Connect with us

রিভিউ

সহযাত্রী: ডিভোর্স অনুষ্ঠানের মোড়কে নিবিড় বন্ধনের প্রতিচ্ছবি

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

‘সহযাত্রী’র দৃশ্যে ফারহান আহমেদ জোভান ও নাজনীন নাহার নিহা (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

নতুন প্রজন্মের এক দম্পতির সংসারে টানাপোড়েন ও বিয়েবিচ্ছেদের অদ্ভুত আয়োজনকে ঘিরে আবর্তিত ইউটিউব ফিল্ম ‘সহযাত্রী’ এখন আলোচনায়। সমকালীন দাম্পত্য জীবনের চেনা সংকটকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে এতে। স্বামী-স্ত্রীর ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত ও পারিবারিক উৎসবের আনন্দ মিলেমিশে তৈরি হওয়া কোলাজ দর্শকদের মনে করিয়ে দেয়– আধুনিক জীবনে সম্পর্কের ভাঙন কতো দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে উঠছে! স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভাঙনকে ঘিরে মানুষের কৌতূহলকে এতে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে সামাজিক রূপকে। একইসঙ্গে এই কন্টেন্ট হয়ে উঠেছে ডিভোর্স অনুষ্ঠানের মোড়কে চার দেয়ালে পরিবারের মধ্যকার নিবিড় বন্ধনের প্রতিচ্ছবি।

ইউটিউবে সিনেমাওয়ালা চ্যানেলে গত ১৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে ‘সহযাত্রী’। পাঁচ দিনে প্রায় ৪০ লাখ বার দেখা হয়েছে ইউটিউব ফিল্মটি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা। গল্পের মূল দুই চরিত্র জয় ও অবনীর মধ্যে সম্পর্কের শুরুতে ভালোবাসার যে আবেগ ছিল, সেগুলো দ্রুত ভেঙে পড়তে থাকে অহংকার, ভুল বোঝাবুঝি ও পারস্পরিক দোষারোপে। তাদের ছোটখাটো ঝগড়া থেকে শুরু হয় বড় ধরনের দ্বন্দ্ব, যা গড়ায় ডিভোর্সের সিদ্ধান্তে। এরপর ডিভোর্স উদযাপনের জন্য আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে ও রিসোর্ট ভাড়া করে বিয়ের মতো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সবাইকে চমকে দেয় তারা।

‘সহযাত্রী’র দৃশ্যে ফারহান আহমেদ জোভান ও নাজনীন নাহার নিহা (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

ইউটিউব ফিল্মটি রচনা করেছেন জোবায়েদ আহসান। ‘সহযাত্রী’র গল্প লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। গল্পে সম্পর্কের ভাঙাগড়া, প্রেম-ভালোবাসা, অভিমান, অহংকারের দ্বন্দ্ব ও সামাজিক অনুষঙ্গকে সমান্তরালে দেখিয়েছেন তিনি। দাম্পত্যের অন্তর্গত অস্থিরতাকে তুলে ধরা হয়েছে বাস্তবতার মিশেলে। ফলে দর্শক একদিকে বিনোদিত হয়, অন্যদিকে অস্বস্তি অনুভব করে। ডিভোর্স অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এক উল্টো উৎসব দর্শককে যেমন হাসায়, একইসঙ্গে অস্বস্তিতে ফেলে।

‘সহযাত্রী’র শুটিংয়ে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, নাজনীন নাহার নিহা ও ফারহান আহমেদ জোভান (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের নির্মাণে ‘সহযাত্রী’ হয়ে উঠেছে সমকালীন দাম্পত্য সম্পর্কে ভাঙনের নেপথ্য ও সামাজিক মানসিকতার প্রতিচ্ছবি। গল্পের শুরুতে যেসব দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়েন, সেগুলো কেবল স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত কলহ নয়; বরং সম্পর্ক ভাঙার নেপথ্যের অস্থির মানসিকতা ও আবেগের প্রতিফলন। ইউটিউব ফিল্মটি দর্শকদের মনে প্রশ্ন তোলে—ভালোবাসা কি কেবল একসাথে থাকা, নাকি কখনো দূরে সরে যাওয়ার মধ্যেও সেই অনুভূতি থাকে? কিংবা আমরা কি সত্যিই ভালোবাসার মানে বুঝি, নাকি কেবল তাকে সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের ভেতর খুঁজে ফিরি?

