Connect with us

নাটক

ট্রেন্ডিংয়ে ২ নম্বরে ‘ক্ষতিপূরণ’, যে ইউটিউব ফিল্ম বদলে দিচ্ছে জীবনের দর্শন

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

‘ক্ষতিপূরণ’-এর দৃশ্যে ইয়াশ রোহান ও মালাইকা চৌধুরী (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুক্তি পাওয়া মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ইউটিউব ফিল্ম ‘ক্ষতিপূরণ’ ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ফিকশনের মধ্যে দুই নম্বরে আছে। গত ১০ জুন সিনেমাওয়ালা চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে এটি। এতে মা-বাবার প্রতি সন্তানের যত্নশীল হওয়ার ও মানুষের উপকারে সাধ্যমতো এগিয়ে আসার বার্তা দেওয়া হয়েছে। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই ইউটিউব ফিল্ম দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শকের জীবন-দর্শন বদলে দিচ্ছে। অনেকের মতে, মানুষের উপকারে এগিয়ে আসতে ও গ্রামের বাড়িতে মা-বাবার কাছে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে ‘ক্ষতিপূরণ’। ইউটিউব ফিল্মটি কাউকে কাউকে কাঁদিয়েছে, আবেগপ্রবণ করে তুলেছে। প্রেমের গল্পের ভিড়ে এমন বিষয়বস্তুর নাটক উপহার দেওয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন নির্মাতা রাজ।

‘ক্ষতিপূরণ’ রচনা করেছেন সিদ্দিক আহমেদ। এর গল্প এক সহৃদয় তরুণকে ঘিরে। কেউ জানে তার নাম ত্রিস্তান, কেউবা ডাকে কাফকা কিংবা তলস্তয়, কেউ আবার বলে হুমায়ূন আহমেদ! আসলে সে কে? তার প্রতি কৌতূহলী হয়ে ওঠে সাংবাদিক শিরিন। কিন্তু লোকটাকে দরদি মনে হলেও সামনে আসে এক নিষ্ঠুর অতীত। ছেলেটির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান। শিরিন চরিত্রে আছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর বোন মালাইকা চৌধুরী। এটি তার দ্বিতীয় ফিকশন।

ইউটিউব ফিল্মটি চার দিনে দেখা হয়েছে ৪২ লাখ বার। এতে মন্তব্য পড়েছে ৬ হাজারের বেশি। সাব্বির হুসেন নামের একজন প্রবাসী লিখেছেন, “অভিমান করে বাড়ি যাই না। চার মাস আগে দেশে যাওয়ার কথা ছিল। মা-বাবার সঙ্গে অভিমান করে কথা হয়নি প্রায় চার মাস। তখন থেকে সমস্যা। ভেবেছিলাম আর যাবো না দেশের বাড়ি। ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখার পর মনে হচ্ছে সবকিছুর পর মা-বাবা তো মা-বাবাই। আমি বাড়ি যাচ্ছি খুব শিগগিরই। আজ থেকে প্রস্তুতি শুরু করলাম। ধন্যবাদ সিনেমাওয়ালার পুরো টিমকে।”

‘ক্ষতিপূরণ’-এর দৃশ্যে রাশেদ মামুন অপু ও মালাইকা চৌধুরী (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

সজিব দরিয়া নামের আরেক প্রবাসীর কথায়, “গল্পটি কিছুটা নিজের জীবনের সঙ্গে মিলে গেলো। ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আট বছর হয়ে গেলো প্রবাসে আছি। দাদি আমাকে হাজারবার দেখতে চেয়েছেন, অনেকবার বাড়ি যেতে বলেছেন। কিন্তু যেকোনও সমস্যার কারণে বাড়ি যেতে পারিনি। সেই দাদি মারা গেছেন দেড় বছর হবে। এখন মা ঠিক দাদির মতো প্রতিনিয়ত আমাকে বাড়ি যেতে বলেন। কিন্তু আমার সমস্যার কারণে যেতে পারি না। বুক ফেটে যায় মাকে দেখার জন্য। মা এমন একটা মায়া যা পৃথিবীর অন্য কোনো কিছুতে পাওয়া যায় না। মায়ের ভালোবাসার কাছে সবকিছু তুচ্ছ।”

