’র শুটিংয়ে যাওয়ার আগেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। শুটিং শুরুর আগে প্রায় ৮-১০ বার আমাদের দেখা হয়েছে। আমরা রিহার্সেল করেছি, কথাবার্তা বলেছি, একজন আরেকজনকে জেনেছি। তখন বুঝলাম লোকটা অদ্ভুত! দূর থেকে অন্যরকম মনে হলেও পরে মিশতে গিয়ে দেখি মাহফুজ ভাই একজন অসাধারণ মানুষ। তিনি অন্যদের অনেক সম্মান দেন। তিনি যেহেতু একজন পরিচালকও, তার কাছ থেকে অনেক টিপস পেয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, তার কাছ থেকে সম্মান পেয়েছি। এজন্য মাহফুজ ভাইয়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘প্রহেলিকা’য় চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন আপনি। নিখাদ রোমান্টিক সিনেমায় কাজের প্রস্তাব পেলে নায়িকা হিসেবে কাকে চাইবেন?
নাসিরউদ্দিন খান: এটি স্ক্রিপ্টের ওপর নির্ভর করবে। স্ক্রিপ্টে আমার বয়স ৬০ বছর থাকলে সহশিল্পী দরকার হবে একরকম। আর আমার বয়স ৪০ বছর হলে স্বাভাবিকভাবেই আরেক বয়সের নায়িকা লাগবে। নির্দিষ্ট কোনো নায়িকা কিংবা অভিনেত্রী নয়, অবশ্যই স্ক্রিপ্টের প্রয়োজন অনুযায়ী একজন হলেই চলবে।

‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ ওয়েব সিরিজে নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনার ক্যারিয়ার অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে বলে মনে করেন?
নাসিরউদ্দিন খান: কখনোই এমন মনে হয় না আমার। কারণ সব ফলেরই পাঁকার একটা সময় থাকে। আমার ফল হয়তো তখন পেঁকেছে কিংবা পর্দার সামনে কাজ করার সময় হয়েছে।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: চাকরি করেও অভিনয় চালিয়ে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা কোথায়?
নাসিরউদ্দিন খান: একজন মানুষ একসঙ্গে ছয়-সাতটি কাজও করতে পারে। তবে কিন্তু আমি পারি না। আমাকে দিয়ে একসঙ্গে অনেক কাজ হয় না। আমার জন্য বিষয়টি মূলত জটিল।

নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে কি সিনেমা হলের বিকল্প মনে করেন?
নাসিরউদ্দিন খান: কোনো কিছুই কোনো কিছুর বিকল্প নয়। বাংলাদেশে টেলিভিশন আসার পর মঞ্চ কিংবা যাত্রায় কাজ করা অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছিলো, টেলিভিশন কি মঞ্চের বিকল্প হতে যাচ্ছে? উত্তর ছিলো, না। কারণ মঞ্চ আলাদা একটি বিষয়। একইভাবে সিনেমা আলাদা একটি বিষয়। সিনেমাহলে অনেক মানুষ একসঙ্গে সিনেমা দেখে। অন্যদিকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একা কন্টেন্ট দেখি। সুতরাং কোনোটা কোনোটার বিকল্প নয়।

নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আগামী দিনে সিনেমা কিংবা ওটিটিতে কী কী পরিবর্তন দেখতে চান?
নাসিরউদ্দিন খান: পরিবর্তন তো শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। দুই-তিন বছর ধরে যেমন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, সেটি অব্যাহত থাকলেই আমি খুশি। সিনেমা কিংবা ওটিটি দুই মাধ্যমেই এখন কন্টেন্ট নির্ভর কাজ হচ্ছে। যাচাই-বাচাই করে এবং অডিশন নিয়ে অভিনয়শিল্পী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। মেক-আপ, কস্টিউম, লাইট, ক্যামেরাসহ প্রতিটি শাখায় পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। সবাই খুব সিরিয়াসলি কাজ করছেন।

‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ ওয়েব সিরিজে নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ভাইরাল ব্যাপারটাকে কিভাবে দেখেন?
নাসিরউদ্দিন খান: কোনোভাবেই দেখি না। ভাইরাল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভাইরাল অনেক কারণে হয়। গরু আছাড় খেয়ে পড়ে গেলে সেটাও ভাইরাল হয়। সুতরাং ভাইরাল হওয়াটা মূল বিষয় নয়। কন্টেন্ট কেমন সেটাই আসল কথা।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘তৈ তৈ তৈ আমার বৈয়ম পাখি কই’ গানটা নিয়ে যখন কাজ করছিলেন তখন কি ভেবেছেন এটি এতোটা সাড়া পাবে?
নাসিরউদ্দিন খান: সত্যি বলতে, কিছুটা আশা ছিলো। অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে সাধারণত ভাবি কতোটা ভালো হলো কিংবা কতোটা সাড়া পাবে। আগে থেকে ভাবি না কাজটি অনেক মানুষের ভালো লাগবে। কিন্তু এই গানটির বেলায় আমরা কেন জানি আশাবাদী ছিলাম। এর কথা, সুরসহ সব মিলিয়ে আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কাজ করেছে যে, দর্শক-শ্রোতারা এটি পছন্দ করবে। এটি লিখেছে সন্ধি ও ম্যাক্স রহমান, সুর সন্ধির। গানটি আমাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। ‘বৈয়াম পাখি’ বাচ্চাদেরও গাইতে দেখেছি, এতোটা আশা করিনি।

নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনার ভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
নাসিরউদ্দিন খান: যারা আমার কাজ পছন্দ করেন, ভক্ত বলতে তাদেরই বুঝি। তাদের কথা বলে সত্যি শেষ করা যাবে না। একসময় থিয়েটার করেছি। এরপর চাকরি করতাম। পেশা বদলে পর্দার সামনে কাজ করতে এসেছি। এরপর থেকে ভক্ত-দর্শকদের কাছ থেকে যতোটা ভালোবাসা পেয়েছি সেটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। এটা ভাবলে নীরবে একান্তে আমার চোখে জল চলে আসে। খুব ভালোও লাগে। ভক্তদের কথা ভাবতে খুব ভালো লাগে। তাদের জন্য আমার দায়বদ্ধতা অনেক বেড়ে যায়। তাই কাজের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হই। শুধু আমার ভক্ত না, সবার ভখ্তদের জন্য শুভকামনা রইলো আমার। সবাই সবসময় ভালো থাকবেন, শরীরের যত্ন নেবেন, মনের যত্ন নেবেন। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।

পড়া চালিয়ে যান

আলাপচারিতা

আমার ক্যারিয়ার কিন্তু একদিনে হয় নাই, অনেক সংগ্রাম করেছি: আফরান নিশো

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমায় আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোর অভিষেক হতে যাচ্ছে বড় পর্দায়। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তি পাবে ঈদুল আজহায়। এর ফার্স্ট লুক, অফিসিয়াল পূর্বাভাস ও আইটেম গান প্রকাশের পর দারুণ সাড়া পাচ্ছেন তিনি। আলফা-আই স্টুডিওস ও চরকির প্রযোজনায় এতে মাসুদ চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। প্রথমবার রুপালি পর্দায় কাজ করা উপলক্ষে সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় ১০ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হচ্ছে শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’কে। ফলে আসন্ন ঈদুল আজহায় সিনেমাহলে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
আফরান নিশো: আমার মনে হয়, সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকলে ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য ভালো। এতে ইন্ড্রাস্ট্রির উন্নতি হবে। আমি মনে করি, প্রতিযোগিতা সবসময় ছিলো। কারণ প্রতিযোগিতা না থাকলে আমি চ্যালেঞ্জ অনুভব করি না। নাটকে কাজ করার সময়ও অন্যদের সঙ্গে আমাকে নিয়ে আলোচনা সবসময়ই ছিলো। সেটা ভিউ, ভালো কাজ কিংবা ভক্তদের ক্ষেত্রে হোক। আর ভক্তদের মধ্যে উন্মাদনা থাকবেই, কারণ তারা অনেক আবেগী। আমার কাছে মনে হয়, ভক্তদের দায়িত্বশীল থাকতে হয়। কারণ তারা আমার প্রতিনিধিত্ব করে। আমার ভক্তদের প্রতি সেই দায়িত্ববোধের জায়গাটা ধরে রাখার অনুরোধ জানাই।

আমার ক্যারিয়ারটা দীর্ঘদিনের হলেও জানি আমি সবসময় থাকবো না। এটাই নিয়ম। এর ফলে একজনের পর আরেকজন আসে। তাই আমার ক্ষুধা অভিনয়ে। আমি অভিনয় করে যাবো। একটু ভিন্নধর্মী চরিত্র পেলে আমার জন্য বরং সহজ হয়। আমার মতে, একজন অভিনয়শিল্পীকে সব ধরনের চরিত্রে কাজ করা উচিত। দর্শকদের চিন্তাধারা বদলেছে, তারা সব ধরনের কাজ গ্রহণ করছেন। এজন্য চরিত্রনির্ভর অভিনয়শিল্পীরা উঠে এসেছেন।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র পূর্বাভাস প্রকাশের পর আপনার অনেক সহকর্মী এটি শেয়ার দিয়ে শুভকামনা জানিয়েছেন। এসব দেখে কেমন লেগেছে?
আফরান নিশো: এটা আমার কাছে বিস্ময়কর ঘটনা এবং অবাক করার মতো। আমরা যারা একই অঙ্গনে কাজ করি, তাদের সবারই ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকে। কোনও কিছু ভালো লেগে গেলে হয়তো আমরা স্বেচ্ছায় বরণ করি। এছাড়া দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করলে আলাদা দায়িত্ববোধ তৈরি হয়। কোনও সহকর্মী যদি নতুন কিছুতে পদার্পণ করে তখন একটা দায়িত্ববোধের ব্যাপার চলে আসে। এতো বছর ছোট পর্দায় কাজ করার পর বড় পর্দায় আসছি বলে অনেকে হয়তো দায়িত্ব ভেবে শুভকামনা জানিয়েছে। বিয়ের সময়ও আমরা এভাবে শুভকামনা জানিয়ে থাকি।

