Connect with us

আলাপচারিতা

‘ওটিটি হলো নিজস্ব পছন্দ, সিনেমা হলের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না’

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

তারিক আনাম খান
তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

চার দশকের বেশি সময় ধরে মঞ্চনাটক, টেলিভিশন ও সিনেমায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নন্দিত অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক তারিক আনাম খান। অভিনয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ার তার। দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই অভিনেতা এবারের ঈদ উপলক্ষে কয়েকটি কাজ করেছেন। এ তালিকায় আছে বঙ্গবিডি ওয়েবের জন্য আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘সাদা প্রাইভেট’, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের সিনেমাওয়ালার জন্য ‘নয়া লায়লা নয়া মজনু’ ও ‘লাইক ফাদার লাইক সান’ এবং প্রসূন রহমানের রচনা ও পরিচালনায় আরটিভির ওয়েব ফিল্ম ‘জিরো পয়েন্ট’। সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছেন গুণী এই অভিনেতা-নির্মাতা।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: একসময় আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়তাম। এখন ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামে চোখ বুলাই। এক্ষেত্রে আপনার মতামত কী?
তারিক আনাম খান: শুরুতেই স্বীকার করে নিতে হচ্ছে, আমি নিজেও মাঝে মধ্যে এসব করি। সত্যি বলতে সময়ের সঙ্গে মানুষ চলে, সময়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায় সবাই। কিন্তু আমি পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ায় বিশ্বাসী নই। কেননা পত্রিকা মানে ছাপা আকারে যেসব রিপোর্ট হয়, সেগুলোর একটা অথেনটিসিটি থাকে, রেকর্ড থাকে, আর্কাইভ ভ্যালু থাকে। ছাপা খবরের সঙ্গে দৃষ্টি ও মস্তিষ্কের মধ্য দিয়ে আমাদের যে সম্পৃক্ততা গড়ে ওঠে তাতে অন্য একটা জায়গা তৈরি হয়। মানুষ ব্যক্তিগত জায়গা থেকে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে। পত্রিকায় খবর পড়া নিখাদ একটা ব্যাপার। কারণ এর মাঝে দায়িত্বশীলতা থাকে। কিন্তু ফেসবুকে দায়িত্বশীলতার অভাব আছে বলে আমার মনে হয়। আমি ফেসবুকে তখনই যাই যখন মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো নিউজ আছে, বিশেষ করে সমাজের কোনো দুঃসংবাদ বা কারও সুসংবাদ পেলে সেসবের খোঁজ নিতে ফেসবুকে যাই।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: নিজের অভিনীত নাটক কি ইউটিউবে বেশি দেখেন?
তারিক আনাম খান: টিভিতে নাটক দেখার জন্য যত সময় প্রয়োজন সেটি মেলে না। শুটিং থাকে, না হয় মহড়া বা মিটিং থাকে। ইউটিউবের সুবিধা হলো, আমার নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে আছে। আমি চাইলে সকাল-দুপুর-বিকাল যেকোনো সময় দেখে নিতে পারবো। একই বিষয় ওটিটির ক্ষেত্রেও। যখন মনে চাইবে তখন দেখে নিতে পারবো। কিন্তু টেলিভিশন নাটকের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। তবে আমার কাছে এখনও মোবাইলে নাটক দেখে মজা লাগে না। নাটক এখনও টেলিভিশনের বিষয়, টেলিভিশনেই দেখা উচিত। পরিবার নিয়ে যখন দেখা হয়, ওইটার মজা আর একা ফোনের মধ্যে দেখা আকাশ-পাতাল তফাৎ। কেউ হয়তো পাশ থেকে বলবে ভালো হয়েছে, কেউ বলবে ভালো হয়নি। তবে এখন ঘাড় নিচু করে মোবাইল ফোনে দেখে বলা যায় না ভালো হয়েছে কী হয়নি। ছোট স্ক্রিন বরাবরই ছোট স্ক্রিন।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সেই ১৯৭৩-৭৪ সালে অভিনয় শুরু করেছিলেন। এখনও আপনি ফিট। প্রতিদিন ব্যায়াম করেন?
তারিক আনাম খান: যতটুকু ব্যায়াম করলে নিজের স্বাভাবিক জীবন ছন্দে রাখা যায় ততটুকুই করি। অভিনয় যেহেতু আমার পেশা, সেক্ষেত্রে নিজেকে যদি ফিট না রাখি, সেটে গিয়ে ঘুমাই, কাজের স্পৃহা না থাকে তাহলে পেশাদার জগত আমাকে গ্রহণ করবে না। এটি খুব সোজাসাপ্টা কথা। আমি অভিনয় করি এবং বিনিময়ে টাকা পাই। আমি মনে করি, পেশাদারিত্বের বড় দিক হলো নিজেকে কার্যকর এবং তৈরি করে রাখা।

শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও বর্তমান সময়ের সঙ্গে মানানসই থাকা দরকার। অভিনয়ের ২০ বছর আগের ট্রেন্ড এবং সাম্প্রতিক সময়ের ট্রেন্ড কিন্তু বদলেছে। সেই ট্রেন্ড যদি ধরতে না পারি তাহলে পিছিয়ে পড়বো। তাছাড়া অভিনয় এখন অনেক বেশি মস্তিষ্ক প্রসিদ্ধ, চিন্তা-চেতনা থেকে আসে। আগে অনেক আবেগ দিয়ে এটি হতো। বাংলাদেশের নাটক ও সিনেমা দেখেছি, এখন অনেক সূক্ষ্ণ হয়ে গেছে। সেভাবে মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে, বর্তমান সময়ের সঙ্গে মিশতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ নবীনদের সঙ্গে আমার অনেক ভালো পারস্পরিক আদান-প্রদান হয়। এটি খুব দরকার। একইসঙ্গে যেহেতু আমি একটু বয়স্কদের কাতারে চলে গেছি, তাই শারীরিকভাবে ফিট থাকা জরুরি। কিন্তু বয়সের একটা ভার তো আছেই। আমি চাইলেও পাঁচ মাইল দৌড়াতে পারবো না। তাই আমাকে নিয়ে নির্মাতাদের সেরকম করেই ভাবতে হবে।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ:সাম্প্রতিক সময়ে হাঁটুর বয়সী নায়িকাদের নায়ক হয়েছেন আপনি। এর অনুভূতি কেমন?
তারিক আনাম খান: যখন অভিনয় করি তখন আমার সহশিল্পী পিচ্চি নাকি নায়িকা তা ভাবি না। আমার কাছে প্রতিটি মানুষ সমান। আমার কাছে যেসব চরিত্র আসে সেগুলো আমার কাছে স্রেফ চরিত্র। সেগুলোকে চরিত্র হিসেবেই দেখি। আর অভিনয়টা ওই মুহূর্তে জীবন্ত করাটাই আমাদের শিল্পীদের কাজের মধ্যে পড়ে। সেজন্য এমন নয় যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে নায়িকার সঙ্গে আমাকে প্রেম করতে হবে। তখন আমার জীবনের অভিজ্ঞতা টেনে আনি। সেটি হতে পারে আমার সমবয়সী প্রেম। অভিনয়ের ক্ষেত্রে সত্যিকারের আবেগটা দিতে হলে ওই মুহূর্তে বাকি সব ভুলে যাওয়াটা জরুরি মনে হয়।

