Connect with us

বলিউড

যে ৫ কারণে ইতিহাস গড়লো ‘সাইয়ারা’

সিনেমাওয়ালা ডেস্ক

Published

on

‘সাইয়ারা’ সিনেমায় অনীত পাড্ডা ও আহান পান্ডে (ছবি: যশরাজ ফিল্মস)

বলিউডের নবাগত নাযক আহান পান্ডে ও উঠতি নায়িকা আনীত পাড্ডা অভিনীত ‘সাইয়ারা’ উন্মাদনায় ডুবে আছেন দর্শকরা। এতে প্রেমের প্রতীক্ষায় একজোড়া তরুণ-তরুণীর পথ চেয়ে থাকার গল্প আবেগপ্রবণ করেছে সবাইকে। দর্শক-সমালোচকসহ সবার প্রশংসা কুড়িয়ে বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে সিনেমাটি। ফলে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো রেকর্ড নতুনভাবে লেখা হচ্ছে।

বলা যায়, চমকপ্রদভাবে বিশাল ব্লকবাস্টার হয়ে গেছে ‘সাইয়ারা’। কারণ এটি জনপ্রিয় কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজের অংশ না। এতে হেভিওয়েট কোনো তারকার উপস্থিতি নেই। তাছাড়া মুক্তির আগে আহামরি কোনো প্রচারণা চালানো হয়নি। তবুও দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে এই সিনেমা। তারকাদের মধ্যে বুঁদ হয়ে থাকা হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ‘সাইয়ারা’ প্রমাণ করেছে দর্শকরা যেকোনো অপ্রত্যাশিত কিছুকে গ্রহণ করে নিতে পারে। মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প, শ্রুতিমধুর গান ও পরিমিত প্রচারণার সম্মিলনে এই অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে।

‘সাইয়ারা’কে ভারতের সিনেমাকেন্দ্রিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা ‘গেম চেঞ্জার’ তকমা দিয়েছেন। কারণ এ ধরনের সিনেমার কথা বলিউড প্রায় ভুলতে বসেছিলো! বলা যায়, ‘সাইয়ারা’ প্রেমের সিনেমাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে বলিউডে। এটি প্রমাণ করেছে, দারুণ গল্প, অভিনয়, নির্মাণ ও শ্রুতিমধুর গান সমৃদ্ধ প্রেমের সিনেমার প্রতি দর্শকদের আবেদন এখনো কমেনি। তাই আশা করা হচ্ছে, ‘সাইয়ারা’ বলিউডে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। সিনেমাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বড় বাজেটের আয়োজনের চেয়ে বরং দর্শকদের পছন্দ প্রাণবন্ত গল্প দেখার দিকে বদলেছে।

‘সাইয়ারা’ সিনেমায় অনীত পাড্ডা ও আহান পান্ডে (ছবি: যশরাজ ফিল্মস)

‘সাইয়ারা’র আগে বলিউডে দীর্ঘদিন কোনো তরুণ নায়ক প্রেমের গল্প নিয়ে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করে তুমুল সাফল্য পাননি। এর সর্বশেষ উদাহরণ ছিলো ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হৃতিক রোশনের ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’। হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে কোনো নবাগত নায়কের সিনেমার এমন অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়ার নজির বিরল। যেমন ‘সাইয়ারা’ মুক্তির তৃতীয় দিন (২০ জুলাই) ৩৫ কোটি ৭৫ লাখ রুপি আয় করেছে।

গত ১৮ জুলাই বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে মোহিত সুরি পরিচালিত ‘সাইয়ারা’। যশরাজ ফিল্মসের সিইও অক্ষয় বিধানী প্রযোজিত সিনেমাটি ৩১ জুলাই পর্যন্ত দুই সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৪০০ কোটি রুপির ঘর পেরিয়ে ইতিহাস গড়েছে। এরমধ্যে শুধু ভারতেই টিকিট বিক্রি থেকে এসেছে ৩১৮ কোটি রুপি। ভারতের বাইরে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৮৬ কোটি রুপির।

‘সাইয়ারা’ সিনেমায় অনীত পাড্ডা ও আহান পান্ডে (ছবি: যশরাজ ফিল্মস)

