Connect with us

আলাপচারিতা

আমার ক্যারিয়ার কিন্তু একদিনে হয় নাই, অনেক সংগ্রাম করেছি: আফরান নিশো

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমায় আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোর অভিষেক হতে যাচ্ছে বড় পর্দায়। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তি পাবে ঈদুল আজহায়। এর ফার্স্ট লুক, অফিসিয়াল পূর্বাভাস ও আইটেম গান প্রকাশের পর দারুণ সাড়া পাচ্ছেন তিনি। আলফা-আই স্টুডিওস ও চরকির প্রযোজনায় এতে মাসুদ চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। প্রথমবার রুপালি পর্দায় কাজ করা উপলক্ষে সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় ১০ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হচ্ছে শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’কে। ফলে আসন্ন ঈদুল আজহায় সিনেমাহলে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
আফরান নিশো: আমার মনে হয়, সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকলে ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য ভালো। এতে ইন্ড্রাস্ট্রির উন্নতি হবে। আমি মনে করি, প্রতিযোগিতা সবসময় ছিলো। কারণ প্রতিযোগিতা না থাকলে আমি চ্যালেঞ্জ অনুভব করি না। নাটকে কাজ করার সময়ও অন্যদের সঙ্গে আমাকে নিয়ে আলোচনা সবসময়ই ছিলো। সেটা ভিউ, ভালো কাজ কিংবা ভক্তদের ক্ষেত্রে হোক। আর ভক্তদের মধ্যে উন্মাদনা থাকবেই, কারণ তারা অনেক আবেগী। আমার কাছে মনে হয়, ভক্তদের দায়িত্বশীল থাকতে হয়। কারণ তারা আমার প্রতিনিধিত্ব করে। আমার ভক্তদের প্রতি সেই দায়িত্ববোধের জায়গাটা ধরে রাখার অনুরোধ জানাই।

আমার ক্যারিয়ারটা দীর্ঘদিনের হলেও জানি আমি সবসময় থাকবো না। এটাই নিয়ম। এর ফলে একজনের পর আরেকজন আসে। তাই আমার ক্ষুধা অভিনয়ে। আমি অভিনয় করে যাবো। একটু ভিন্নধর্মী চরিত্র পেলে আমার জন্য বরং সহজ হয়। আমার মতে, একজন অভিনয়শিল্পীকে সব ধরনের চরিত্রে কাজ করা উচিত। দর্শকদের চিন্তাধারা বদলেছে, তারা সব ধরনের কাজ গ্রহণ করছেন। এজন্য চরিত্রনির্ভর অভিনয়শিল্পীরা উঠে এসেছেন।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র পূর্বাভাস প্রকাশের পর আপনার অনেক সহকর্মী এটি শেয়ার দিয়ে শুভকামনা জানিয়েছেন। এসব দেখে কেমন লেগেছে?
আফরান নিশো: এটা আমার কাছে বিস্ময়কর ঘটনা এবং অবাক করার মতো। আমরা যারা একই অঙ্গনে কাজ করি, তাদের সবারই ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকে। কোনও কিছু ভালো লেগে গেলে হয়তো আমরা স্বেচ্ছায় বরণ করি। এছাড়া দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করলে আলাদা দায়িত্ববোধ তৈরি হয়। কোনও সহকর্মী যদি নতুন কিছুতে পদার্পণ করে তখন একটা দায়িত্ববোধের ব্যাপার চলে আসে। এতো বছর ছোট পর্দায় কাজ করার পর বড় পর্দায় আসছি বলে অনেকে হয়তো দায়িত্ব ভেবে শুভকামনা জানিয়েছে। বিয়ের সময়ও আমরা এভাবে শুভকামনা জানিয়ে থাকি।

ব্যক্তিজীবনে আমি আবেগপ্রবণ মানুষ। অপরিচিতদের সামনে আমি চাপা স্বভাবের। কিন্তু বন্ধুমহলে ও কাছের মানুষদের কাছে খুবই প্রাণখোলা। আমি সবাইকে মন থেকে ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাচ্ছি। মনে হচ্ছে, আমরা যারা একই অঙ্গনে কাজ করি, তাদের মধ্যে ভালোবাসা ফুরিয়ে যায়নি। আমরা একে অপরের প্রতি যে দায়িত্ববোধের কথা বলি, সেটি হয়তো ফুরিয়ে যায়নি। একইসঙ্গে নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়! মাঝে মধ্যে ভাবি, আমি কি অন্যদের মতো উদার কিংবা তাদের মতো দায়িত্বজ্ঞান আমার আছে কিনা। কোনো কিছুতে অন্যের পদচারণা যদি ভালো লেগে যায়, তাহলে উৎসাহ দিলে অনুপ্রাণিত হতে পারে। সেটা যে কারো ক্ষেত্রেই। আমার প্রতি অন্যদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে আমার ভালোবাসাও জাগ্রত হচ্ছে।

আফরান নিশো (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষ্ক্রিয় বলা চলে! আপনার প্রতি অন্যদের ভালো লাগা দেখে ফেসবুকে সক্রিয় হওয়ার কথা ভাববেন?
আফরান নিশো: সোশ্যাল মিডিয়া এখন এমন হয়ে গেছে যে, মানুষ অনেক জাজমেন্টাল। ধরুন একটি কবিতা লিখলাম, সেটি যদি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা হয় তাহলে মানুষ ভাববে নিশো প্রেমে ব্যর্থ! এটি যে অন্যের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে আমার ভাবনায় আসতে পারে, সেটি না বুঝে সবাই মনে করবে এটাই আমার জীবন।  হয়তো আমার এমনিতেই একটি স্ট্যাটাস দিতে ইচ্ছে হলো, সেটি আমার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত না হলেও মানুষ সেটাই ধরে নেবে। আমার বাবা, মা কিংবা ভাইয়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে লিখলেও ধারণা সেই একই হবে। এসব কারণে লিখতে একটু ভয় পাই।

তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় সবসময় কোনো কাজ ছাড়াই একের পর এক রিল দেখতে থাকা আমার কাছে রোগের মতো মনে হয়। এখনকার মানুষের এটি বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমার চিন্তা হয়, আমিও যদি এতে আসক্ত হয়ে যাই তাহলে নিজের মতো বেঁচে থাকা ও ভাবনার আনন্দ ব্যাহত হবে। যদিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা দরকার। এটিও এক ধরনের স্মার্টনেস। আমার মনে হয়, কোনো সমস্যা কিংবা ঘটনা নিয়ে মতামত জ্ঞাপন করা শিল্পীসত্তার দায়িত্ব। অনেক সময় ভাবি– চুপ করে থাকবো কেনো, বরং কিছু কথা বলি। এখন বুঝতে পারছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার একটু সক্রিয় থাকা দরকার।

