Connect with us

গান বাজনা

বর্ষশেষ ২০২৫: ফরিদা পারভীন, অঞ্জনা, প্রবীর মিত্রদের মনে পড়ে

প্রতি বছর সাংস্কৃতিক ও বিনোদন অঙ্গনের অনেকে চিরতরে পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি দেন অনন্তলোকে। এবার কারো হঠাৎ মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দীর্ঘ অসুস্থতার সঙ্গে লড়াইয়ে হার মেনেছেন। কেউ কেউ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন নিভৃতে। কিছু মৃত্যুর খবর এসেছে অপ্রত্যাশিতভাবে। ২০২৫ সালে দেশের বিনোদন অঙ্গনের যারা চিরবিদায় নিলেন, বর্ষশেষে তাদের স্মরণ।

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

ফরিদা পারভীন (জন্ম: ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৫৪; মৃত্যু: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫)

ফরিদা পারভীন
বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনিসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। ১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্মগ্রহণ করেন ফরিদা পারভীন। ১৯৬৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। জীবনের বেশিরভাগ সময় লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে কাটিয়েছেন তিনি। লালনের গানের বাণী ও সুরকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান সর্বজনস্বীকৃত।

লালনসংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন ফরিদা পারভীন। শুধু দেশে নয়, বিশ্বদরবারে লালন সাঁইয়ের বাণী ও সুর প্রচারের কাজে নিবেদিত ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে  জাপান সরকার তাঁকে কুফুওয়া এশিয়ান কালচারাল পদক দিয়েছে। তাঁর গাওয়া বেশ কিছু আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গান শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘তোমরা ভুলে গেছ মল্লিকাদির নাম’, ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ ইত্যাদি। ১৯৯৩ সালে ‘অন্ধ প্রেম’ সিনেমার ‘নিন্দার কাঁটা’ গানের সুবাদে শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী (নারী) হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ফরিদা পারভীন।

প্রবীর মিত্র (জন্ম: ১৮ আগস্ট, ১৯৪৩; মৃত্যু: ৫ আগস্ট, ২০২৫)

প্রবীর মিত্র
গুণী অভিনেতা প্রবীর মিত্র গত ৫ জানুয়ারি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর। শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতাসহ বেশ কিছু শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। পুরান ঢাকায় বেড়ে ওঠেন তিনি। ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’র মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তাঁর। এটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে নায়ক হিসেবে কাজ করলেও তিনি ছিলেন মূলত একজন চরিত্রাভিনেতা। প্রবীর মিত্র অভিনীত চার শতাধিক সিনেমার তালিকায় উল্লেখযোগ্য– ‘তিতাস একটি নদীর নাম’,‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’ ইত্যাদি।

অঞ্জনা রহমান (ছবি: ফেসবুক)

অঞ্জনা রহমান
চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমান গত ৪ জানুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। অঞ্জনা নৃত্যশিল্পী থেকে চিত্রনায়িকা হয়ে সর্বাধিক যৌথ প্রযোজনা ও বিদেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’র মাধ্যমে বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক হয়। তবে অঞ্জনার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম সিনেমা ‘দস্যু বনহুর’। এতে তার নায়ক ছিলেন সোহেল রানা। অঞ্জনা প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার বাণিজ্যিক সফল সিনেমার তালিকায় উল্লেখযোগ্য–‘মাটির মায়া’, ‘অশিক্ষিত’, ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘জিঞ্জির’, ‘অংশীদার’, ‘আনারকলি’, ‘বিচারপতি’, ‘অভিযান’, ‘মহান’, ‘রাম রহিম জন’, ‘পরিণীতা’ ইত্যাদি।

অঞ্জনা ১৯৮১ সালে ‘গাঙচিল’ ও ১৯৮৬ সালে ‘পরিণীতা’ সিনেমার সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন অঞ্জনা। এছাড়া ‘মোহনা’, ‘পরিণীতা’ ও ‘রাম রহিম জন’-এর সুবাদে সেরা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে তিনবার বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

সন্‌জীদা খাতুন (জন্ম: ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল, মৃত্যু: ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ)

সন্‌জীদা খাতুন
ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, রবীন্দ্রগবেষক ও সংগীতজ্ঞ সন্‌জীদা খাতুন গত ২৫ মার্চ মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯২ বছর। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া ও কিডনি রোগে ভুগছিলেন তিনি। ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন সন্‌জীদা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন তিনি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন সক্রিয়।

এ কে রাতুল (ছবি: ফেসবুক)

এ কে রাতুলসহ অন্যরা
২০২৫ সালে সংগীতাঙ্গন থেকে অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছেন ‘একটা চাদর হবে’ গানের গায়ক জেনস সুমন (মৃত্যু ২৮ নভেম্বর), ‘সাগরের তীর থেকে’ গানের কণ্ঠশিল্পী জীনাত রেহানা (মৃত্যু ২ জুলাই), ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাসউদ্দিন আহমেদের সন্তান একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী সংগীতশিল্পী, সুরকার, অধ্যাপক, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী (মৃত্যু ১০ মে), প্রয়াত চিত্রনায়ক জসীমের ছেলে ও সংগীতশিল্পী এ কে রাতুল (মৃত্যু ২৭ জুলাই), গিটারবাদক সেলিম হায়দার (মৃত্যু ২৭ নভেম্বর)।

জাহিদুর রহিম অঞ্জন (ছবি: ফেসবুক)

আরো যারা চলে গেলেন
অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ (মৃত্যু ১৫ এপ্রিল), অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া (মৃত্যু ২৫ আগস্ট, ৬৮ বছর), অভিনেতা সাংকো পাঞ্জা (মৃত্যু ২৯ মে), একসময়ের চিত্রনায়িকা বনশ্রী (মৃত্যু ১৬ সেপ্টেম্বর), চিত্রনায়িকা তানিন সুবহা (মৃত্যু ১০ জুন), ‘মেঘমল্লার’ সিনেমার পরিচালক জাহিদুর রহিম অঞ্জন (মৃত্যু ২৪ ফেব্রুয়ারি, ৬০ বছর)), নির্মাতা ইফতেখারুল আরেফিন (মৃত্যু ২৯ জানুয়ারি), আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্র সম্পাদক মুজিবুর রহমান দুলু (মৃত্যু ১ জুন), সিনেমা প্রযোজক ও অভিনেতা কামাল পারভেজ (মৃত্যু ২২ নভেম্বর), ‘চাঁদের আলো’ সিনেমার পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম (মৃত্যু ২৩ নভেম্বর, ৮১ বছর), প্রযোজক ও ফাইট গ্রুপ জ্যাম্বসের অন্যতম সদস্য রুহুল আমিন বাবুল (মৃত্যু ৬ ডিসেম্বর), ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার প্রযোজক সুকুমার রঞ্জন ঘোষ (মৃত্যু ২২ ডিসেম্বর)।

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