একনজরে ‘সাইয়ারা’র বিশ্বব্যাপী বক্স অফিস
ভারত (আয়): ২৬০ কোটি ২৫ লাখ রুপি
ভারত (টিকিট বিক্রি): ৩১৮ কোটি রুপি
বহির্বিশ্ব (টিকিট বিক্রি): ৮৬ কোটি রুপি
বিশ্বব্যাপী (টিকিট বিক্রি): ৪০৪ কোটি রুপি

বলিউডের তিন হেভিওয়েট খান শাহরুখ, আমির ও সালমানকে টেক্কা দিয়েছে ‘সাইয়ারা’। মুক্তির প্রথম সপ্তাহে ১৭৫ কোটি ২৫ লাখ রুপির পর শুধু ভারতেই দ্বিতীয় সপ্তাহে ১১০ কোটি রুপির টিকিট বিক্রি হয়েছে এই সিনেমার। দ্বিতীয় সপ্তাহে সর্বকালের সর্বোচ্চ আয় করা ১০ সিনেমার তালিকায় এটি পেছনে ফেলেছে আমির খানের ‘পিকে’ (৯৫ কোটি ৭৮ লাখ রুপি), শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ (৯৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপি) ও সালমান খানের ‘টাইগার থ্রি’কে (৯৪ কোটি ৫ লাখ রুপি)।

‘সাইয়ারা’ সিনেমায় আহান পান্ডে ও আনীত পাড্ডা (ছবি: যশরাজ ফিল্মস)

সাফল্যের পাঁচ মূলমন্ত্র
চলতি বছরে বলিউডের সবচেয়ে আলোচিত ও ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায় ‘সাইয়ারা’ অন্যতম। এমন অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে রয়েছে পাঁচটি মূলমন্ত্র। সচরাচর বলিউডের প্রযোজনা-পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেটদের যেমন চিন্তাভাবনা থাকে সেগুলো কিছুই অনুসরণ করেনি যশরাজ ফিল্মস। এর মাধ্যমে নতুনদের সুযোগ দেওয়ার বেলায় প্রচলিত সমস্ত মিথ ভেঙে দিয়েছেন তারা। সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার, পডকাস্ট উপস্থিতি কিংবা প্রচারণামূলক ইভেন্ট দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণের বিন্দুমাত্র চেষ্টা করা হয়নি। বলিউডে সাধারণত যেমন ঢাকঢোল পেটানো প্রচারণা দেখা যায়।

১. সিনেমা মুক্তির পর রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া আহান পান্ডে ও আনীত পাড্ডাকে শুরু থেকেই কিছুটা আড়ালে রেখেছিলো যশরাজ ফিল্মস। ফলে তাদের ঘিরে আলোচনা বেড়েছে। নবাগত নায়ক ও উঠতি নায়িকাকে সিনেমা মুক্তির আগে সংবাদমাধ্যমের সামনে ঠেলে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয়েছে। ১১ বছর আগে ‘মারদানি’ মুক্তির আগে একই পন্থায় খলনায়ক তাহির রাজ ভাসিনকে জনসমক্ষে আনেইনি যশরাজ ফিল্মস। ‘সাইয়ারা’র ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক কৌশল হিসেবে মুক্তির দিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের আগে কোনো শো চালায়নি যশরাজ ফিল্মস। উল্টো সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের শোতে কলেজ শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে টিকিটে মূল্যছাড় দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সেদিন ছয়টির বেশি শো রাখেনি প্রতিষ্ঠানটি।

‘সাইয়ারা’ সিনেমায় অনীত পাড্ডা ও আহান পান্ডে (ছবি: যশরাজ ফিল্মস)

২. দর্শকরাই ‘সাইয়ারা’র চিয়ারলিডার ও শুভেচ্ছাদূত হয়ে উঠেছে। তাদের মুখে মুখে ছড়িয়েছে এই সিনেমার জয়গান। ভালো কন্টেন্টের শক্তি কীভাবে সব বয়সীদের সিনেমাহলে টেনে আনে সেটি আরেকবার প্রমাণ করেছে ‘সাইয়ারা’। দর্শকদের মুখে মুখে প্রশংসা ছড়ানোর পাশাপাশি একই দর্শকের বারবার দেখার সুবাদে সিনেমাটি অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে।