আফরান নিশো (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
আফরান নিশো: আমরা অনেক বড় একটি টিম অনেক দিন ভেবে ও খেটে একটি বিন্দুতে আসতে পেরেছি। সেজন্য এই সিনেমা করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের সবার ডেডিকেশন, সময় ও অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে এতে। কেউ যদি কোনো কাজে কষ্ট করে, পর্দায় সেই প্রতিফলন পাওয়া যায়। এটা বলে বোঝাতে হয় না। আমাদের কষ্ট যদি স্ক্রিনে ফুটে ওঠে তাহলেই পুরো ইউনিট সার্থক।

আমরা যদি সব মিলিয়ে এই সিনেমায় ১০০ জন কাজ করে থাকি, প্রত্যেকের ভাবনা ছিলো একই। আমরা এতো মানুষ মিলে একবিন্দুতে এসে একটা গল্প বলার চেষ্টা করেছি। সেই গল্প দেখে মানুষ নিজেদের সংযোগ ঘটাতে পারলে, তাদের জীবনের সঙ্গে এটি মিলে গেলে কিংবা তাদের ভাবালে আমরা সফল হবো। সিনেমাটির প্রত্যেক চরিত্রই এমন যে, দর্শকরা মনোযোগ দিয়ে সিনেমাটি দেখলে নিজেদের সঙ্গে মেলাতে পারবেন। অভিজাত শ্রেণি থেকে নিম্নবিত্তসহ সবশ্রেণির দর্শকের জীবনের সঙ্গে মিলে যাবে গল্পটা। কারণ এখানে অনেক স্তর আছে।

‘সুড়ঙ্গ’র দৃশ্যে আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: মাসুদ কেন সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে?
আফরান নিশো: সুড়ঙ্গটা কিন্তু রূপক। আমরা ফার্স্ট লুক ও পূর্বাভাসে দেখেছি মাটি খোঁড়া হচ্ছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো– মাসুদ কেন সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে, কোথায় খুঁড়ছে? এর আগে কি কেউ ওর মনের মধ্যে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ফেলেছে নাকি সুড়ঙ্গটা খোঁড়াই ছিলো আর মাসুদ সেটাতে নামে, এমন অনেক প্রশ্ন কিন্তু থাকছে। এমনও তো হতে পারে, মাসুদ বিপদে পড়েনি কিন্তু তার বন্ধু বিপদে ফেলে দিয়েছে। তাহলে সুড়ঙ্গটা কে করলো? মাসুদের বন্ধু? আক্ষরিক অর্থে শুধুই খোঁড়াখুঁড়ি নয় এই গল্প। এর ভেতরে অন্য একটি সুড়ঙ্গ আছে।

‘সুড়ঙ্গ’র ফার্স্ট লুক টিজারে আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র ভেতরে শুটিং নিশ্চয়ই চ্যালেঞ্জিং ছিলো?
আফরান নিশো: আগে থেকে জানতাম– আমাকে এমন একটি জায়গায় কাজ করতে হবে, যেখানে চাইলেই দাঁড়ানো যাবে না এবং নড়াচড়া করা আমার জন্য এতো সহজ হবে না। শুধু আমার বেলায় নয়, কারিগরি কাজে সম্পৃক্ত সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। যখন ঝড় আসে আমরা আগে থেকে জানতে পারি বলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি। যেমন করোনার শুরুর সময় লকডাউনের জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। ধীরে ধীরে আমরা মেনে নিতে পেরেছি, এজন্য পরে সমস্যাটা কম হয়েছে। আমরা কোনো ব্যাপারে মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জ নিলে অর্ধেক কাজ সহজ হয়ে যায়।

‘সুড়ঙ্গ’ একটা দীর্ঘ সময়ের কাজ। তাই আমাদের কী কী সমস্যা হতে পারে সেসব আমরা আগেই আলোচনা করেছি। শ্বাসকষ্ট হলে ব্যাকআপ লাইন কী, অক্সিজেনের জোগান নির্বিঘ্ন থাকবে কিনা, প্রাকৃতিক বাতাসের সম্ভাবনা আছে কিনা ইত্যাদি নিয়ে আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি ছিলো। আমরা জানতাম, শ্বাসকষ্টের মতো যেকোনো বিপর্যয় ঘটতে পারে। শুটিংয়ে গিয়ে দেখলাম– আমি না হয় অভিনেতা হিসেবে কাজ করছি, কিন্তু ইউনিটের লোকজন আরো বেশি কষ্ট করছে। সেই বিষয়টি আমাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরো সাহস জুগিয়েছে। তখন ভাবতাম আমার চেয়েও বেশি কষ্ট করছে অন্যরা। তবে একদিনে তিনটি দৃশ্যধারণের পরিকল্পনা থাকলেও ৫-১০ মিনিট পরপর সবাই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলো আর ‘সুড়ঙ্গ’টা বেশ বড় ছিলো। ফলে সময় বেশি যাওয়ায় একদিনে দুটির বেশি দৃশ্যের কাজ করতে পারিনি।

একটা বিষয় ঠিক করেছিলাম যে, আমার সমস্যা হলেও আওয়াজ খুব একটা দেবো না। কারণ আওয়াজ ছোট থাকলে সমস্যা ছড়ায় কম। আমার সমস্যা হলেও ইউনিটকে খুব একটা বুঝতে দিতাম না। তারাও একই মানসিকতা ধরে রেখে নিজেরা কিছু বলতো না। ‘সুড়ঙ্গ’তে কাজ করা আমার জন্য নতুন একটা অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে ভালো আর আমি ধন্য যে, এমন একট ইউনিট পেয়েছি।

‘সুড়ঙ্গ’র দৃশ্যে আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র শুটিংয়ের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা কোনটি?
আফরান নিশো: মনে রাখার মতো ঘটনা প্রতি পদে পদেই ঘটেছে। প্রথম ধাপের শুটিংয়ের একটা ব্যাপার বলি। আমরা তখন সুনামগঞ্জের নীলাদ্রি লেক এলাকায়। সেকানে থাকা-খাওয়ার খুবই কষ্ট। সহজে হোটেল পাওয়া যায় না। তাই আমরা যেভাবে কাজ করে অভ্যস্ত সেরকম পরিস্থিতি ছিলো না। আমি যেরকম ভেবেছিলাম– প্রতিদিন সবাই শুটিং শেষে রাতে আলোচনা করবো, আবার সকালে উঠে সবাই সবার চেহারা দেখবো। কিন্তু একেকজন একেক জায়গায় থাকায় সেসব হয়নি। শুটিংয়ের পর একটু আলোচনা সেরেই যে যার ঘরে চলে যেতাম। কারণ একটা রুম থেকে আরেকটি রুমের দূরত্ব ছিলো অনেক। ইউনিটের লোকজন, পরিচালক, অভিনেত্রী, অন্য অভিনয়শিল্পী, কারিগরি কাজে সম্পৃক্তসহ সবাইকে একেক জায়গায় থাকতে হয়েছে। তবে থাকার ব্যাপারে বেশ কষ্ট হলেও সবাই মুখ বন্ধ করে কাজটা করেছে। এমন সহযোগিতাপ্রবণ মনোভাব আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের কাছ থেকে সহায়তা করার মানসিকতা শিখেছি। আমার মনে হয়েছে, সবাই কষ্ট করার জন্য এক হতে পারার কোনো না কোনো কারণ আছে। নীলাদ্রিতে আমরা প্রায় ৪০ দিনের মতো শুটিং করেছি। হোটেল ভালোভাবে পেলে ২০-২২ দিনে কাজ শেষ হতো।