সিনেমাওয়ালা নিউজ:আপনাকে কি নির্মাতারা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পেরেছেন?
তারিক আনাম খান: বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু কাজ পাই তাতে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। এটাই আমাকে আনন্দ দেয় যে, এখনও কাজ করার সুযোগ আছে। এখন অনেকেই ভাবে আমাকে দিয়ে বড় পরিসরে কাজ করাবে। এগুলো আমাকে প্রাণিত করে, উজ্জীবিত করে। যে কারণে যেকোনো সেটে গিয়ে পরিচালক ও সহশিল্পীদের সঙ্গে অনেক কথা বলে পরিস্থিতিকে যুক্তিযুক্তভাবে স্বাভাবিক আবেগ দেওয়ার চেষ্টা করি। হয়তো সেজন্য অনেকে আমাকে নিয়ে কাজ করার কথা ভাবে।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ:এখন কী কী কাজ নিয়ে ব্যস্ত?
তারিক আনাম খান: হইচই-এর একটি কাজ তো হাতে আছেই এবং ওটিটির আরও বেশ কয়েকটি কাজ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। আমি সিনেমায় বেশি আগ্রহী। কারণ আমি মনে করি, সিনেমায় সত্যিকারভাবে নিজেকে দেখানো যায়। একটা জায়গা থেকে শুরু হয়ে একটা জায়গায় শেষ হয়। ফলে চরিত্রের পরিভ্রমণটা বুঝতে পারি। সিনেমা আমার কাছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। এতে আবিষ্কার করার সুযোগ থাকে বেশি। শারীরিকভাবে বহনের একটা ব্যাপার থাকে।

মঞ্চনাটক বা সিনেমাকে আমি নিজের মনে করি। এই দুটি শাখায় কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য পাই। বড় পর্দার ক্ষেত্রে মাথায় থাকে যে কতো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কাজটা করা যায়। সুতরাং সিনেমা আমাকে বিশেষভাবে টানে। বেশ কয়েকটি সিনেমায় কাজ করছি। অনেক সিনেমা তৈরি হয়েও আছে। এখন পর্যন্ত একটু ভিন্নধারার সিনেমাগুলো করছি। তার মানে এই নয় যে সেসবের মধ্যে বাণিজ্যিক উপাদান নেই। একেবারে গতানুগতিক বাণিজ্যিক ও পুরনো ধাঁচের কাজকে বর্জন করি। তবে আধুনিক চিন্তা-চেতনা এবং বাণিজ্যের মিশেলে কাজ করার খুব ইচ্ছে আছে। আর টেলিভিশন নাটক, ইউটিউবের জন্য কনটেন্ট, বিজ্ঞাপনেও কাজ করছি। সবচেয়ে বড় বিষয় আমার হাতে কাজ আছে।