অন্য এক প্রবাসী লিখেছেন, “সত্যি খুব ভালো লাগলো। চার বছর চলছে বিদেশে আসছি। দুই বছর ধরে মা দেশে যেতে বলেন, কিন্তু সত্যি বলতে ইচ্ছে করেই দেশে যাইনি। ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখে মনে হচ্ছে আমার অনেক আগেই দেশে যাওয়া দরকার ছিল। তিন মাসের মধ্যেই দেশে যাবো।”

ইতালি থেকে বাইজিদ হাজরা লিখেছেন, ‘খুব সুন্দর একটি কন্টেন্ট। আমার দেখা সেরা গল্প। আগামী বছর দেশে যাবো মা-বাবা পরিবারের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাতে।’

‘ক্ষতিপূরণ’-এর শুটিংয়ে ইয়াশ রোহানকে দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

নাহিদ আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, “ক্যারিয়ারের জন্য আজ একবছর হলো বাড়ি যাচ্ছি না। ক্যারিয়ারের জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছি! ‘ক্ষতিপূরণ’-এর শেষ দিকের সংলাপগুলো শুনে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো। এবারের ঈদে সবাই শতবার বলার পরেও শুধু ক্যারিয়ারের জন্য বাড়ি যাইনি। ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখার পর আমার কান্না থামাতে পারছি না। আম্মু-আব্বুকে শুধু একবার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। বাবাকে বছরে দুইবার জড়িয়ে ধরার সুযোগ হয়। আমার জীবন থেকে দুইবার বাবাকে জড়িয়ে ধরার সুযোগটাও হারিয়ে ফেলেছি। ‘ক্ষতিপূরণ’-এর শেষ দিকে যখন ইয়াশ রোহান বলেন, ‘আমার মৃত্যুর পরে তো কেউই আমাকে মনে রাখবে না।’ আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। বাবা-মা ছাড়া কেউ খবর নেয়নি বেঁচে আছি কিনা। খুব শিগগিরই বাড়ি যাবো। এই পৃথিবীতে আমাদের বলতে শুধু এটুকুই আছে! এতদিন মনে হতো জীবনে উচ্চবিত্ত হওয়াই সব। এজন্য যা ত্যাগ করতে হয় করবো। কিন্তু না, সবকিছু ত্যাগ করলেও পরিবারের সঙ্গে থাকার মুহূর্তগুলো কখনও ত্যাগ করা যায় না। এই সুন্দর উপলব্ধিটুকু ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর হয়েছে। নতুবা আরো কয়েক বছরেও হয়তো বাড়ি যাওয়া হতো না। যিনি এই কন্টেন্ট বানিয়েছেন তার জন্য আশীর্বাদ রইলো।”

‘ক্ষতিপূরণ’-এর দৃশ্যে মালাইকা চৌধুরী ও শরিফ ফারজানা বুশরা (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

মোহাম্মদ ফয়সাল নামের একজন লিখেছেন, ‘আমাকে কাঁদিয়েছে ‘ক্ষতিপূরণ’। পুরোটা দেখার পর আমার মাকে খুব মিস করছি। তার ছবিটা দেখছি।’

মেহেরাব মোল্লা নামের একজন লিখেছেন, ‘এই নাটকটা দেখার পর মনে মনে শপথ করলাম, জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবো নিজের সাধ্যের মধ্যে সবাইকে উপকার করে যাওয়ার চেষ্টা থাকবে আমার।’

