Connect with us

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

কান ২০২৩: ক্রিটিকস উইকের সর্বোচ্চ পুরস্কার জিতলেন মালয়েশিয়ান নারী

সিনেমাওয়ালা ডেস্ক

Published

on

‘টাইগার স্ট্রাইপস’ সিনেমার দৃশ্য (ছবি: গোস্ট গার্ল পিকচার্স)

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্যারালাল শাখা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইকের (সিমেন দ্যু লা ক্রিটিক) ৬২তম আসরের গ্র্যান্ড প্রাইজ জিতলো মালয়েশিয়ান নারী আমান্ডা নেল ইউ পরিচালিত ‘টাইগার স্ট্রাইপস’। গতকাল (২৪ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

‘টাইগার স্ট্রাইপস’ সিনেমার গল্প ১২ বছর বয়সী বালিকা জাফফানকে কেন্দ্র করে। মালয়েশিয়ার ছোট একটি গ্রামে থাকে সে। পূর্ণ বয়ঃসন্ধিতে মেয়েটি বুঝতে পারে, তার শরীর উদ্বেগজনক হারে পরিবর্তন হচ্ছে। এদিকে স্কুলে মৃগীরোগের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার কারণে বন্ধুরা তাকে এড়িয়ে চলে। মেয়েদের পিছু নেওয়া সেই রাক্ষসকে তাড়াতে এগিয়ে আসেন একজন চিকিৎসক।

১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের ‘টাইগার স্ট্রাইপস’ হলো কৈশোরের রূপান্তর এবং আনন্দময় মুক্তির গল্প। তারুণ্যের নারীত্বকে উদযাপন করা হয়েছে এতে।

পরিচালক আমান্ডা নেল ইউ জানান, জাফফান চরিত্রের জন্য করোনাকালে দুই শতাধিক মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। সামাজিক দূরত্বের কারণে স্কুলে যেতে না পেরে টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে মেয়েদের খুঁজে পান তিনি।

জাফফান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাফরিন জাইরিজাল। তার সঙ্গে সবার প্রথমে দেখা করেন আমান্ডা নেল ইউ। প্রথম দিন থেকেই তার মনে হয়েছে, মেয়েটির ভেতরে থাকা কাঙ্ক্ষিত আগুন জ্বলে উঠতে প্রস্তুত।

আমান্ডা নেল ইউ (ছবি: সিমেন দ্যু লা ক্রিটিক)

আমান্ডা নেল ইউ বলেন, ‘শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্কে রূপান্তরের সময় আমরা সকলেই শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাই। আমরা যাকে বয়ঃসন্ধি বলি, সেই কষ্টকর সময়ের কথা ভেবেই সিনেমাটির ধারণা পেয়েছি। আমার কাছে বয়ঃসন্ধির অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো লাগতো না। মনে পড়ে, আমার শরীরে নতুন কিছু আবিষ্কার করে বাজেভাবে চেয়েছিলাম সেগুলো দূর হয়ে যাক। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, মানুষ এসব পরিবর্তনে নজর দিলে এবং আমার শরীর নিয়ে কথা বললে খুব খারাপ লাগতো। নিজেকে তখন অস্বস্তিকর, অনিরাপদ এবং মাঝে মধ্যে বীভৎস মনে হতো। আমি মনে করি, মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে লিঙ্গ সমতা নিয়ে এখনও সমস্যা রয়ে গেছে। যদিও এই গল্প আমার দেশের, তবে নারীদের বিষয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে একটি বিশাল সার্বজনীন সমস্যা বিদ্যমান।’

আমান্ডা নেল ইউ ১৯৮৫ সালের ২৬ নভেম্বর কুয়ালালামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। লন্ডন ফিল্ম স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। তার শর্টফিল্ম “ইট’স ইজিয়ার টু রেইজ ক্যাটেল”-এর প্রিমিয়ার হয় ২০১৭ সালে ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রতিযোগিতা শাখায়। এরপর আন্তর্জাতিক শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ক্লেরমোঁ-ফেরোতে স্পেশাল মেনশন পায় এটি। বার্লিনাল ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস এবং লোকার্নো ফিল্মমেকার অ্যাকাডেমির একজন সাবেক শিক্ষার্থী তিনি। ‘টাইগার স্ট্রাইপস’ তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা।

আমান্ডা নেল ইউ (ছবি: সিমেন দ্যু লা ক্রিটিক)

মালয়েশিয়ান এই নির্মাতা যোগ করেন, ‘সিনেমার প্রতি আমার আবেগের শুরুটা ছিলো হররকেন্দ্রিক। সত্যিই এই ধারা ভালো লাগে আমার। কারণ এর মাধ্যমে প্রাণচাঞ্চল্য ও আমার রসাত্মক দিকটি প্রকাশ করতে পারি। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্কৃতির অতিপ্রাকৃত বিশ্বাসের প্রতি আমি কৌতূহলী। এসব লোকগল্প আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত।’

গত ১৭ মে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে, বিকেল ৫টায় ও রাত ১০টা ৩০ মিনিটে মিরামার থিয়েটারে এবং ১৮ মে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে মিরামার থিয়েটারে, বিকেল ৩টায় স্টুডিও থার্টিন থিয়েটারে এবং রাত ৯টা ৩০ মিনিটে আলেকজান্ডার থ্রি থিয়েটারে ‘টাইগার স্ট্রাইপস’ সিনেমার প্রদর্শনী হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইকের পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা শাখার বিচারকরা (ছবি: সিমেন দ্যু লা ক্রিটিক)