সিনেমাওয়ালা নিউজ:প্রায় এক যুগ পর ‘গুলশান এভিনিউ’ ধারাবাহিকের দ্বিতীয় সিজন এনেছেন। আপনি এর নির্বাহী প্রযোজক। একসময় নিয়মিত বিজ্ঞাপন নির্মাণ করতেন। সিনেমা বা নাটক পরিচালনা করেননি কেনো?
তারিক আনাম খান: প্রথম কথা হলো, আমি বিজ্ঞাপন নির্মাণে বেশি যুক্ত ছিলাম। সত্যি বলতে, আমাদের মিডিয়ায় ভালো কাজ করার জন্য যত বাজেট প্রয়োজন ততটা খুব একটা মেলে না। আমি মনে করি, একজন পরিচালকের পরিশ্রম অভিনয়শিল্পীদের চেয়ে অনেক বেশি। অনেক চিন্তা-ভাবনা করতে হয় তাদের। শুটিংয়ের অনেক আগে থেকে পরিচালকের কাজ শুরু হয়। তারা সময়ের দাম কতটুকু পায় তা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। এজন্য এখন পরিচালকরা ওটিটি ও ইউটিউবসহ অন্য কোন ফর্ম্যাটে কাজ করা যায় সেসব ভাবছেন। কেউ সিনেমা পেতে চেষ্টা করছেন। এটি তখন সফল হবে যখন একজন লোককে ওই পেশার মধ্যে নির্দিষ্ট করে ফেলতে পারবো। তাকে যদি বেঁচে থাকার জন্য যেসব নূন্যতম দরকার সেগুলো দিতে না পারি তাহলে তো লাভ নেই। সেই কারণে হয়তো পরিচালনা থেকে ধীরে ধীরে পিছিয়ে এসেছি। মঞ্চের কাজ করতে গিয়ে যতটা রোমাঞ্চ অনুভব করি, ততটা উত্তেজনা এখনও টেলিভিশন মিডিয়ায় কাজ করে পাইনি। হয়তো সিনেমায় পাবো। আর বিজ্ঞাপনে অন্যরকম একটা মজা আছে। যেমন ৩০-৪০ সেকেন্ডের মধ্যে একটা গল্প বলা। মূলত বিজ্ঞাপনের কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ততা ছিলো বলেই পরিচালনায় আসা হয়নি। এখন তো পরিচালকদের মূল্যায়ন খুব কম হয়।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ:ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে কি সিনেমা হলের বিকল্প মনে করেন?
তারিক আনাম খান: আদৌ না। আমার কাছে মনে হয়, সিনেমা হল এবং ওটিটি দুটি ভিন্ন বিষয়। ওটিটি বাড়িতে দেখা মানে এটি আমার নিজস্ব পছন্দ। কিন্তু সিনেমা হলের ক্ষেত্রে আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে দেখতে হয়। এই যে একসঙ্গে ২০০-৩০০ লোক সিনেমা দেখতে বসা, সিনেমা হলের লাইট বন্ধ হওয়া, সাউন্ট সিস্টেম; এখনও পর্যন্ত তুলনা করার মতো না। টেলিভিশনে যদি হাই-ফাই সাউন্ডও থাকে, তবুও সিনেমা হলের সঙ্গে মেলাতে পারি না। সিনেমা হলের আরও অনেক ব্যাপার আছে। যেমন- সিনেমা হলে সবাই একসঙ্গে হাসতে থাকা, শ্বাস ফেলা ইত্যাদি। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এখনো পর্যন্ত বাসায় বসে দেখার মধ্যে সীমিত। এজন্য ওটিটি আমার একটা পছন্দ। আর সিনেমা হলে কিন্তু অনেক জেনে বুঝে যাই।

সিনেমাওয়ালা নিউজ:আপনার নাট্যদল নাট্যকেন্দ্রে কাজ করে তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসান ও মোশাররফ করিম তারকা হয়েছেন। এটা ভাবলে কেমন লাগে?
তারিক আনাম খান: অনুভূতি অবশ্যই ভালো। যখন মোশাররফ করিম বলে আমার কাছ থেকে শিখেছে, আমি তার গুরু, তখন দারুণ অনুভূতি জাগে মনে। অভিনয় কিংবা নাচ-গান শেখার জন্য কিন্তু গুরু লাগে। কারও না কারও কাছ থেকে শিখতে হয়। আমি নিজেও শিখেছি। কারও কাছ থেকে ‘ক’ শিখেছি, তারপর ‘ক’ দিয়ে কাক লেখা শিখেছি। কারখানা লেখা শিখেছি। বড় হয়েছি ধীরে ধীরে। আমি মনে করি, তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসান ও মোশাররফ করিমের যোগ্যতা না থাকলে তারা পারতেন না। কম মানুষকে তো আর শেখাইনি। তৌকীর, জাহিদ ও মোশাররফ অনেকদিন ধরে টিকে থেকে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের জেদ ছিলো কাজ করে যাবে। অনেকের হয়তো মাঝপথে গিয়ে ছেদ পড়েছে, ফলে অন্য পেশায় চলে গেছে। শেখার পর নিজেকে এগিয়ে নিতে প্রক্রিয়া লাগে। আমার কাজ ছিলো অভিনয়ের বেসিকটা শিখিয়ে দেওয়া। টেকনিক, বলার স্বর ও বডি লাইনিং কী হবে, কোন এক্সপ্রেশনে কী হয়; এসব বুঝিয়েছি। ভয়েস থেকে কী উৎপন্ন করতে হবে তা জানতে একজন অভিনয়শিল্পীকে নিজের এবং নিজের শরীরকে জানা থাকা চাই। সেগুলো নাট্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের শিখিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। তারপর হয়তো তারা সেসব গ্রহণ করে নিজেদের মতো করে এগিয়েছে। সুতরাং এটাই প্রক্রিয়া।