‘কলিজা আর জান’ গানের দৃশ্যে আফরান নিশো ও নুসরাত ফারিয়া (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘কলিজা আর জান’ গানে নাচের অভিজ্ঞতা কেমন হলো শুনি।
আফরান নিশো: গানটির কোরিওগ্রাফি করেছেন কলকাতার বাবা যাদব। তিনি নাচের মুদ্রা দেখানোর পর পর্যবেক্ষণ করেছেন আমি কীসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি কিংবা আমাকে দিয়ে কেমন নাচ হবে। এমন কোনো কঠিন মুদ্রা তিনি সাজাতে চাননি যেটি আমার জন্য কঠিন হবে কিংবা আমি মানিয়ে নিতে পারছি না। আমি নাচের ব্যাপারে অনেকটাই কাঁচা। তবুও আমি নেচেছি আর তিনি বলছিলেন, ‘হয়ে গেছে। শুধু স্পৃহার মাত্রা বাড়ালেই চলবে।’ গানটিতে আমার এতো বেশি নাচ নেই। নুসরাত ফারিয়ার নাচই বেশি। আমাকে তিনি শুধু বলেছেন, চরিত্রের মধ্যে থাকলেই চলবে।

নাচ-গানে ভরপুর বিষয়টা আমি তেমন পছন্দ করি না। আমার নাটকের ক্ষেত্রেও একটু বাস্তবিক ব্যাপার চাই বরাবরই, জানি না হয় কিনা। কিন্তু আমি চাই যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত অভিনয় করা যায়। সিনেমার ক্ষেত্রেও আমি মনে করি, যখন যে বিষয় প্রয়োজন তখনই সেটি থাকা উচিত। ‘সুড়ঙ্গ’ গল্পে আমার চরিত্রের নাম মাসুদ। শুটিংয়ে আমরা বলাবলি করতাম, মাসুদ তুমি ভালো হয়ে যাও! মাসুদ যখন স্বাভাবিক থাকে না কিংবা মদ্যপ হয়ে যায়, তখন বন্ধু তাকে আরাম-আয়েশের জন্য একটা জায়গায় নিয়ে যায়। গানটির কথায় বোঝানো হয়েছে, টাকাই মুখ্য। নারীর চেয়েও টাকার প্রতি মাসুদের নেশা বেশি। সেক্ষেত্রে আমি এটিকে আইটেম গান বলবো না! এটি গল্পের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে যৌক্তিক কারণেই জায়গা পেয়েছে।

‘সুড়ঙ্গ’তে আফরান নিশো ও তমা মির্জা (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ময়নাকে নিয়ে কিছু বলেন।
আফরান নিশো: ময়না হলো মাসুদের বউ। ময়নাকে নিয়ে বললে স্পয়লার হয়ে যাবে। বরং তমা মির্জাকে নিয়েই বলি। আমার মনে হয়নি তার বিপরীতে প্রথমবার কাজ করছি। সে হয়তো খুব বিনয়ী ও নম্র। তমা খুব ভালোভাবে পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে নিতে পারে।

চিত্রনায়িকারা কেমন হয় আমি জানি না, কারণ আগে কখনো বড় পর্দার নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করিনি। ছোট পর্দায় মেহজাবীন চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও তানজিন তিশার ডেডিকেশন আমার দেখা। সেদিক থেকে তমাকে আলাদা লাগেনি। আমার কাছে তাকে কাছের মানুষ মনে হয়েছে। সে অনেক মিশুক। একইসঙ্গে তার মধ্যে অভিনয়ের ক্ষুধা আছে।

সেজন্য অনেক সময় নিজের দৃশ্য না থাকলেও সে বসে দেখতো, পর্যবেক্ষণ করতো। একজন নায়িকার ক্ষেত্রে এগুলো অনেক ইতিবাচক বিষয়। তারকাসুলভ ব্যাপার তার মধ্যে দেখিনি। সে ভালো মানুষ এবং কাজের প্রতি অনেক ডেডিকেটেড। একবার না হলে বারবার দেওয়ার যে প্রবণতা তার মধ্যে দেখেছি, তাতে তার প্রতি আমার সম্মান ও আস্থা বেড়েছে। আমার কাছে মনে হয়, এমন সহশিল্পী সবার কাছে কাঙ্ক্ষিত।

(বাঁ থেকে) তমা মির্জা, শাহরিয়ার শাকিল, আফরান নিশো ও রায়হান রাফী (ছবি: কানন ফিল্মস)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: রায়হান রাফীর পরিচালনায় প্রথমবার কাজ করলেন। তার সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কী ভেবে?
আফরান নিশো: আমার কাজ হলো পারফরম্যান্স দিয়ে পরিচালককে খুশি করা। ছোট হোক বড় হোক, প্রত্যেক পরিচালককে তার মর্যাদা দেই। রাফী যখন শর্টফিল্ম বানাতো তখন থেকে তার কাজ আমার ভালো লাগে। সে অনেক তরুণ, প্রাণচঞ্চল ও আত্মবিশ্বাসী। রাফির আগের শর্টফিল্মগুলো দেখার সময় থেকে তার ব্যাপারে জানতাম। সে কোরআনে হাফেজ। একজন কোরআনে হাফেজ এভাবে কন্টেন্ট বানাচ্ছে দেখে অবাক হতাম। প্রত্যেকেরই নিজস্ব দর্শন থাকে। আমি মনে করি– যেকোনো মানুষ নিজের মধ্যে একজন শিল্পীকে খুঁজে পেতে পারে, নিজেকে শিল্পী দাবি করতে পারে।

রাফীর সঙ্গে আমার অনেকবার আলোচনা হয়েছে। এর আগেও একটি সিনেমায় কাজ করার কথা ছিলো আমাদের। কিন্তু সেটি পরে হয়নি। এরপর ‘সুড়ঙ্গ’র গল্পটা এলো। রাফী অনেক আগেই আমাকে বলে রেখেছে, এই কাজটি আমাকে নিয়ে করবে। একদিন হঠাৎ সে জানায়, এবার ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমাটি বানাবে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করি, গল্পটিতে সিনেমার সম্ভাবনা আছে কিনা। সে বললো– শতভাগ আছে। কোনো কিছুতে অপূর্ণতা থাকলে নতুন কিছু সংযোজন করা হবে। সে এই সিনেমা বড় পরিসরে করতে চেয়েছে, কারণ এটা ওর স্বপ্নের মতো। পরবর্তী সময়ে আমরা অনেকবার বসে গল্প, বাজেট, কারিগরি টিমসহ সব বিষয়ে আলোচনা করি। তখন থেকে সিনেমাটিতে বড় কিছু দেখতে পেয়েছি।