ব্যক্তিজীবনে আমি আবেগপ্রবণ মানুষ। অপরিচিতদের সামনে আমি চাপা স্বভাবের। কিন্তু বন্ধুমহলে ও কাছের মানুষদের কাছে খুবই প্রাণখোলা। আমি সবাইকে মন থেকে ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাচ্ছি। মনে হচ্ছে, আমরা যারা একই অঙ্গনে কাজ করি, তাদের মধ্যে ভালোবাসা ফুরিয়ে যায়নি। আমরা একে অপরের প্রতি যে দায়িত্ববোধের কথা বলি, সেটি হয়তো ফুরিয়ে যায়নি। একইসঙ্গে নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়! মাঝে মধ্যে ভাবি, আমি কি অন্যদের মতো উদার কিংবা তাদের মতো দায়িত্বজ্ঞান আমার আছে কিনা। কোনো কিছুতে অন্যের পদচারণা যদি ভালো লেগে যায়, তাহলে উৎসাহ দিলে অনুপ্রাণিত হতে পারে। সেটা যে কারো ক্ষেত্রেই। আমার প্রতি অন্যদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে আমার ভালোবাসাও জাগ্রত হচ্ছে।

আফরান নিশো (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষ্ক্রিয় বলা চলে! আপনার প্রতি অন্যদের ভালো লাগা দেখে ফেসবুকে সক্রিয় হওয়ার কথা ভাববেন?
আফরান নিশো: সোশ্যাল মিডিয়া এখন এমন হয়ে গেছে যে, মানুষ অনেক জাজমেন্টাল। ধরুন একটি কবিতা লিখলাম, সেটি যদি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা হয় তাহলে মানুষ ভাববে নিশো প্রেমে ব্যর্থ! এটি যে অন্যের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে আমার ভাবনায় আসতে পারে, সেটি না বুঝে সবাই মনে করবে এটাই আমার জীবন।  হয়তো আমার এমনিতেই একটি স্ট্যাটাস দিতে ইচ্ছে হলো, সেটি আমার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত না হলেও মানুষ সেটাই ধরে নেবে। আমার বাবা, মা কিংবা ভাইয়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে লিখলেও ধারণা সেই একই হবে। এসব কারণে লিখতে একটু ভয় পাই।

তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় সবসময় কোনো কাজ ছাড়াই একের পর এক রিল দেখতে থাকা আমার কাছে রোগের মতো মনে হয়। এখনকার মানুষের এটি বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমার চিন্তা হয়, আমিও যদি এতে আসক্ত হয়ে যাই তাহলে নিজের মতো বেঁচে থাকা ও ভাবনার আনন্দ ব্যাহত হবে। যদিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা দরকার। এটিও এক ধরনের স্মার্টনেস। আমার মনে হয়, কোনো সমস্যা কিংবা ঘটনা নিয়ে মতামত জ্ঞাপন করা শিল্পীসত্তার দায়িত্ব। অনেক সময় ভাবি– চুপ করে থাকবো কেনো, বরং কিছু কথা বলি। এখন বুঝতে পারছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার একটু সক্রিয় থাকা দরকার।

আফরান নিশো (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
আফরান নিশো: আমরা অনেক বড় একটি টিম অনেক দিন ভেবে ও খেটে একটি বিন্দুতে আসতে পেরেছি। সেজন্য এই সিনেমা করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের সবার ডেডিকেশন, সময় ও অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে এতে। কেউ যদি কোনো কাজে কষ্ট করে, পর্দায় সেই প্রতিফলন পাওয়া যায়। এটা বলে বোঝাতে হয় না। আমাদের কষ্ট যদি স্ক্রিনে ফুটে ওঠে তাহলেই পুরো ইউনিট সার্থক।