৩. রাতারাতি সর্বকালের সেরাদের তালিকায় স্থান পাওয়ার ঘটনা আহান পান্ডে ও আনীত পাড্ডার জন্যইঅন্যরকম এক মাইলফলক। সিনেমায় তাদের অসাধারণ অভিনয় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। সমালোচকরা বড় পর্দায় তাদের সাবলীল উপস্থিতি ও আবেগ প্রকাশের সহজাত প্রতিভার প্রশংসা করেছেন। সেই সঙ্গে মোহিত সুরির দুর্দান্ত পরিচালনা ‘সাইয়ারা’র সাফল্যের অন্যতম একটি কারণ। ‘আশিকি টু’র পর বলিউডকে সংগীতনির্ভর আরেকটি দারুণ নির্মাণ উপহার দিলেন তিনি।

‘সাইয়ারা’ সিনেমায় আহান পান্ডে ও অনীত পাড্ডা (ছবি: যশরাজ ফিল্মস)

৪. দারুণ গল্প সিনেমাটির প্রতি দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে। যশরাজ ফিল্মস প্রযোজিত ‘এক থা টাইগার’ (২০১২) সিনেমার ‘সাইয়ারা’ গান থেকে আহান পান্ডে ও আনীত পাড্ডার এই সিনেমার নামকরণ হয়েছে। এর গল্প লেখক বাণী ও উদীয়মান গায়ক কৃষকে ঘিরে। ঘটনাক্রমে তাদের পরিচয় হয় ও তারা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বাণী আলজাইমার রোগে আক্রান্ত হলে কাহিনি মোড় নেয় অন্যদিকে।

৫. শুধু ট্রেলার ও গানের ওপর নির্ভর করেছে যশরাজ ফিল্মস। তাদের পরিকল্পনা বৃথা যায়নি। অনলাইনে ধীরে ধীরে দর্শকদের মধ্যে আকর্ষণ তৈরি করেছে ট্রেলার ও গানগুলো। সিনেমাটির গান ‘সাইয়ারা’ তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। কাশ্মিরের গায়ক ফাহিম আব্দুল্লাহ এতে কণ্ঠ দিয়েছেন। তার সঙ্গে মিলে এটি সুর করেছেন তানিষ্ক বাগচি ও আরসালান নিজামি। এছাড়া দ্য রিশের কথা-সুরে জুবিন নটিয়ালের গাওয়া ‘বরবাদ’, রাজ শেখরের কথা ও বিশাল মিশ্রর সুরে ‘তুম হো তো’ (কণ্ঠ: বিশাল মিশ্র ও হানসিক পারিক), ‘হামসফর’, মিথুনের কথা ও সুর ও সংগীতে অরিজিৎ সিংয়ের গাওয়া ‘ধুন’, শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে ‘সাইয়ারা রিপ্রাইজ’, শিল্প রাওয়ের গাওয়া ‘বরবাদ রিপ্রাইজ’ সবই শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘সাইয়ারা’ ও ‘হামসফর’ লিখেছেন ইরশাদ কামিল।

আহান পান্ডে ও মোহিত সুরি (ছবি: এক্স)

বলিউডের অনেক নির্মাতা-তারকা ‘সাইয়ারা’র সাফল্য উদযাপন করছেন। আহান পান্ডের চাচা বলিউড অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডে। ‘সাইয়ারা’ মুক্তির দিন আহানকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভকামনা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘তুমি আমাদের নক্ষত্রে ভরা আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকো। আজ ও চিরকাল তোমার জন্য ভালোবাসা ও শুভকামনা।’

সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যমে ‘সাইয়ারা’র প্রশংসা করেছেন বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার, রণবীর কাপুর, রণবীর সিং, অনিল কাপুর, কুনাল কেমু, অভিনেত্রী আলিয়া ভাট, শ্রদ্ধা কাপুর, অনন্যা পান্ডে, তারা সুতারিয়া, তানিশা মুখার্জি, ইলি আবরাম, দক্ষিণী তারকা মহেশ বাবু, পরিচালক করণ জোহর, সুভাষ ঘাই, মধুর ভান্ডারকর, সন্দীপ রেড্ডি বাঙ্গা, হানসাল মেহতা, সঞ্জয় গুপ্ত, ‘সনম তেরি কসম’ সিনেমার পরিচালকদ্বয় বিনয় সাপ্রু ও রাধিকা রাও, ‘পুষ্পা’র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মাইত্রি মুভি মেকার্স, ম্যাডক ফিল্মস। ‘পাঠান’ ও ‘ওয়ার’ সিনেমার পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দ ‘সাইয়ারা টু’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