রাফী নিজে বলার পাশাপাশি অভিনয়শিল্পীদের মতামত শোনে, এটা তার অনেক ভালো একটি দিক। অনেক সময় আমার ভাবনা শেয়ার করতাম। সবার কথা শুনে দিন শেষে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হয়েছে, কারণ সে সিনেমাটির ক্যাপ্টেন। রাফী পরিশ্রমী ছেলে। সে দিনে দিনে পরিণত হয়েছে। আমার ক্যারিয়ারও কিন্তু একদিনে হয় নাই, আমিও অনেক সংগ্রাম করেছি।

‘সুড়ঙ্গ’তে আমার অনেক কিছুই প্রথম। রাফীর পরিচালনায় এটি আমার প্রথম কাজ। তমা মির্জার বিপরীতে প্রথমবার কাজ করেছি। চিত্রগ্রাহক সুমন সরকারের সঙ্গে যদিও আমার পরিচয় অনেক আগে, কিন্তু সে আর আমি প্রথমবার কাজ করেছি একই সিনেমায়। আলফা-আই স্টুডিওসের প্রযোজনায় আমার প্রথম কাজ এটি।

আলাপচারিতা

‘ট্রেন্ডিংয়ে থাকার চেয়ে দর্শকদের কমেন্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ি’

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

কেএম সোহাগ রানা (ছবি: আকিব রহমান)

এবারের ঈদুল আজহার অন্যতম জনপ্রিয় নাটক ‘চাঁদের হাট’। ইউটিউবে বেশ কিছুদিন ট্রেন্ডিংয়ে এক নম্বরে ছিলো এটি। এখনো ট্রেন্ডিংয়ে আছে এই নাটক। এটি লিখে ও পরিচালনা করে প্রশংসিত হয়েছেন তরুণ নির্মাতা কেএম সোহাগ রানা। এর আগেও বেশকিছু নাটক পরিচালনা করেছেন তিনি। নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিনেমাওয়ালার সঙ্গে প্রায় একযুগ ধরে আছেন সোহাগ রানা। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনে আর গল্প বুনে দিন কাটে তার। ‘চাঁদের হাট’ ও নিজের স্বপ্ন নিয়ে সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় সময় দিয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘চাঁদের হাট’ মুক্তির পরপরই ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে চলে আসে। এরপর টানা কয়েক সপ্তাহ এক নম্বরেই ছিলো। এখনো ট্রেন্ডিংয়ে আছে নাটকটি। এর অনুভূতি কেমন?
কে এম সোহাগ রানা: কোনো নাটক ট্রেন্ডিংয়ে থাকা মানে দর্শকদের মধ্যে সেটি নিয়ে চাহিদা তৈরি হয়েছে। তবে অনেক সময় দেখা যায় ভালো-মন্দ যেকোনো কাজই ট্রেন্ডিংয়ে চলে আসে। কনটেন্ট যদি ভালো হয় তাহলে সেটা টিকে থাকে, ভালো না হলে এক-দুই দিনেই হারিয়ে যায়। এজন্য আমি ট্রেন্ডিংয়ে থাকার চেয়ে দর্শকদের কমেন্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ি। এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও দর্শকের ভালো লাগা ও খারাপ লাগা বুঝতে পারি। ‘চাঁদের হাট’ দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন্ডিংয়ে আছে, পাশাপাশি দর্শকদের ইতিবাচক কমেন্ট দেখে বুঝেছি নাটকটি তাদের ভালো লেগেছে। আর মানুষের ভালোবাসা পেতে কার না ভালো লাগে! দর্শকের এসব প্রতিক্রিয়া আমাকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘চাঁদের হাট’ গল্পটি মাথায় এলো কীভাবে? নাটকটি কি কোনো বাস্তব ঘটনায় অনুপ্রাণিত?
সোহাগ রানা: একটি চরিত্রকে ধরে গল্পটি মাথায় এসেছে। সিনেমাওয়ালার অফিসে একদিন ভাইয়া (মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ) এসে আমাকে বলেন, ‘ঈদ সম্পর্কিত একটা গল্প বানাও।’ তখনো জানি না কী করবো। তখন ভাইয়া বলছিলেন, ‘গরুর হাটের দালাল চরিত্র নিয়ে কিছু একটা করতে পারো।’ তার ওই পরামর্শ থেকেই গল্পের শুরু। বাকি গল্পের সিংহভাগ অংশ বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ঘটনা থেকে নেওয়া।

কেএম সোহাগ রানা (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: অনেক দর্শক এই নাটকের শেষ দৃশ্যের প্রতি আবেগপ্রবণ হওয়ার কথা আলাদাভাবে বলেছেন। এর মাধ্যমে কী বার্তা দিতে চেয়েছেন?
সোহাগ রানা: মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসার বার্তা দিতে চেয়েছি। আমরা একে অপরকে ভালোবাসলে প্রত্যেকের জীবন হবে সুন্দর। মানুষের প্রতি মানুষের মায়া আর ভালোবাসা থাকলে পুরো পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে যায়। এখন সেটারই অভাব দেখি চারপাশে।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: দর্শকদের কাছ থেকে নিশ্চয়ই ভালো সাড়া পেয়েছেন। আপনার পরিবারের লোকজন কী বললেন?
সোহাগ রানা: আম্মু আমার কাজ নিয়মিত দেখেন। তিনি আমাকে তার মতো ভালো লাগা ও খারাপ লাগা প্রকাশ করেন। ‘চাঁদের হাট’ আম্মুর বেশ ভালো লেগেছে। আমার পরিবারের বাকিরা ও কাছের বন্ধুরা আলাদা করে তাদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছে।

‘চাঁদের হাট’ নাটকের শুটিংয়ে কেএম সোহাগ রানা (ছবি: আকিব রহমান)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: নাটকের শুটিং করার অভিজ্ঞতা বলুন। হাটে কাজ করার চ্যালেঞ্জ কী কী ছিলো?
সোহাগ রানা: আমরা যখন শুটিং করি তখন প্রচন্ড গরম ছিলো। গরমেই বস্তিতে ও গরুর হাটে শুটিং করেছি। ঈদুল আজহার আগে গাবতলী গরুর হাটে শুটিং করা মানে বুঝতেই পারছেন কী ধকল গেছে আমাদের ওপর। তবে আমাদের চিত্রগ্রাহক আদিত্য মনিরসহ পুরো টিম যথেষ্ট করিতকর্মা ও সুদক্ষ, ফলে আমরা সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ভালোভাবে শুটিং সেরে আসতে পেরেছি।