আমরা যদি সব মিলিয়ে এই সিনেমায় ১০০ জন কাজ করে থাকি, প্রত্যেকের ভাবনা ছিলো একই। আমরা এতো মানুষ মিলে একবিন্দুতে এসে একটা গল্প বলার চেষ্টা করেছি। সেই গল্প দেখে মানুষ নিজেদের সংযোগ ঘটাতে পারলে, তাদের জীবনের সঙ্গে এটি মিলে গেলে কিংবা তাদের ভাবালে আমরা সফল হবো। সিনেমাটির প্রত্যেক চরিত্রই এমন যে, দর্শকরা মনোযোগ দিয়ে সিনেমাটি দেখলে নিজেদের সঙ্গে মেলাতে পারবেন। অভিজাত শ্রেণি থেকে নিম্নবিত্তসহ সবশ্রেণির দর্শকের জীবনের সঙ্গে মিলে যাবে গল্পটা। কারণ এখানে অনেক স্তর আছে।

‘সুড়ঙ্গ’র দৃশ্যে আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: মাসুদ কেন সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে?
আফরান নিশো: সুড়ঙ্গটা কিন্তু রূপক। আমরা ফার্স্ট লুক ও পূর্বাভাসে দেখেছি মাটি খোঁড়া হচ্ছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো– মাসুদ কেন সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে, কোথায় খুঁড়ছে? এর আগে কি কেউ ওর মনের মধ্যে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ফেলেছে নাকি সুড়ঙ্গটা খোঁড়াই ছিলো আর মাসুদ সেটাতে নামে, এমন অনেক প্রশ্ন কিন্তু থাকছে। এমনও তো হতে পারে, মাসুদ বিপদে পড়েনি কিন্তু তার বন্ধু বিপদে ফেলে দিয়েছে। তাহলে সুড়ঙ্গটা কে করলো? মাসুদের বন্ধু? আক্ষরিক অর্থে শুধুই খোঁড়াখুঁড়ি নয় এই গল্প। এর ভেতরে অন্য একটি সুড়ঙ্গ আছে।

‘সুড়ঙ্গ’র ফার্স্ট লুক টিজারে আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র ভেতরে শুটিং নিশ্চয়ই চ্যালেঞ্জিং ছিলো?
আফরান নিশো: আগে থেকে জানতাম– আমাকে এমন একটি জায়গায় কাজ করতে হবে, যেখানে চাইলেই দাঁড়ানো যাবে না এবং নড়াচড়া করা আমার জন্য এতো সহজ হবে না। শুধু আমার বেলায় নয়, কারিগরি কাজে সম্পৃক্ত সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। যখন ঝড় আসে আমরা আগে থেকে জানতে পারি বলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি। যেমন করোনার শুরুর সময় লকডাউনের জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। ধীরে ধীরে আমরা মেনে নিতে পেরেছি, এজন্য পরে সমস্যাটা কম হয়েছে। আমরা কোনো ব্যাপারে মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জ নিলে অর্ধেক কাজ সহজ হয়ে যায়।

‘সুড়ঙ্গ’ একটা দীর্ঘ সময়ের কাজ। তাই আমাদের কী কী সমস্যা হতে পারে সেসব আমরা আগেই আলোচনা করেছি। শ্বাসকষ্ট হলে ব্যাকআপ লাইন কী, অক্সিজেনের জোগান নির্বিঘ্ন থাকবে কিনা, প্রাকৃতিক বাতাসের সম্ভাবনা আছে কিনা ইত্যাদি নিয়ে আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি ছিলো। আমরা জানতাম, শ্বাসকষ্টের মতো যেকোনো বিপর্যয় ঘটতে পারে। শুটিংয়ে গিয়ে দেখলাম– আমি না হয় অভিনেতা হিসেবে কাজ করছি, কিন্তু ইউনিটের লোকজন আরো বেশি কষ্ট করছে। সেই বিষয়টি আমাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরো সাহস জুগিয়েছে। তখন ভাবতাম আমার চেয়েও বেশি কষ্ট করছে অন্যরা। তবে একদিনে তিনটি দৃশ্যধারণের পরিকল্পনা থাকলেও ৫-১০ মিনিট পরপর সবাই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলো আর ‘সুড়ঙ্গ’টা বেশ বড় ছিলো। ফলে সময় বেশি যাওয়ায় একদিনে দুটির বেশি দৃশ্যের কাজ করতে পারিনি।

একটা বিষয় ঠিক করেছিলাম যে, আমার সমস্যা হলেও আওয়াজ খুব একটা দেবো না। কারণ আওয়াজ ছোট থাকলে সমস্যা ছড়ায় কম। আমার সমস্যা হলেও ইউনিটকে খুব একটা বুঝতে দিতাম না। তারাও একই মানসিকতা ধরে রেখে নিজেরা কিছু বলতো না। ‘সুড়ঙ্গ’তে কাজ করা আমার জন্য নতুন একটা অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে ভালো আর আমি ধন্য যে, এমন একট ইউনিট পেয়েছি।