‘সহযাত্রী’র দৃশ্যে (বাঁ থেকে) ডা. এজাজুল ইসলাম, ইন্তেখাব দিনার ও তানজিম হাসান অনিক (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

ইউটিউবে মন্তব্যের ঘরে ছয় হাজরের বেশি দর্শক নিজেদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন ও অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। ‘সহযাত্রী’র কিছু সংলাপ দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে আলাদাভাবে। যেমন— ‘ভালোবাসা শুধু বলা নয়, প্রমাণও দরকার। প্রতিদিন, বিয়ের পরও’; ‘যেখানে ত্যাগ নেই সেখানে ভালোবাসা বাঁচে না’, ‘ভালোবাসায় যত্ন নিতে হয়’, ‘ভালোবাসা মানে একে অপরকে বোঝা, সম্মান করা, পাশে থাকা।’ এসব সংলাপের মধ্য দিয়ে দর্শকরা উপলব্ধি করেছেন—ভালোবাসা কেবল রোমান্টিক মুহূর্ত নয়। বরং এটি একটি দীর্ঘ যাত্রা, যেখানে সহনশীলতা, ত্যাগ ও বোঝাপড়া থাকা প্রয়োজন।

‘সহযাত্রী’র দৃশ্যে ফারহান আহমেদ জোভান ও নাজনীন নাহার নিহা (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

জয় ও অবনী দম্পতির কাহিনি যেন বর্তমান সময়ের প্রতীক। তাদের দাম্পত্য জীবনের অস্থিরতা, অভিমান ও আবেগকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান ও অভিনেত্রী নাজনীন নাহার নিহা। দুই তারকার সংলাপ ও অভিব্যক্তিতে রয়েছে নতুন প্রজন্মের ভালোবাসা ও ভাঙনের টানাপোড়েন।

‘সহযাত্রী’র দৃশ্যে (বাঁ থেকে) সুষমা সরকার, শেরতাজ জাহান জেবিন, তানজিম হাসান অনিক, ডা. এজাজুল ইসলাম ও তাবাসসুম ছোঁয়া, (সামনে) ফারহান আহমেদ জোভান ও নাজনীন নাহার নিহা (ছবি: সিনেমাওয়ালা)

‘সহযাত্রী’তে আরও অভিনয় করেছেন ডা. এজাজুল ইসলাম, ইন্তেখাব দিনার, সুষমা সরকার, মনিরা আক্তার মিঠু, মাহমুদুল ইসলাম মিঠু, শিল্পী সরকার অপু, তাবাসসুম ছোঁয়া, তানজিম হাসান অনিক, ডিকন নূর, এস এম আশরাফুল আলম সোহাগ, এবি রোকন, শম্পা, শেরতাজ জাহান জেবিন, সেলজুক তারিক আল হাশিমী, শফিজ আল মামুন, শামীম মোল্লা, তুষার মামুন ও রাইসুল।

নাটকটিতে ব্যবহৃত ‘আঘাত’ গানটি গেয়েছেন আরফিন রুমি ও দোলা রহমান। সুর ও সংগীত পরিচালনায় শাহরিয়ার মার্সেল। এর কথা লিখেছেন লুৎফর হাসান। ‘সহযাত্রী’র চিত্রগ্রহণ করেছেন রাজু রাজ। সম্পাদনা ও রঙ বিন্যাসে রাশেদ রাব্বি।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