‘চাঁদের হাট’ নাটকের শুটিংয়ে অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কেএম সোহাগ রানা (ছবি: আকিব রহমান)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘চাঁদের হাট’ নাটকের অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে কিছু বলুন।
সোহাগ রানা: প্রত্যেকেই দারুণ, অসাধারণ ও সহায়তাপ্রবণ। তৌসিফ মাহবুব শুটিংয়ের অনেক আগে থেকেই আমার সঙ্গে গল্প নিয়ে একাধিকবার বসেছেন, সময় দিয়েছেন। তার মধ্যে ভালো কাজের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা দেখেছি। তিনি ভালো মনের মানুষ এবং নিঃসন্দেহে একজন দারুণ অভিনেতা। ডা. এজাজুল ইসলাম ও মনিরা মিঠুর অভিনয় ছোটবেলা থেকেই দেখছি, কী অসাধারণ অভিনয় করেন তারা! আর কেয়া পায়েল দিন দিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে আগেও অনেক কাজ করেছি। সেই হিসেবে নিজের পরিবারের মতো টিম নিয়ে বেশ আনন্দে শুটিং করেছি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: এর আগে কী কী নাটক পরিচালনা করে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?
সোহাগ রানা: গত ঈদুল ফিতরে ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’র জন্য দারুণ সাড়া পেয়েছি। এতে অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব ও তাসনিয়া ফারিণ। আমার পরিচালিত অন্যান্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘অ্যাওয়ার্ড’ (ফারহান আহমেদ জোভান, তাসনিয়া ফারিণ), ‘সাদা রুমাল’ (জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, তাসনিয়া ফারিণ), ‘বিষয়টা ভালোবাসার’ (তৌসিফ মাহবুব, তানজিম সাইয়ারা তটিনী), ‘হয়নি বলা কোনো কথা’ (তৌসিফ মাহবুব, সাদিয়া আয়মান), ‘এমন একটা তুমি চাই’ (তৌসিফ মাহবুব, সাদিয়া আয়মান), ‘ওসিডি’ (শামীম হাসান সরকার, সারিকা সাবাহ), ‘শনিবার’ (শামীম হাসান সরকার, তাসনিয়া ফারিণ), ‘প্লেয়ার্স’ (সামিরা খান মাহি), মিনি সিরিজ ‘দুষ্টু ছেলের দল’ ও ‘ঠান্ডা গরম’।

কে এম সোহাগ রানা (ছবি: আকিব রহমান)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের সহকারী হিসেবে নাটকে যুক্ত হয়েছেন আপনি। শুরুতে কী ভেবেছিলেন আজকের অবস্থানে আসতে পারবেন?
সোহাগ রানা: সত্যি বলতে, অবস্থান নিয়ে কখনো ভাবিনি। ভাইয়ার মতো এতো বড় মাপের একজন পরিচালকের সান্নিধ্যে থাকা ও তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। তার মতো একজন গুণী মানুষ আমাকে সবসময় ছোট ভাইয়ের মতো পাশে রেখে যেভাবে কাজ শিখিয়েছেন তাতে আমি ঋনী হয়ে থাকবো। তার কাছে এখনো শিখছি, সবই আমার প্রাপ্তি।

কেএম সোহাগ রানা (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: এখন নতুন কী কী কাজ করছেন?
সোহাগ রানা: ‘ম্যাজিক মোমেন্ট’ নামের নতুন একটি গল্পের শুটিংয়ে যাচ্ছি। এছাড়া পরবর্তী বেশ কিছু কাজের পরিকল্পনা করছি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনার স্বপ্ন বা লক্ষ্য কী?
সোহাগ রানা: বাংলা ভাষার কনটেন্ট ও বাংলা সিনেমা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করা। স্বপ্ন দেখি এমন একটা সময় আসবে, যেদিন বিশ্বব্যাপী আমার সিনেমা নিয়ে আলোচনা হবে!

পড়া চালিয়ে যান

আলাপচারিতা

বাংলাদেশের নাটক পশ্চিমবঙ্গে তুমুল জনপ্রিয়, আমরা নিয়মিত দেখি: দর্শনা বণিক

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

ঢাকার সিনেমা, মিউজিক ভিডিও এবং বিজ্ঞাপনের পর এবার নাটক ও ওয়েব ফিল্মে কাজ করলেন ভারতের বাঙালি অভিনেত্রী দর্শনা বণিক। ঈদুল আজহা উপলক্ষে আসছে তার অভিনীত প্রথম নাটক ‘ইতিবৃত্ত’ এবং ওয়েব ফিল্ম ‘কলকাতা ডায়রিস’। এসব কাজ, বাংলাদেশের অভিনেতা-অভিনেত্রী, নিজের নতুন সিনেমা ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে কলকাতা থেকে হোয়াটসঅ্যাপে সিনেমাওয়ালা নিউজের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘ওমর’ সিনেমার ‘ভাইরাল বেবি’ গানে নেচেছেন। কেমন সাড়া পেলেন?
দর্শনা বণিক: ‘ভাইরাল বেবি’র জন্য দারুণ সাড়া পেয়েছি। সিনেমা মুক্তির সময়ও তো বটেই, এখনো অনেকে দেখা হলে বলে গানটি খুবই ভালো লেগেছে তাদের। যেকোনো সিনেমা, গান কিংবা বিজ্ঞাপনে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকে। একইভাবে সবার মন্তব্য হলো– কোরিওগ্রাফি, আমার সহ-নৃত্যশিল্পী, গান, লাইটিং, চিত্রগ্রহণ, পরিচালনাসহ সব মিলিয়ে ‘ভাইরাল বেবি’ দারুণ হয়েছে।

‘ওমর’ সিনেমায় দর্শনা বণিক (ছবি: মাস্টার কমিউনিকেশন্স)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঢাকায় সিনেমার পর এবার নাটকে অভিনয় করলেন…
দর্শনা বণিক: সত্যি বলতে, নাটকে অভিনয়ের ইচ্ছে ছিলো অনেকদিনের। যখন থেকে নাটক দেখতে ও জানতে শুরু করেছি, তখন থেকে আগ্রহ জন্মায় এবং ভেবেছি নিজে একদিন এমন কাজ করবো। বাংলাদেশের নাটকগুলো পশ্চিমবঙ্গেও তুমুল জনপ্রিয়। আমরাও ঢাকার নাটক দেখি, খোঁজ রাখি। আমার বাবার ইচ্ছে ছিল, একটা-দুটো নাটকে অভিনয় করি। সেই ইচ্ছে থেকেই ‘ইতিবৃত্ত’তে কাজ করা। এর আগে এক-দু’বার অন্যান্য নাটকের ব্যাপারে যোগাযোগ করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু সেগুলো করা হয়ে ওঠেনি। ‘ইতিবৃত্ত’তে শেষ পর্যন্ত কাজ করা হলো।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনায় ‘ইতিবৃত্ত’তে আপনার চরিত্রটি কেমন?
দর্শনা বণিক: আমার চরিত্রটি বর্তমান সময়ের আদর্শ প্রেমিকার। একটি সুন্দর প্রেমের গল্প আছে এতে। এক তরুণের ওপর মাদকাসক্তির ক্ষতিকর প্রভাব এবং তার প্রেমের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে কাহিনিতে। এ নাটকে অভিনয় করে আমার খুবই ভালো লেগেছে।