‘সুড়ঙ্গ’র দৃশ্যে আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র শুটিংয়ের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা কোনটি?
আফরান নিশো: মনে রাখার মতো ঘটনা প্রতি পদে পদেই ঘটেছে। প্রথম ধাপের শুটিংয়ের একটা ব্যাপার বলি। আমরা তখন সুনামগঞ্জের নীলাদ্রি লেক এলাকায়। সেকানে থাকা-খাওয়ার খুবই কষ্ট। সহজে হোটেল পাওয়া যায় না। তাই আমরা যেভাবে কাজ করে অভ্যস্ত সেরকম পরিস্থিতি ছিলো না। আমি যেরকম ভেবেছিলাম– প্রতিদিন সবাই শুটিং শেষে রাতে আলোচনা করবো, আবার সকালে উঠে সবাই সবার চেহারা দেখবো। কিন্তু একেকজন একেক জায়গায় থাকায় সেসব হয়নি। শুটিংয়ের পর একটু আলোচনা সেরেই যে যার ঘরে চলে যেতাম। কারণ একটা রুম থেকে আরেকটি রুমের দূরত্ব ছিলো অনেক। ইউনিটের লোকজন, পরিচালক, অভিনেত্রী, অন্য অভিনয়শিল্পী, কারিগরি কাজে সম্পৃক্তসহ সবাইকে একেক জায়গায় থাকতে হয়েছে। তবে থাকার ব্যাপারে বেশ কষ্ট হলেও সবাই মুখ বন্ধ করে কাজটা করেছে। এমন সহযোগিতাপ্রবণ মনোভাব আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের কাছ থেকে সহায়তা করার মানসিকতা শিখেছি। আমার মনে হয়েছে, সবাই কষ্ট করার জন্য এক হতে পারার কোনো না কোনো কারণ আছে। নীলাদ্রিতে আমরা প্রায় ৪০ দিনের মতো শুটিং করেছি। হোটেল ভালোভাবে পেলে ২০-২২ দিনে কাজ শেষ হতো।

‘কলিজা আর জান’ গানের দৃশ্যে আফরান নিশো ও নুসরাত ফারিয়া (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘কলিজা আর জান’ গানে নাচের অভিজ্ঞতা কেমন হলো শুনি।
আফরান নিশো: গানটির কোরিওগ্রাফি করেছেন কলকাতার বাবা যাদব। তিনি নাচের মুদ্রা দেখানোর পর পর্যবেক্ষণ করেছেন আমি কীসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি কিংবা আমাকে দিয়ে কেমন নাচ হবে। এমন কোনো কঠিন মুদ্রা তিনি সাজাতে চাননি যেটি আমার জন্য কঠিন হবে কিংবা আমি মানিয়ে নিতে পারছি না। আমি নাচের ব্যাপারে অনেকটাই কাঁচা। তবুও আমি নেচেছি আর তিনি বলছিলেন, ‘হয়ে গেছে। শুধু স্পৃহার মাত্রা বাড়ালেই চলবে।’ গানটিতে আমার এতো বেশি নাচ নেই। নুসরাত ফারিয়ার নাচই বেশি। আমাকে তিনি শুধু বলেছেন, চরিত্রের মধ্যে থাকলেই চলবে।

নাচ-গানে ভরপুর বিষয়টা আমি তেমন পছন্দ করি না। আমার নাটকের ক্ষেত্রেও একটু বাস্তবিক ব্যাপার চাই বরাবরই, জানি না হয় কিনা। কিন্তু আমি চাই যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত অভিনয় করা যায়। সিনেমার ক্ষেত্রেও আমি মনে করি, যখন যে বিষয় প্রয়োজন তখনই সেটি থাকা উচিত। ‘সুড়ঙ্গ’ গল্পে আমার চরিত্রের নাম মাসুদ। শুটিংয়ে আমরা বলাবলি করতাম, মাসুদ তুমি ভালো হয়ে যাও! মাসুদ যখন স্বাভাবিক থাকে না কিংবা মদ্যপ হয়ে যায়, তখন বন্ধু তাকে আরাম-আয়েশের জন্য একটা জায়গায় নিয়ে যায়। গানটির কথায় বোঝানো হয়েছে, টাকাই মুখ্য। নারীর চেয়েও টাকার প্রতি মাসুদের নেশা বেশি। সেক্ষেত্রে আমি এটিকে আইটেম গান বলবো না! এটি গল্পের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে যৌক্তিক কারণেই জায়গা পেয়েছে।

