Connect with us

বিশ্বসংগীত

ফেয়ারওয়েল কনসার্টের দুই সপ্তাহ পরেই ওজি অসবোর্নের চিরবিদায়

সিনেমাওয়ালা ডেস্ক

Published

on

ওজি অসবোর্ন (জন্ম: ৩ ডিসেম্বর, ১৯৪৮; মৃত্যু: ২২ জুলাই, ২০২৫)

মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে নিজের শেষ কনসার্টে দর্শক-শ্রোতাদের গানে গানে মাতিয়েছেন আমেরিকান সংগীতশিল্পী ওজি অসবোর্ন। হেভি মেটাল ব্যান্ড ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর এই গায়ক পৃথিবীর মায়া ছাড়িয়ে দূর আকাশের তারা হয়ে গেলেন! তার প্রয়াণে বিশ্বসংগীত জগতে শোকের ছায়া। বিষাদ ভর করেছে তার ভক্ত-শ্রোতাদের মনে।

গতকাল (২২ জুলাই) সকালে মারা গেছেন ওজি অসবোর্ন। পরিবারের পক্ষ থেকেই তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। বিখ্যাত এই সংগীতশিল্পীর বয়স হয়েছিলো ৭৬ বছর। তার মৃত্যুর কোনও কারণ জানানো হয়নি। তবে ২০২০ সালে ওজি অসবোর্ন শরীরে পারকিনসন রোগ ধরা পড়ার কথা জানান। এ কারণে তিনি হাঁটতে পারতেন না। গত ৫ জুলাই জীবনের শেষ কনসার্টে বসে থেকে সংগীত পরিবেশন করতে দেখা গেছে তাকে। তবে এতো দ্রুতই তার জীবনের ইতি ঘটবে ভাবেনি কেউ।

মেটাল সংগীতপ্রেমীদের কাছে তিনি ছিলেন কিংবদন্তি একজন শিল্পী। চোখে কাজল ও কালো রঙের টি-শার্টসহ একসময় তার ফ্যাশন অনেককে প্রভাবিত করেছে। ভক্তরা তাকে ভালোবেসে ডাকেন ‘প্রিন্স অব ডার্কনেস’ ও ‘গডফাদার অব হেভি মেটাল’। বার্মিংহামের বিভিন্ন স্থানে শোক জানাতে ফুল ও মোমবাতির পাশে বিয়ার বোতল, খালি গ্লাস ও জ্যাক ড্যানিয়েলস ব্র্যান্ডের এক বোতল হুইস্কি রেখে শোক জানিয়েছেন ভক্তরা। বার্মিংহাম মিউজিয়াম অ্যান্ড আর্ট গ্যালারিতে শোকবই খোলা হয়েছে।

বার্মিংহামের চায়নাটাউনে পর্দায় ওজি অসবোর্নের প্রতি শ্রদ্ধা (ছবি: এক্স)

১৯৪৮ সালের ৩ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ওজি অসবোর্ন। তার পুরো নাম জন মাইকেল অসবোর্ন। ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের অ্যাস্টনে বেড়ে ওঠেন তিনি। শৈশবে ডিসলেক্সিয়ায় ভুগতেন। ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরপর বেশ কয়েকটি ছোটখাটো কাজ করেছেন। একপর্যায়ে চুরির দায়ে কারাদণ্ড পেয়েছিলেন। তারপর আসে ব্ল্যাক সাবাথ। সত্তর দশকের গোড়ার দিকে এই ব্যান্ডে ওজি অসবর্ন সংগীত জীবন শুরু করেন। মেটাল সংগীতে তার অবদান অসামান্য। ব্ল্যাক স্যাবাথের হয় তিনি যেসব গান গেয়েছেন সেগুলোর কথা ও তাল অনেকের জীবনে ছন্দ এনে দিয়েছে। ব্যান্ডটির বিখ্যাত গানের তালিকায় আছে ‘প্যারানয়েড’, ‘আয়রন ম্যান’, ‘ওয়ার পিগস’, ‘স্যাবাথ ব্লাডি স্যাবাথ’, ‘মাস্টার অব রিয়েলিটি’।