কোনো সেটে গেলে অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তারা কীভাবে নিজেদের অতিক্রম করে আরও বড় জায়গায় যেতে পারে সেজন্য যতটা সম্ভব উদ্বুদ্ধ করি। প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীকে একসময় নিজেকে অতিক্রম করতে হয়। সে যদি নিজে থেকে না এগিয়ে যায়, তাহলে শত চেষ্টা করেও তাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে নেওয়া যায় না। নিজের বোধ ও মেধা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং তাকে প্রতিটি দিনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি দেখেছি, এমন অনেক অভিনয়শিল্পী কোনো প্রস্তুতি না নিয়ে স্ক্রিপ্ট কিংবা চরিত্র না জেনে সেটের মধ্যে ঢুকে যায়। অনেকে আছে সবসময় একই রকম মেকআপ নিচ্ছে। যে মেয়েটি সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় কাজ করে তার চেহারা তো তামাটে হয়ে যাবে। সে তো আর ফর্সা থাকতে পারে না। এসব প্রস্তুতি বেশিরভাগের থাকে না। তারা না এগোতে পারলে আমি নিজেও ভালো কাজ করতে পারবো না। সেজন্য তাদের অনুপ্রাণিত রাখার চেষ্টা করি। অভিনয়ের সহজ বিজ্ঞান হলো, এটি কখনও একা করা যায় না। অ্যাক্টিং ইজ অলওয়েজ রিঅ্যাক্টিং।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ:আপনাদের সময় তো অনেক অর্থনৈতিক কষ্ট ছিল। তবুও মহড়া করেছেন। মঞ্চনাটকে আশি ও নব্বইয়ের দশকটা দারুণ ছিল। এখন মঞ্চনাটকের জনপ্রিয়তা আগের মতো নেই কেনো?
তারিক আনাম খান: আমরা যখন মঞ্চনাটক শুরু করেছিলাম সেই সময়ের সঙ্গে এখনকার অনেক পার্থক্য। ১৯৭৩ সালে যদি মঞ্চনাটক শুরু হয়ে থাকে তাহলে প্রায় ৫০ বছর হতে চললো। গত ৫০ বছরে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট ও মানুষজন অনেক পাল্টেছে। আগে বেইলি রোডে রিকশা দিয়ে খুব সহজে যাওয়া যেতো বা বাস থেকে নেমে হেঁটে যাওয়া যেতো। কিন্তু এখন সেটি খুব মুশকিল। তখন টেলিভিশিন মিডিয়া ছিলো একটা। এখন টেলিভিশনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কাজও বেড়ে গেছে। অনেক অভিনয়শিল্পী মঞ্চের গণ্ডি পেরিয়ে টেলিভিশনে কাজ করছে। যেহেতু এর সঙ্গে অর্থনীতি ব্যাপারটি জড়িয়ে পড়েছে। টেলিভিশনে কাজ করলে টাকা আসে। মঞ্চনাটকের জন্য অনেক সময় দিতে হয়, মহড়া করতে হয়, বারবার যেতে হয়, কমিটমেন্ট থাকে। আমার দৃষ্টিতে মঞ্চের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, এটি শিল্পীদের সূতিকাগার। মঞ্চ থেকে শেখার অনেক কিছু থাকে। মঞ্চনাটকে একজন অভিনেতা নিজেকে প্রতিদিন নতুনভাবে আবিষ্কার করে। নতুনভাবে চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকি নেয়। টেভিলিশন বা সিনেমা একেবারে আলাদা। এসব জায়গায় নিখুঁতভাবে কাজ করতে হয়। মহড়া করে হোক বা যেভাবে হোক জায়গাটা তৈরি করতে হয়। নির্দিষ্ট জায়গায় চোখ বন্ধ হবে তো বন্ধ হতেই হবে, পজ দিতে হলে পজ লাগবেই। এসব কারণে সিনেমা বা টেলিভিশন অভিনয়শিল্পীরা অনেক বেশি পরিণত। আমি মনে করি, আমাদের মিডিয়া তৈরির ঘর অনেক বেশি বড় হয়ে গেছে। ফলে পরিচালক, অভিনয়শিল্পী, নাট্যকারদের কোথাও একটা ঘাটতি আছে। কেউ যখন নাটক বানাতে যায় তার অভিনেতা-অভিনেত্রী দরকার ঠিক আছে, কিন্তু সর্বনিম্নটুকু দিতে পারলেই যেন হলো, সর্বোচ্চটায় কেউ যেতে পারছে না। এর কারণ আমাদের এখানে ইনস্টিটিউশন নেই। পাশের দেশ ভারতে ঠিকই আছে। তারা কিন্তু ভারতের ইন্ডাস্ট্রিকে অনেকাংশে যোগ্য করে তুলেছে। আমাদের সময়ে হুমায়ুন ফরীদি ও রাইসুল ইসলাম আসাদ আমার প্রতিযোগী ছিল, কিন্তু সেটা সুস্থ গতিতে। ওদের নাটক দেখতাম এবং নিজেকে বলতাম- আমাকে ভালো করতে হবে।