‘সুড়ঙ্গ’তে আফরান নিশো ও তমা মির্জা (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ময়নাকে নিয়ে কিছু বলেন।
আফরান নিশো: ময়না হলো মাসুদের বউ। ময়নাকে নিয়ে বললে স্পয়লার হয়ে যাবে। বরং তমা মির্জাকে নিয়েই বলি। আমার মনে হয়নি তার বিপরীতে প্রথমবার কাজ করছি। সে হয়তো খুব বিনয়ী ও নম্র। তমা খুব ভালোভাবে পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে নিতে পারে।

চিত্রনায়িকারা কেমন হয় আমি জানি না, কারণ আগে কখনো বড় পর্দার নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করিনি। ছোট পর্দায় মেহজাবীন চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও তানজিন তিশার ডেডিকেশন আমার দেখা। সেদিক থেকে তমাকে আলাদা লাগেনি। আমার কাছে তাকে কাছের মানুষ মনে হয়েছে। সে অনেক মিশুক। একইসঙ্গে তার মধ্যে অভিনয়ের ক্ষুধা আছে।

সেজন্য অনেক সময় নিজের দৃশ্য না থাকলেও সে বসে দেখতো, পর্যবেক্ষণ করতো। একজন নায়িকার ক্ষেত্রে এগুলো অনেক ইতিবাচক বিষয়। তারকাসুলভ ব্যাপার তার মধ্যে দেখিনি। সে ভালো মানুষ এবং কাজের প্রতি অনেক ডেডিকেটেড। একবার না হলে বারবার দেওয়ার যে প্রবণতা তার মধ্যে দেখেছি, তাতে তার প্রতি আমার সম্মান ও আস্থা বেড়েছে। আমার কাছে মনে হয়, এমন সহশিল্পী সবার কাছে কাঙ্ক্ষিত।

(বাঁ থেকে) তমা মির্জা, শাহরিয়ার শাকিল, আফরান নিশো ও রায়হান রাফী (ছবি: কানন ফিল্মস)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: রায়হান রাফীর পরিচালনায় প্রথমবার কাজ করলেন। তার সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কী ভেবে?
আফরান নিশো: আমার কাজ হলো পারফরম্যান্স দিয়ে পরিচালককে খুশি করা। ছোট হোক বড় হোক, প্রত্যেক পরিচালককে তার মর্যাদা দেই। রাফী যখন শর্টফিল্ম বানাতো তখন থেকে তার কাজ আমার ভালো লাগে। সে অনেক তরুণ, প্রাণচঞ্চল ও আত্মবিশ্বাসী। রাফির আগের শর্টফিল্মগুলো দেখার সময় থেকে তার ব্যাপারে জানতাম। সে কোরআনে হাফেজ। একজন কোরআনে হাফেজ এভাবে কন্টেন্ট বানাচ্ছে দেখে অবাক হতাম। প্রত্যেকেরই নিজস্ব দর্শন থাকে। আমি মনে করি– যেকোনো মানুষ নিজের মধ্যে একজন শিল্পীকে খুঁজে পেতে পারে, নিজেকে শিল্পী দাবি করতে পারে।

রাফীর সঙ্গে আমার অনেকবার আলোচনা হয়েছে। এর আগেও একটি সিনেমায় কাজ করার কথা ছিলো আমাদের। কিন্তু সেটি পরে হয়নি। এরপর ‘সুড়ঙ্গ’র গল্পটা এলো। রাফী অনেক আগেই আমাকে বলে রেখেছে, এই কাজটি আমাকে নিয়ে করবে। একদিন হঠাৎ সে জানায়, এবার ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমাটি বানাবে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করি, গল্পটিতে সিনেমার সম্ভাবনা আছে কিনা। সে বললো– শতভাগ আছে। কোনো কিছুতে অপূর্ণতা থাকলে নতুন কিছু সংযোজন করা হবে। সে এই সিনেমা বড় পরিসরে করতে চেয়েছে, কারণ এটা ওর স্বপ্নের মতো। পরবর্তী সময়ে আমরা অনেকবার বসে গল্প, বাজেট, কারিগরি টিমসহ সব বিষয়ে আলোচনা করি। তখন থেকে সিনেমাটিতে বড় কিছু দেখতে পেয়েছি।

রাফী নিজে বলার পাশাপাশি অভিনয়শিল্পীদের মতামত শোনে, এটা তার অনেক ভালো একটি দিক। অনেক সময় আমার ভাবনা শেয়ার করতাম। সবার কথা শুনে দিন শেষে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হয়েছে, কারণ সে সিনেমাটির ক্যাপ্টেন। রাফী পরিশ্রমী ছেলে। সে দিনে দিনে পরিণত হয়েছে। আমার ক্যারিয়ারও কিন্তু একদিনে হয় নাই, আমিও অনেক সংগ্রাম করেছি।