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইকে জুরি সভাপতি ছিলেন ফরাসি নারী অড্রে ডিওয়ান। তার নেতৃত্বে বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন ভারতীয় চলচ্চিত্র কিউরেটর, সমালোচক ও নির্মাতা মিনাক্ষী শেড্ডা, জার্মান অভিনেতা ফ্রাঞ্জ রোগোস্কি, পর্তুগিজ চিত্রগ্রাহক রুই পোকাস এবং সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রোগ্রাম পরিচালক কিম ইউতানি।

গত ১৭ মে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ৭৬তম আসরের দ্বিতীয় দিন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইকের পর্দা ওঠে। আজ (২৫ মে) প্যারালাল শাখাটির সমাপনী দিনে পুরস্কৃত সিনেমাগুলোর প্রদর্শনী হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইকে নির্বাচিত পূর্ণদৈর্ঘ্য ও শর্টফিল্মের পরিচালকরা (ছবি: সিমেন দ্যু লা ক্রিটিক)

নির্বাচিত সিনেমার মধ্যে আরো ছিলো বেলজিয়ান নারী পালোমা সারমন-দাই পরিচালিত “ইট’স রেইনিং ইন দ্য হাউস”, সার্বিয়ার ভ্লাদিমির পেরিসিচের ‘লস্ট কান্ট্রি’, জর্ডানের আমজাদ আল রশীদের ‘ইনশাল্লাহ অ্যা বয়’, ফরাসি নারী ইরিস ক্যালটেনব্যাক পরিচালিত ‘দ্য র‌্যাপচার’, ব্রাজিলিয়ান নারী লিলা হালার ‘পাওয়ার অ্যালি’ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার জেসন ইউ পরিচালিত ‘স্লিপিং’।

শর্টফিল্ম প্রতিযোগিতায় স্থান পেয়েছে ফ্রান্সের ন্যঁ ল্যাবোর-দ্যুজুরদা পরিচালিত ‘বোলেরো’, মেক্সিকোর আরমান্দো নাভারোর ‘আর্খি’, স্পেনের ইরাতি গোরোস্তিদি আগিরেৎজে পরিচালিত ‘কোন্তাদোরেস’, পর্তুগিজ নারী ইনিস তেশেইরার ‘শাইনিং বডিস’, মিসরের মুরাদ মোস্তফার ‘আই প্রমিজ ইউ প্যারাডাইস’, পোল্যান্ডের ডেভিড বদজাকের ‘দ্য ক্রোকোডাইল’, ফরাসি নারী ক্লেমোঁন্স বুশোঁরো পরিচালিত ‘দ্য পারপল সিজন’, ক্রোয়েশিয়ান নারী আন্দ্রেয়া স্লাভিচেকের ‘দ্য রিয়েল ট্রুথ অ্যাবাউট দ্য ফাইট’, ইসরায়েলি নারী র‌্যাচেল গাটগার্টসের ‘ভিয়া দোলোরোসা’ (ফ্রান্স) এবং চীনের হুই শু পরিচালিত ‘ওয়াকিং উইথ হার ইন্টু দ্য নাইট’।

কান উৎসবে প্যারালাল শাখা হিসেবে ১৯৬২ সালে যুক্ত হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইক। ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচকদের চালু করা এই শাখায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পরিচালকদের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সিনেমা নির্বাচিত হয়ে থাকে। এগুলো কান উৎসব আয়োজকদের স্বীকৃতি পায়। যেমন ক্যামেরা দ’র পুরস্কারের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইকে নির্বাচিত নবাগত পরিচালককে মনোনয়নে রাখা হয়। এছাড়া এই শাখাকে পুরস্কারের বেলায় বিবেচনায় রাখে ফিল্ম সমালোচকদের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন ফিপরেসি।

‘টাইগার স্ট্রাইপস’ সিনেমার দৃশ্য (ছবি: গোস্ট গার্ল পিকচার্স)

৬২তম ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইকের বিজয়ী তালিকা
গ্র্যান্ড প্রাইজ (গ্রাঁ প্রিঁ): টাইগার স্ট্রাইপস (আমান্ডা নেল ইউ, মালয়েশিয়া)
ফ্রেঞ্চ টাচ জুরি প্রাইজ: ইট’স রেইনিং ইন দ্য হাউস (পালোমা সারমন-দাই, বেলজিয়াম)
লাইৎজ সিনে ডিসকোভারি প্রাইজ (শর্ট ফিল্ম): বোলেরো (ন্যঁ ল্যাবোর-দ্যুজুরদা, ফ্রান্স)
লুই রোদ্যুরের ফাউন্ডেশন রাইজিং স্টার অ্যাওয়ার্ড: জোভান গিনিচ (লস্ট কান্ট্রি, সার্বিয়া)
গ্যান ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড ফর ডিস্ট্রিবিউশন: ইনশাল্লাহ অ্যা বয় (আমজাদ আল রশীদ, জর্ডান)
ক্যানাল প্লাস অ্যাওয়ার্ড (শর্ট ফিল্ম): বোলেরো (ন্যঁ ল্যাবোর-দ্যুজুরদা, ফ্রান্স)
এসএসিডি অ্যাওয়ার্ড: দ্য র‌্যাপচার (ইরিস ক্যালটেনব্যাক, ফ্রান্স)

Advertisement

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