‘ইতিবৃত্ত’ নাটকে দর্শনা বণিক ও ইয়াশ রোহান (ছবি: এসবিই)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘ইতিবৃত্ত’ নাটকে আপনার সহশিল্পী ইয়াশ রোহাহানে কী কী গুণ চোখে পড়েছে?
দর্শনা বণিক: ইয়াশ রোহানের সঙ্গে খুব বেশি আড্ডা হয়নি আমার। কারণ অনেক দৃশ্য থাকায় আমাদের সারাক্ষণই শুটিংয়ে মনোযোগ দিতে হয়েছে। এর মধ্যে যতটুকু দেখেছি তাতে বলতে পারি, ইয়াশ খুব আন্তরিক ও ভালো মনের মানুষ। অভিনেতা হিসেবে তিনি দারুণ, নিজের চরিত্র ও কাজ নিয়ে সিরিয়াস থাকেন।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঢাকায় শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
দর্শনা বণিক: মোট পাঁচদিনের মতো শুটিং হয়েছে। এরমধ্যে আমার কাজ ছিলো চার দিনের। ঢাকার শহরের বিভিন্ন প্রান্তে শুটিং করেছি আমরা। এর আগে বাংলাদেশে যেসব সিনেমায় অভিনয় করেছি সেগুলোর শুটিং ঢাকার পাশাপাশি অন্যান্য জেলায় হয়েছে। এ কারণে আগের কোনোবার ঢাকাকে ভালোভাবে দেখার সুযোগ হয়নি। ‘ইতিবৃত্ত’র শুটিংয়ে গিয়ে এবার সেই সুযোগ পেয়েছি। সত্যি বলছি, আমি ঢাকা শহরের প্রেমে পড়েছি! আমার বাবার বাড়ির সবাই ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন। সেই সুবাদে ঢাকার ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছিলাম। শহরটা বড়সড়। অবশেষে ঢাকা শহর মনের মতো করে দেখতে পেলাম। ঢাকার রাস্তাঘাটের ব্যস্ততা কলকাতা শহরের মতোই অনেকটা। ঢাকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। এর সঙ্গে বর্তমান সময়ের ব্যস্ততা মিলিয়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। ঢাকায় অনেক পুরনো ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। ইউরোপীয় অনেক শহরে এমনটা চোখে পড়ে। ঢাকাকে ভালোবেসে ফেলেছি!

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আগামীতে আবার প্রস্তাব পেলে ঢাকার নাটকে কাজ করবেন?
দর্শনা বণিক: দেখুন, আমি সিনেমার মানুষ। ভারতে বিভিন্ন ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছি। তবে কোনো কারণে ছোট পর্দায় আমার কাজ করা হয়ে ওঠেনি। সবসময় সিনেমা কিংবা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আমাকে দেখেছে দর্শকরা। ২০১৮ সালে যখন থেকে অভিনয় করি, তখন ওয়েব সিরিজ সবে জনপ্রিয় হচ্ছে। আগামীতে সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ আমার মূল লক্ষ্য থাকবে। তবে ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে নাটকে কাজ না করার তো কারণ নেই।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঢাকার খাবার নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন, কোন খাবার বেশি উপভোগ করেন?
দর্শনা বণিক: ঢাকার খাবারের বৈচিত্র্য অনেক। কলকাতার জামাই ষষ্ঠীর প্রসঙ্গ টেনে যদি বলতে হয় তাহলে তার থেকেও বেশি আইটেম থাকে ঢাকায় খাবারের টেবিলে। আর আপনারা এতো আতিথেয়তা করে খাওয়ান যে খেতেই হয়! বাংলাদেশের চুইঝাল মাটন আমার ভীষণ পছন্দের।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঢাকার অভিনেতাদের মধ্যে কার কার কাজ ভালো লাগে? তাদের মধ্যে কোন কোন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে?
দর্শনা বণিক: বাংলাদেশের নাটক দেখি। ঢাকার অভিনেতাদের মধ্যে অনেকের অভিনয় ভালো লাগে। নাম বললে তো অনেকের কথা বলতে হয়, হয়তো এক-দুই জনের নাম ভুলেও যেতে পারি! সেজন্য আলাদাভাবে কারো নাম নিচ্ছি না।

বাংলাদেশের নাটক ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠিত প্রত্যেকের কাজ দেখি, খোঁজ রাখি। তাদের অভিনয় খুবই ভালো লাগে। সিনেমায় তো অবশ্যই আবার শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে। এছাড়া সিয়াম আহমেদ, শরিফুল রাজের বিপরীতেও অভিনয় করতে চাই। ছোট পর্দার কথা বললে চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, অপূর্ব ও আফরান নিশোর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে হয়। নিশো সম্ভবত এখন আর নাটক করছেন না, তাই তার সঙ্গে সিনেমাতেই কাজ করতে চাইবো। ছোট পর্দার অভিনেতাদের মধ্যে ফারহান আহমেদ জোভান আমার খুব পছন্দের। তার সঙ্গেও কাজ করার খুব ইচ্ছে হয়।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশের কয়েকজন অভিনেত্রী পশ্চিমবঙ্গে কাজ করেছেন, এখনও করছেন। এক্ষেত্রে জয়া আহসান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, তাসনিয়া ফারিণের কথা বলা যায়। ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসেও তাদের জয়জয়কার দেখা গেছে। তাদের নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
দর্শনা বণিক: জয়া আহসান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও তাসনিয়া ফারিণ প্রত্যেকেই গুণী ও ভালো অভিনেত্রী। তাদের কাজ অবশ্যই দেখি। তারা যেভাবে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, সঠিকভাবে সব বহাল রেখেছেন, নিজেদের পরিণত করছেন, আরো ভালো ভালো কাজ বেছে নিচ্ছেন; সেসব অবশ্যই শেখার বিষয়।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঈদুল আজহায় তো আপনাকে ঢাকার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাবে। বঙ্গ’তে মুক্তি পাবে ‘কলকাতা ডায়রিস’। ওয়েব ফিল্মটির গল্প শুনি।
দর্শনা বণিক: এখানে আমার চরিত্রের নাম শর্মী। সে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। সফল উদ্যোক্তা অনামিকা সাহার অফিসে চাকরি করে শর্মী। একদিন ঢাকা থেকে কলকাতায় যাওয়া স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান পিকের সঙ্গে অনামিকাকে পরিচয় করিয়ে দেয় শর্মী। এরপর তৈরি হয় জটিলতা। অনামিকা সাহার ভূমিকায় শ্রীলেখা মিত্র ও পিকে চরিত্রে আছেন বাংলাদেশের অভিনেতা শিফাত আমিন। ‘কলকাতা ডায়রিস’ পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের রাশেদ রাহা। গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন বাংলাদেশের আরেক তরুণ খায়রুল বাসার নির্ঝর। কলকাতার নিউটাউন ও রাজারহাটে এর শুটিং হয়েছে।

‘কলকাতা ডায়রিস’ ওয়েব ফিল্মের পোস্টার (ছবি: বিগ আর এন্টারটেনমেন্ট প্রোডাকশন)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশে আপনার ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। এর প্রিমিয়ারে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন। ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের বিপরীতে ‘অন্তরাত্মা’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এটি মুক্তির ব্যাপারে কিছু জানেন?
দর্শনা বণিক: যতোদূর জানি ‘অন্তরাত্মা’ মুক্তি পাওয়ার কথা চলতি বছরেই। তবে সেটা কবে নির্দিষ্ট করে সত্যি জানি না। মূলত প্রযোজকের ওপর নির্ভর করছে মুক্তির ব্যাপার। সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত আমরা প্রত্যেকে বড় পর্দায় আসার অপেক্ষা করছি। দেখা যাক!