‘সুড়ঙ্গ’তে আমার অনেক কিছুই প্রথম। রাফীর পরিচালনায় এটি আমার প্রথম কাজ। তমা মির্জার বিপরীতে প্রথমবার কাজ করেছি। চিত্রগ্রাহক সুমন সরকারের সঙ্গে যদিও আমার পরিচয় অনেক আগে, কিন্তু সে আর আমি প্রথমবার কাজ করেছি একই সিনেমায়। আলফা-আই স্টুডিওসের প্রযোজনায় আমার প্রথম কাজ এটি।

পড়া চালিয়ে যান

আলাপচারিতা

শোবিজে সততার বড় অভাব, আমরা লেনদেন ঠিক রাখি না: সিমিত রায় অন্তর

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

সিমিত রায় অন্তর (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমা নির্মাণের পোস্ট-প্রোডাকশন প্রক্রিয়ার সৃজনশীল ও ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর অংশ হলো সম্পাদনা। এটি একটি শিল্প। সম্পাদকের দক্ষতায় সিনেমা কিংবা ফিকশন প্রাণ পায়। দেশে ইদানীং ভিডিও সম্পাদনা করে আলোচিতদের মধ্যে অন্যতম সিমিত রায় অন্তর। ভিডিও সম্পাদনায় ক্যারিয়ার গড়া এবং এই পেশার শিল্পীদের কাজের পরিধি ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় কথা বলেছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনি সিনেমার রিভিউ লিখতেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রুপও ছিল। সিনেমা সম্পাদনায় ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবলেন কীভাবে?
সিমিত রায় অন্তর: সিনেমার রিভিউ লিখতাম কিনা জানি না! যেকোনো সিনেমা দেখার পর আমার ভাবনায় ভালো-মন্দ যা যা আসতো, সেসবই লিখতাম। রিভিউ লেখার জন্য প্রয়োজনীয় গুণ কিংবা যোগ্যতা আমার আছে বলে মনে করি না।

সত্যি বলতে, আমি হতে চেয়েছিলাম অভিনেতা। কিন্তু হয়ে গেলাম পরিচালক। টিভি নাটক পরিচালনা করতে গিয়ে দেখলাম– অনেক প্রতিবন্ধকতা, বাধা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়। যেগুলো আমাকে দিয়ে হচ্ছিলো না। তাই চারটি নাটক বানানোর পর মনে হলো– আমি বোধহয় এখানে টিকে থাকতে পারবো না।

সম্পাদনায় আসা অনেকটা পেটের টানে। আগে শুধু নিজের কাজগুলো সম্পাদনা করতাম। বাইরের যারা আমার প্রিয়, তাদের অনুরোধে শুধু অন্য কাজ করতাম। কিন্তু একসময় যখন সব পথ বন্ধ হয়ে গেলো, তখন দেখলাম– সম্পাদনা করেই আমাকে পেট চালাতে হচ্ছে। সেখান থেকেই আজ এ পর্যন্ত আসা।

সিমিত রায় অন্তর (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনি নাটক-টেলিফিল্ম লিখেছেন, পরিচালনাও করেছেন। সম্পাদনায় থিতু হওয়ার কারণ তাহলে অর্থনৈতিক?
সিমিত রায় অন্তর: হ্যাঁ, সম্পাদনায় নিয়মিত হওয়ার কারণ মূলত অর্থনৈতিক। তবে এখন সম্পাদনার কাজ উপভোগ করছি। প্রথমে চাইতাম না সম্পাদক হিসেবে আমার পরিচিতি হোক। তবে এখন উপভোগ করি ব্যাপারটা। আগামীতে আবার পরিচালনা করার ইচ্ছে আছে। এমন একটা ক্ষুধা থাকতেই পারে। আমারও আছে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সময় বের করতে পারছি না। ইচ্ছে আছে– প্রতি বছর একটি করে বড় পরিসরের কাজে সম্পৃক্ত হওয়া, যাতে আমার মধ্যে থাকা পরিচালনার ক্ষুধাটা মেটে।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সম্পাদকরা পরিচালক হলে বাড়তি কোনো সুবিধা যোগ হয়?
সিমিত রায় অন্তর: সম্পাদনা যারা করেন তারা পরিচালনায় এলে অবশ্যই ভালো। কারণ তিনি ভালোভাবেই জানেন– কোন শট কাজের আর কোনটি লাগবে না৷ সম্পাদনার ব্যাপারে কারো যদি সামান্য জ্ঞানও না থাকে তাহলে দেখা যায়– অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য ধারণ করে এডিটিং প্যানেলে পাঠানো হয়, যেগুলো লাগবেই না। আর যেসব দৃশ্য গুরুত্বপূর্ণ সেসবের শুটিংই করা হয় না! তখনই মূলত বিপত্তি বাঁধে। সম্পাদনা জানলে বোঝা যায় কতোটুকু কী লাগবে। তখন আর প্রয়োজনের বাইরে দৃশ্যধারণ করতে গিয়ে সময় নষ্ট হয় না।