নাহিদা আইরিন নামের একজন লিখেছেন, ‘খুবই সুন্দর একটি নাটক। দুনিয়াতে কেউই একা বাঁচতে পারে না। অনেকে নিজেদের ক্যারিয়ার ও স্বপ্নের জন্য আপনজনকে ভুলে যায়। এটা যে সত্যিই ভুল, সেটার প্রমাণ এই নাটক।’

‘ক্ষতিপূরণ’-এর দৃশ্যে মালাইকা চৌধুরী ও সুষমা সরকার (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

মো. সজিবুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, ‘আমার বয়স ২৬ বছর। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে আজ পর্যন্ত অনেক নাটক দেখেছি। তবে ‘ক্ষতিপূরণ’ই আমার কাছে সেরা লেগেছে। কারণ এখানে ছিল মায়ের প্রতি যত্নশীল হওয়ার ও বিপদে পড়া মানুষদের উপকারে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা।’

ঝুমু আখতার মনে করেন, “এটি জীবন পাল্টে দিতে পারে সবার। তাই সবারই উচিত ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখে শিক্ষা নিয়ে বাস্তব জীবনে কাজে লাগানো।”

সোহেল রানা নামের একজনের মতে, “মনুষ্যত্ব কাকে বলে ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখে বুঝবেন, অনেক কিছু শিখতে পারবেন। এত সুন্দর একটি কন্টেন্ট আগে কখনও দেখিনি। ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখে আমাদের সবাইকেই শিক্ষা নেওয়া উচিত।”

‘ক্ষতিপূরণ’-এর দৃশ্যে ইয়াশ রোহান ও মালাইকা চৌধুরী (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

সায়মা সামিরা নামের একজন লিখেছেন, “আমার মা মারা গেছেন পাঁচ মাস। ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। কবরের পাশে যখন ইয়াশ রোহান কাঁদছিলেন, সেই দৃশ্য দেখে কান্না চলে এলো। সকল মা-বাবা ভালো থাকুক।”

আয়েশা সিদ্দিকা নামের একজন লিখেছেন, ‘গল্পটি সাধারণের মাঝে অসাধারণ। মায়ের কবরের পাশে কান্না করার দৃশ্য দেখে চোখে পানি চলে এসেছে। পৃথিবীর সকল মা-বাবার জন্য অনেক দোয়া রইলো। আল্লাহ যেন সব মা-বাবাকে সবসময় ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন।’

নাঈম খান মামুন নামের একজন লিখেছেন, “অসাধারণ সুন্দর ‘ক্ষতিপূরণ’। লেখক বাস্তবতা ও কল্পনা মিশিয়ে অসাধারণ কিছু সৃষ্টি করেছেন। পরিচালক নিপুণ কারিগরি সহায়তায় সব ফ্রেমে তুলে ধরেছেন। আর শিল্পীরা অনবদ্য অভিনয় দিয়ে আমাদের মতো অসংখ্য দর্শকের হৃদয় ভরিয়ে দিয়েছেন।”

‘ক্ষতিপূরণ’-এর দৃশ্যে এমএনইউ রাজু (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

প্রিয়া দাস নামের একজন লিখেছেন, “সম্পূর্ণ বাস্তবধর্মী একটি কাজ ‘ক্ষতিপূরণ’। আমার খুব ভালো লেগেছে। এটি একবার হলেও সময় নিয়ে সবার দেখা উচিত। এর গল্পের সঙ্গে অনেকের জীবনের কিছু না কিছু মিল পাওয়া যাবে। জীবনে টাকা-পয়সার চেয়েও পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে মা-বাবা। মা-বাবার জন্যই আজ নিজেদের জীবনটা উপভোগ করতে পারছি। মা-বাবা না থাকলে জীবনটাই শূন্য। সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষদের সাহায্য করা অত্যন্ত ভালো কাজ।”

