Connect with us

ঢালিউড

যাত্রাপালার প্রিন্সেস রূপে ভাবনা

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

আশনা হাবিব ভাবনা (ছবি: রনি বাউল)

যাত্রাপালার প্রিন্সেস রূপে বড় পর্দায় আসছেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। ‘ল্যান্ড অব দ্য প্রিন্সেস’ নামের একটি সিনেমায় তাকে এমন চরিত্রে দেখা যাবে। তার চরিত্রের নাম প্রিন্সেস রোজি। মেয়েটি যাত্রার গ্ল্যামারাস নৃত্যশিল্পী। 

‘ল্যান্ড অব দ্য প্রিন্সেস’ পরিচালনা করেছেন আসিফ ইসলাম। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘নির্বাণ’ ৪৬তম মস্কো আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।

ভাবনা জানিয়েছেন, দিনের পর দিন অনুশীলন করে যাত্রাশিল্পীদের মতো নাচ শিখতে হয়েছে তাকে। কারণ যাত্রার প্রিন্সেস হওয়ার জন্য অভিনয়ের পাশাপাশি যাত্রার উপযোগী নাচে দক্ষ হওয়া দরকার ছিলো। এছাড়া পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শ করে চরিত্রের প্রয়োজনে ৯ কেজি ওজন বাড়িয়েছেন তিনি।

‘ল্যান্ড অব দ্য প্রিন্সেস’ সিনেমার পোস্টার (ছবি: রেডমার্ক ফিল্ম প্রোডাকশন)

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফরিদপুর জেলার গোবিন্দপুরে যাত্রার সেট বানিয়ে সিনেমাটির শুটিং হয়েছে। ভাবনার পাশাপাশি এতে অভিনয় করেছেন এ কে আজাদ সেতু, অরবিন্দ মজুমদার, সতেজ চৌধুরী, মাহমুদ আলম, জান্নাতুল বাকের খান, সালাউদ্দিন শেখ। তাদের বেশিরভাগই যাত্রাশিল্পী। এ প্রসঙ্গে পরিচালক আসিফ ইসলাম বলেন, ‘সিনেমাটিতে যাত্রাশিল্পীদের ভূমিকায় যারা অভিনয় করেছেন, তারা সকলেই বাস্তবের যাত্রাশিল্পী। এজন্যই এটি বিশেষ হয়ে উঠেছে। তারা হয়তো যাত্রাশিল্পের শেষ প্রতিনিধিদেরই একটি দল। তাদের শিল্পকে এই সিনেমায় অন্তর্ভুক্ত করতে পেরে আমি গর্বিত। এ যেন যবনিকা টানার আগে তাদের জন্য শেষ এক মঞ্চ!’

আশনা হাবিব ভাবনা (ছবি: রনি বাউল)

রেডমার্ক ফিল্ম প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত ‘ল্যান্ড অফ দ্য প্রিন্সেস’ সিনেমার গল্পে দেখা যাবে, গোবিন্দপুর গ্রামে উত্তেজনা তুঙ্গে। ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ যাত্রাপালার জোর প্রস্তুতি চলছে। প্রধান অভিনেতার দৃঢ় বিশ্বাস, আলোছায়ার একমাত্র কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন তিনি নিজেই। কিন্তু শহর থেকে আসা গ্ল্যামারাস নৃত্যশিল্পী প্রিন্সেস রোজি দর্শকদের মন জয় করে নিচ্ছেন মঞ্চে ওঠার আগেই! রাতের পর্দা নামার সঙ্গে ঝলমলে আলো আর ছন্দের তালে তালে প্রত্যাশার রঙ বদলাতে শুরু করে।

আসিফ ইসলাম (ছবি: ফেসবুক)

যাত্রার সঙ্গে পরিচালক আসিফ ইসলামের প্রথম পরিচয় শৈশবে, ঢাকার প্রান্তবর্তী একটি দুর্গাপূজার মেলায়। ঝলমলে আলো, সুরের মায়া আর রঙিন সাজসজ্জা তার মনে গভীর ছাপ ফেলে। সেই অভিজ্ঞতা সিনেমার গল্প বলার ধারণাকে গড়ে তুলতে এই নির্মাতার জন্য সহায়ক হয়েছে।

‘ল্যান্ড অব দ্য প্রিন্সেস’ সিনেমা তৈরির ভাবনা জানিয়ে পরিচালক আসিফ ইসলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “২০১৮ সালে বহু বছর পর আবার যাত্রা দেখার সুযোগ হয় আমার। সেই রাতের পালা ছিলো ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’। আশ্চর্যের বিষয়, এই যাত্রাপালাই ৩৫ বছর আগে প্রথম দেখেছিলাম। কিন্তু এবার সবকিছুই অন্যরকম মনে হলো। একসময়ের শক্তিশালী ও আবেগময় যাত্রার মঞ্চ এখন পরিণত হয়েছে প্রায় প্রাপ্তবয়স্ক নৃত্য-আসরে। দর্শকরা আজ আর কাহিনি দেখতে আসে না। তাদের আগ্রহ শহর থেকে আসা এক ‘প্রিন্সেস’ নৃত্যশিল্পীকে ঘিরে। কয়েকটি দৃশ্যের পরেই যাত্রাপালা থেমে যায়, যখন প্রধান অভিনেতাকে দর্শকদের অপমানের মুখে পড়ে মঞ্চ ছাড়তে হয়। সেই অস্বস্তিকর রাতে গভীরভাবে উপলব্ধি করি যাত্রা কীভাবে বদলে গেছে, কীভাবে সে টিকে থাকার লড়াই করছে এমন এক সময়ে যখন ঐতিহ্য আর সময়ের চাহিদা এক নয়। আমি মনে করি, এই গল্প বলা জরুরি। শুধু স্মৃতির জন্য নয়, বরং যাত্রার ক্রমে বিলীন হয়ে যাওয়া আত্মাকে ধারণ করার জন্য। ‘ল্যান্ড অব দ্য প্রিন্সেস’ আমার সেই শীতের রাতকে পুনর্নির্মাণের একটি প্রচেষ্টা, একটি প্রতিচিন্তা, যেখানে আজকের যাত্রার ভঙ্গুর বাস্তবতা উঠে এসেছে।”

আশনা হাবিব ভাবনা (ছবি: রনি বাউল)

‘ল্যান্ড অব দ্য প্রিন্সেস’-এর গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন লিয়ন, আসিফ ইসলাম ও জগন্ময় পাল। শুটিং শেষে এখন সিনেমাটির পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ চলছে। শব্দগ্রহণ করেছেন সুকান্ত মজুমদার। প্রযোজনায় জান্নাতুল বাকের খান ও আসিফ ইসলাম। সহ-প্রযোজনায় সাকিব ইফতেখার।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