সিমিত রায় অন্তর (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: যিনি সম্পাদনা করেন তাকে রঙ বিন্যাসের দায়িত্ব দিলে কি ভালো? নাকি খরচ বাঁচাতে সম্পাদনা যিনি করেন তাকেই রঙের কাজ করতে দেওয়া হয়?
সিমিত রায় অন্তর: ভিডিও সম্পাদককে যদি রঙ বিন্যাসের দায়িত্বও দেওয়া হয় তাহলে ফিকশন মোটেও ভালো হয় না। শুধু কিছু টাকা বাঁচাতেই এমন করা হয় কিংবা ঝামেলা এড়াতে একসঙ্গে সম্পাদনা ও রঙ বিন্যাসের প্যাকেজ দেওয়া হয়। দুটোর সঙ্গে ভালো-মন্দের কোনো সম্পর্ক নেই।

পরিপূর্ণ একটি প্রোডাকশন তৈরির জন্য যেসব বিষয় প্রয়োজন এবং সেজন্য যত বাজেট লাগে সেগুলো এখনো আমরা ঠিক করতে পারিনি। কম খরচের মধ্যে কিভাবে সবকিছু করা যায়, সবাই মূলত সেটাই ভাবে। আর রঙের ব্যাপারটা এখনো আমরা খুব ভালো বুঝতে পেরেছি বলে আমার মনে হয় না।

এমন অনেকে আছেন, শুটিং করে এনে নির্দিষ্ট রঙ দিতে বলেন। কিন্তু কালার তৈরি করতে হয় শুটিং সেটে। সেখানকার কস্টিউম, লাইট ও সেট ঠিক করে দেয় কোন রঙ মানানসই হবে। এডিটিং প্যানেলে এসে সেভাবে রঙ হয় না। এগুলো আমাদের আরো শিখতে হবে, জানতে হবে। এজন্য হয়তো আরো সময় লাগবে।

সিমিত রায় অন্তর (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সিনেমা সম্পাদনা করে সচ্ছল জীবনযাপন করার পরিস্থিতি কি তৈরি হয়েছে আমাদের শোবিজে?
সিমিত রায় অন্তর: না, হয়নি। কারণ শোবিজে সততার বড় অভাব। প্রায় সবার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। কারণ আমরা লেনদেন ঠিক রাখি না। আমি শোবিজে অল্প কিছু কাজ করেছি। তারপরও বাজারে আমার ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা বাকি পড়ে আছে। পাওনার জন্য আমাকে বারবার ফোন ও মেসেজ দিতে হয়। না পেরে তাদের সঙ্গে মেজাজ খারাপ করি। এ কারণে সম্পর্ক নষ্ট হয়। তখন খুব খারাপ লাগে।

আমাদের ছোট্ট শোবিজ অঙ্গনে অল্প কিছু মানুষ কাজ করি, আমাদের কেনো এমন অবস্থা হবে? আমাদের আরও উন্নত হওয়া উচিত। পেশাদারি হওয়া প্রয়োজন সবার। সম্পাদনায় এখন যারা কাজ করছেন তাদের অনেকে শখের বশে করছেন বলে হয়তো তেমনভাবে কিছু বলছেন না। কিন্তু এভাবে চললে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়বে।

সিমিত রায় অন্তর (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: এখন পর্যন্ত কয়টি সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এবং ফিকশন সম্পাদনা করেছেন?
সিমিত রায় অন্তর: পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার মধ্যে রায়হান রাফীর ‘‌পরাণ’, ‘‌দামাল’, ‘‌নূর’ ও ‘‌সুড়ঙ্গ’ সম্পাদনা করেছি। ওটিটিতে মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ এবং ‘‌টান’ ও ‘‌খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’সহ রায়হান রাফীর যতো কাজ আছে সবক’টির সম্পাদনা আমার করা। আগে নাটক সম্পাদনা করতাম। এছাড়া বেশকিছু ফিকশনের কাজ করেছি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সম্পাদনায় কারা আপনার আইডল?
সিমিত রায় অন্তর: সম্পাদনায় আমার কোনো আইডল নেই। সেভাবে কাউকে চিনিও না। আমি নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছি। অনেকে আছেন যারা সমিতিতে সময় দেন। সেসব সংগঠনে আমাকে যুক্ত করানো হয়। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। তবে কোনো কাজ আমার ভালো লাগলে টাইটেলে খুঁজে দেখি কাজটি কে করেছেন। যদিও পরে আর সেটা মনে থাকে না।

পড়া চালিয়ে যান

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