সুমাইয়া কবিরের মন্তব্য, “কোনো বাজে দৃশ্য ছাড়াই যে এত সুন্দর কাজ হয়, ‘ক্ষতিপূরণ’ না দেখলে জানতাম না। এটুকু বলতে পারি, অনেক কিছু শিখলাম।”

পরিচালককে স্যালুট জানিয়ে জান্নাত আক্তার নামের একজন লিখেছেন, “মন ছুঁয়ে গেলো ‘ক্ষতিপূরণ’। এত শিক্ষণীয় কাজ। মানুষের উপকার করা এত সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে, এটি দেখলে সবাই শিখবেন।”

‘ক্ষতিপূরণ’ দেখে ১০ মিনিট কেঁদেছেন সালমান তাসমিম নামের এক দর্শক। ফাতেহা নূর নামের একজন লিখেছেন, ‘বাবা মায়ের প্রতি আমাদের দৈনন্দিনের অবহেলা খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছে, এবং আমাদের ভুল শোধরানোর পথ তৈরী করে দিয়েছে নাটকটি। ধন্যবাদ পরিচালক কে এরকম একটা বাস্তব চরিত্র তুলে ধরার জন্য।

‘ক্ষতিপূরণ’-এর দৃশ্যে ইয়াশ রোহান ও মালাইকা চৌধুরী (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

রিফান ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, “মানুষকে সাহায্য করলে কোনো ক্ষতি হয় না, বরং ক্ষতিপূরণ হয়। ‘ক্ষতিপূরণ’-এর গল্পে এই বিষয় তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ। আরেকটি কথা, আসুন আমরা সময় থাকতে কাছের মানুষকে মূল্য দিতে শিখি। তা না হলে হারিয়ে গেলে আর খুঁজলেও পাবো না।”

আরএস রাসেল নামের একজন লিখেছেন, ‘অসাধারণ একটি কাজ। এতে অনেক কিছু শেখার আছে। অন্যকে সাহায্য করতে পারা আল্লাহর বড় একটা রহমত। আর একটা কথা, আপন মানুষকে বেঁচে থাকতে কদর করুন। মরে গেলে কেঁদেও কোনো লাভ নেই।’

সোয়াদি ইসলাম নামের একজন মনে করেন, “মানুষের জীবনের দর্শন পরিবর্তন করে দিতে পারে ‘ক্ষতিপূরণ’, এটি না দেখলে এমন উপলব্ধি করতে পারতাম না।”

মো. শাহজালাল নামের একজন লিখেছেন, “প্রত্যেক মানুষ যদি এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়, জীবন পাল্টে যাবে আমাদের। মনুষ্যত্ব ও বিবেক জেগে উঠবে। ‘ক্ষতিপূরণ’ সবার মন জয় করেছে। অভিনয়শিল্পীরা সবাই ভালো করেছেন। পরিচালক ও রচয়িতাকে পুরষ্কার দেওয়া উচিত।”

‘ক্ষতিপূরণ’-এর পোস্টার (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

‘ক্ষতিপূরণ’-এ আরো অভিনয় করেছেন নাদের চৌধুরী, মনিরা আক্তার মিঠু, রাশেদ মামুন অপু, সুষমা সরকার, এমএনইউ রাজু, সমু চৌধুরী, শরিফ ফারজানা বুশরা, আইমন সিমলা, ইকবাল, শম্পা নিজাম, নওশীন দিশা, মনীষা শিকদার, টুম্পা মাহবুব ও তাজিনাতুন নাহার নওরিন।

ইউটিউব ফিল্মটির আবহ সংগীত তৈরি করেছেন আরফিন রুমি। এছাড়া নতুন একটি গানের সুর-সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। তার সঙ্গে এটি গেয়েছেন স্বর্ণা। ‘লিখেছি তোমার নাম’ শিরোনামের গানটি লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন। চিত্রগ্রহণ করেছেন রাজু রাজ। সম্পাদনা ও রঙ বিন্যাসে রাশেদ রাব্বি।

Advertisement

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