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সংগীতশিল্পী ইমরান মাহমুদুলের সঙ্গে দুটি মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়েছেন। এমন কাজের প্রস্তাব কি আর পেয়েছেন?
দর্শনা বণিক: ইমরানের ‘মেঘের ডানা’ ও ‘তোর নামের ইচ্ছেরা’ গানের মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়েছি। এরপর এক-দুটো কাজের প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু কোনও কারণে সেগুলো করা হয়নি। তবে ঢাকায় নিয়মিতই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শুট হতে থাকে আমার। গত ঈদেও বিজ্ঞাপনের কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও করতে চাই।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ভারতের বাংলা সিনেমার পাশাপাশি বলিউডে ও দক্ষিণী সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বাংলা, হিন্দি কিংবা অন্য ভাষার নতুন সিনেমার খবর কী?
দর্শনা বণিক: নতুন আরেকটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নাম লিখিয়েছি। সেটি হলো ভোজপুরি। সেখান থেকে আমার নতুন একটি সিনেমা আসবে। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতেও আমার কাজ চলছে। কয়েকদিন আগে ডিজনি হটস্টারে আমার অভিনীত ‘সেভ দ্য টাইগার্স টু’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। বলিউডের তিনটি হিন্দি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: রান্না কি করেন? সৌরভ দাসের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে কথাবার্তা হয়?
দর্শনা বণিক: একদমই রান্না করি না। শখের বশে মাঝে মধ্যে কিছু বানাই, তবে সেটাকে রান্না বলা যায় না। সৌরভ বাংলাদেশের কাজের খোঁজখবর রাখে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সংগীতশিল্পীরা নতুন কী বের করলো দেখে। আমরা গাড়িতে সবসময় কোক স্টুডিও বাংলার গান শুনি, বাংলাদেশের গান শুনি। সৌরভেরও বাংলাদেশে কাজ করা ও ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে আছে।

পড়া চালিয়ে যান

আলাপচারিতা

বাংলাদেশি হয়ে কলকাতার সিনেমা পরিচালনা করতে পারা আমার জন্য সম্মানের: সঞ্জয় সমদ্দার

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: অপূর্ব ফটোগ্রাফি)

ওপার বাংলার সুপারস্টার জিতের অভিনয় ও প্রযোজনায় ‘মানুষ’ মুক্তি পেয়েছে গত ২৪ নভেম্বর। এর মাধ্যমে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করলেন পরিচালক সঞ্জয় সমদ্দার। তিনিই সিনেমার গল্প লিখেছেন। এখন ওপার বাংলার দর্শকদের প্রশংসায় ভাসছেন এই নির্মাতা। তবে মেয়ের অসুস্থতার কারণে দেশে ফিরে এসেছেন। সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় ১০ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: দেশে চলেন এলেন যে?
সঞ্জয় সমদ্দার: কলকাতায় একটি প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু আমার মেয়ে দিজুর অসুস্থতার কথা জানানোর পর জিৎ দাদা বলেন, ‘আগে সন্তানের খেয়াল রাখো।’ তিনি সবসময় পরিবারকে প্রাধান্য দেন। এটা তার বড় একটা গুণ।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সিনেমা মুক্তির পর জিৎ কী বললেন?
সঞ্জয় সমদ্দার: জিৎ দাদা অনেক খুশি। তিনি লাইভে আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। আমার সঙ্গে আবার কাজ করার ইচ্ছের কথাও জানিয়েছেন। তার মুখে এটা শোনার পর ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। একজন সুপারস্টারের মুখে আলাদাভাবে আমার কথা শুনে খুব ভালো লেগেছে।

সঞ্জয় সমদ্দার ও জিৎ (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: জিতের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা নিশ্চয়ই ভোলেননি?
সঞ্জয় সমদ্দার: জিৎ দাদার সঙ্গে সেই সাক্ষাৎ আজীবন মনে থাকবে। কলকাতায় গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্টের গোপাল মাদনানি দাদার রুমে বসলাম। জিৎ দাদা লাঞ্চ করে এলেন। তিনি একজন প্রাণবন্ত মানুষ। তার একটা পরিমণ্ডল আছে, যেটা ইতিবাচকভাবে ছড়িয়ে পড়ে অর্থাৎ মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়। তার যে দিকটি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো মানুষকে তিনি সম্মান করেন। সেদিন প্রথমেই জানতে চাইলেন, ‘কী খাবেন?’ একটা কিছু হলেই চলবে বললাম। তিনি বললেন, ‘খাওয়া হলো স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপার, যেকোনো একটা কিছু হলে কীভাবে হবে?’ এরপর যোগ করলেন, ‘ভাত তো খাবেন, সঙ্গে কী রাখবো আর?’ তিনি ভেটকি মাছের পাতুরি অর্ডার দিলেন। খাওয়া তো মুখ্য নয়, আন্তরিকতাই আসল। যে সময়ে পৌঁছেছিলাম তখন লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছিলো। তিনি এটি খেয়াল রেখেছিলেন। মানুষ হিসেবে তিনি সত্যিই দারুণ।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশের পরিচালক হলেও নিজের প্রথম সিনেমা বানালেন টালিগঞ্জে, তার ওপর এতে অভিনয় ও প্রযোজনা করেছেন ওপার বাংলার সুপারস্টার জিৎ। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো না ব্যাপারটা?
সঞ্জয় সমদ্দার: স্বপ্নের চেয়েও বড় দিক হলো, এটা আমার জন্য সম্মানের। আমি খুব সৌভাগ্যবান যে, এমন একটি সুযোগ পেয়েছি এবং জিৎ দাদা আমাকে ডেকেছেন। এটি সত্যিই আনন্দের। নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে একটি পরিচ্ছন্ন ও ভালো সিনেমা নির্মাণের চেষ্টা করেছি। আমার ভাবনায় ছিলো– যদি ভালো কাজ করতে পারি তাহলে অন্য পরিচালকেরা অনুপ্রাণিত হবেন। আমার সমসাময়িক কিংবা পরে যারা নির্মাণে আসবেন তাদের মনে বিশ্বাস জন্মাবে যে, পরিচালকদের কোনো সীমান্ত থাকে না। তারা সুযোগ পেলে অন্যান্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজ করতে পারবেন।