বার্মিংহামে ওজি অসবোর্নের প্রতি ভক্তদের শ্রদ্ধা (ছবি: এক্স)

১৯৭৮ সালে ওজি অসবোর্নকে ব্যান্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর সফল একক ক্যারিয়ার গড়েন তিনি। ১৯৮০ সালে ‘ব্লিজার্ড অব ওজ’ অ্যালবামের ‘ক্রেজি ট্রেন’ সাড়া ফেলে। এর পরের বছর ‘ডায়েরি অব অ্যা ম্যাডম্যান’ আরো বেশি শ্রোতাপ্রিয়তা পায়।

বিতর্কিত জীবনযাপনের কারণে অনেকবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি।এরমধ্যে মাদকাসক্ত ছিলো অন্যতম কারণ। একসময় নেশা এমনই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিলো যে, ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটাতেও হাত কাঁপেনি তার। ১৯৮০ সালে ওজির বিরুদ্ধে মাদকাসক্ত হয়ে পোষা ১৭টি বিড়ালকে গুলি চালিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এক সাক্ষাৎকারে সেই দায় স্বীকার করেন তিনি নিজেই। মাদকের সঙ্গে নিজের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ে সেই ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

কেলি অসবোর্ন, ওজি অসবোর্ন, শ্যারন অসবোর্ন ও জ্যাক অসবোর্ন (ছবি: এক্স)

১৯৮০ সালে প্রথম স্ত্রী থেলমা রাইলির সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদ হয় ওজির। এরপর শ্যারন অসবোর্নকে বিয়ে করেন তিনি। ৪০ বছরের দাম্পত্য জীবন কেটেছে তাদের। দ্বিতীয় বিয়ের কয়েকদিন পর বিড়াল হত্যা করে বসেন তিনি। তখন শ্যারন বাড়িতে ছিলেন না। তিনি ফিরে দেখেন, এক হাতে বন্দুক আর এক হাতে ছুরি নিয়ে পিয়ানোর নিচে বসে আছেন ওজি।

১৯৮২ সালে মঞ্চে একটি বাদুড়কে খেলনা ভেবে তার মাথা কামড়ে দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হন ওজি অসবোর্ন। পরে জলাতঙ্কের টিকা দিতে হাসপাতালে যান তিনি। একসময় বাদুড় আকৃতির খেলনা বাজারে এনেছিলেন এই তারকা। ১৯৮৯ সালে শ্যারনকে হত্যাচেষ্টার কারণে জেলে যেতে হয়েছে তাকে। আদালত তাকে ছয় মাস পুনর্বাসনে কাটানোর নির্দেশ দেয়।

মঞ্চে সংগীত পরিবেশনের মুহূর্তে ওজি অসবোর্ন (ছবি: এক্স)

২০০২ সালে এমটিভিতে প্রচারিত আমেরিকান রিয়েলিটি টিভি শো ‘দ্য অসবোর্নস’-এর সুবাদে নতুন প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা পান ওজি অসবোর্ন। এতে তার ও পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাপন দেখা গেছে। ওজি ও শ্যারন দম্পতির মেয়ে কেলি অসবোর্ন ও ছেলে জ্যাক অসবোর্ন।

রক্ষণশীল ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো বরাবরই ওজি অসবোর্নের নিন্দা করেছে। নিন্দুকদের মতে, তিনি শয়তানের উপাসনা করতেন। এ কারণে ২০১০ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীতে ওজি অসবোর্ন বলেন, ‘আমার সুসময়ে কিছু খারাপ কাজ করেছি। কিন্তু আমি শয়তান নই। আমি ছিলাম কেবল অ্যাস্টনের একজন শ্রমিক শ্রেণির ছেলে, যে কারখানার চাকরি ছেড়ে ভালো সময় কাটানোর জন্য বেরিয়ে পড়েছিলো।’

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