‘মানুষ’ সিনেমার দৃশ্যে জিৎ ও অয়ন্যা (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘মানুষ’ গল্পটি মাথায় এলো কীভাবে, বাস্তবের কারো জীবনে কি এটি অনুপ্রাণিত?
সঞ্জয় সমদ্দার: করোনাকালে গল্পটি আমার মাথায় আসে। তখন আমরা একে অপরের সঙ্গে ফোনেই আলাপ করতাম বেশি। সেই সময় অনেকে দেখা হলেই বলতেন, এ যাত্রায় যদি কোনোভাবে বেঁচে যাই তাহলেই শুকরিয়া। তখন বুঝলাম, মানুষের জন্য বেঁচে থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জীবনে অনেক কিছু পেতে চাই, অনেক কিছু করতে চাই; কিন্তু কখনও কখনও মনে হয় জীবনটাই তো অনিশ্চিত! ফলে আমার মনে হলো, আমাদের জীবন দর্শন কিংবা আমরা যা যা ভাবি, সেসবের কোনো কিছুই মূলত আবশ্যকীয় নয়। পরিস্থিতির সঙ্গে সবই পাল্টে যায়। সেখান থেকেই মূলত ‘মানুষ’ গল্পটি মাথায় আসে। এতে বাবা-মেয়ের আবেগঘন কিছু মুহূর্ত আছে। এগুলোর শুটিং করতে গিয়ে আমার মেয়ে দিজুকে অনেক মিস করেছি। ওর বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। সিনেমাটির শিশুশিল্পী অয়ন্যাকে দেখলে আমার মেয়ের কথা মনে পড়তো।

‘মানুষ’ সিনেমার পোস্টারে জিৎ (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সিনেমাটির টাইটেল গান আপনারই লেখা। গল্প লেখার সময় কি এই ভাবনা ছিলো?
সঞ্জয় সমদ্দার: না। সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য তৈরি করে শুটিং শুরুর পর মনে হতে থাকে, সিনেমার মেজাজ তৈরির জন্য একটি গান দরকার। তখন গানটির ভাবনা মাথায় আসে। এটি সিনেমার মেজাজ তৈরির জন্য জুতসই লেগেছে। ‘আজকে যা ঠিক কালকে তা ভুল/মানুষ নিয়তির হাতের পুতুল’ লাইন দুটির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছি, আমরা হয়তো অনেকেই অনেক কিছু ভাবলেও নিয়তিকে কখনো এড়াতে পারি না।

বিদ্যা সিনহা মিম ও সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: যৌথ প্রযোজনা ছাড়া ভারতীয় সিনেমায় বাংলাদেশের পরিচালক ও অভিনেত্রী সচরাচর দেখা যায় না। ‘মানুষ’ সেদিক থেকে ব্যতিক্রম। সিনেমাটিতে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসিপি) মন্দিরা চরিত্রে বিদ্যা সিনহা মিমকে নির্বাচনের কথা বলুন।
সঞ্জয় সমদ্দার: যখন অভিনয়শিল্পী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো তখন জিৎ দাদা উল্লেখ করেন, দেশীয় পুলিশ অফিসারের মতো দেখতে এমন একজনকে লাগবে। তিনি বলেন, ‘মিমের উচ্চতা ভালো, তার সঙ্গে আমার কাজও হয়েছে আগে।’ তখনই মিমকে চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৮ সালে জিৎ দাদার প্রযোজনায় ‘সুলতান-দ্য সেভিয়ার’ সিনেমায় অভিনয় করেছে মিম। তাকে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে বললাম, গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র আছে, যদি তুমি অভিনয় করতে চাও। মিম বললো, ‘দাদা ঠিক আছে, তাছাড়া আপনার সঙ্গে তো আমার আগেও কাজ হয়েছে।’ আমার ‘মনের মানুষ’ নাটকে ছিলো মিম। মন্দিরা চরিত্রে তাকে বেশ মানিয়েছে। মিম থাকায় খুশি হয়ে গিয়েছিলাম এজন্য যে, আমার দেশের একজন অভিনয়শিল্পীকে পাচ্ছি। আমার দেশ থেকে আমি একাই গিয়েছিলাম। যেদিন মিমের সঙ্গে শুটিং করলাম মনে হলো, দেশের একটা মানুষ অন্তত আছে!’

‘মানুষ’ সিনেমার দৃশ্যে জিৎ ও সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: পশ্চিমবঙ্গের ১১৮টি সিনেমাহলে মুক্তি পেলো ‘মানুষ’। কেমন সাড়া পেলেন?
সঞ্জয় সমদ্দার: সিঙ্গেল স্ক্রিনের সিনেমাহল থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছি। বিভিন্ন সিনেমাহল ঘুরে দেখেছি, সংলাপের মাঝে মাঝে দর্শকেরা হাততালি দিচ্ছেন। সিনেমা উপভোগ শেষে পরিচালকের প্রশংসা করেছেন অনেকে। এটি একটি পারিবারিক সিনেমা, তাই পরিবারের সঙ্গে বসে বিভিন্ন বয়সী দর্শক উপভোগ করেছেন। ৬৫-৭০ বয়সী দম্পতিরাও সিনেমাহলে ‘মানুষ’ দেখেছেন। যেমনটা চেয়েছিলাম তেমনই হয়েছে।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশে এখন ভারতীয় সিনেমা মুক্তিতে বাধা নেই। তাছাড়া ‘মানুষ’ বাংলা সিনেমা। বাংলাদেশে কি এটি মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে?
সঞ্জয় সমদ্দার: ‘মানুষ’ বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা এখনো চলছে। যদি দেশে মুক্তি পায় তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না। সিনেমাটি দেখার পর দর্শকেরা ভালো-মন্দ দুটি কথা বলবেন, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। অপেক্ষায় আছি এখনো। তবে নিশ্চিতভাবে কিছু জানি না।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: নূর)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বেশকিছু টেলিভিশন নাটক পরিচালনা করেছেন আপনি। এরপর ওয়েব সিরিজ আর ওয়েব ফিল্ম বানিয়েছেন। এবার সিনেমা নির্মাণ করলেন। পরবর্তী লক্ষ্য কী?
সঞ্জয় সমদ্দার: নতুন অনেক কাজের কথাবার্তা চলছে। এখন সিনেমা আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই থাকতে চাই। সিনেমা অনেক বড় বিষয়। দুম করে বলে দিলাম আর হয়ে গেলো– বিষয়টি মোটেও তেমন না। তবে আগামী মাসের (ডিসেম্বর) মধ্যে নতুন কিছু একটার ঘোষণা দেওয়ার ইচ্ছে আছে। আমার পাণ্ডুলিপিগুলো প্রস্তুত আছে। সবসময় বিশ্বাস করি, কাজের মধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য একটা কাজ শেষ হওয়ার পর যতো দ্রুত সম্ভব আরেকটি কাজে যুক্ত হতে চাই।

পড়া চালিয়ে যান
Advertisement

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