এখন আমাদের নিজেদের কনটেন্টই তো নিজেরা দেখতে পারি না কিংবা দেখা হয় না। টেলিভিশন চ্যানেলের অনেক দায়িত্ব ছিলো, কিন্তু সম্মানের সঙ্গে বলতে চাই, আমার দৃষ্টিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। বাণিজ্যকে মাথায় নিতেই হবে। কিন্তু পাশাপাশি শিল্প ও বাণিজ্যের সম্মিলনটা দরকার। বর্তমান সময়ে মানুষ কী চায় সেজন্য তৈরি থাকা প্রয়োজন। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এসব চূড়ান্তভাবে আমরা মিস করেছি বলে আমার মনে হয়। মঞ্চনাটকে সেই অর্থে এখন আমার নিজের জন্য সময় দেওয়া মুশকিল। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে বড় পর্দা এবং ওটিটিতে কাজ করবো। আমি কি মঞ্চে সময় দিতে পারবো? সেই সময় অনেকের ক্ষেত্রে সীমিত বলে মনে করি। আমার মনে হয়, মঞ্চনাটক এখন বাঁচতে পারে যদি আমরা এটি পেশাদারিত্বের সঙ্গে গ্রহণ করি। কেউ শো করলে উপার্জন হতে হবে। ছোট করে হলেও শুরুটা কিন্তু করতে হবে। দেখবেন আগামী ১০ বছরের মধ্যে চিত্রটা বদলে যাবে। বিভিন্ন ভেন্যু তৈরি করতে হবে। শুধু শিল্পকলা একাডেমির ওপর নির্ভর করলে হবে না। গুলশানে দুটি, বনানীতে একটি, ধানমন্ডিতে দুটি এবং উত্তরায় মঞ্চ দরকার। স্থানীয়রাই মঞ্চনাটক দেখতে যাবে। উত্তরার লোকজন তো শিল্পকলায় গিয়ে সময় কাটাবে না।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ:রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। এর আগেও তো শিক্ষকতা করেছেন…
তারিক আনাম খান: রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস এখনও শুরু হয়নি। আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়েছি। জাবি’তে সেলিম আল দ্বীন স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সাভারে গিয়ে ক্লাস নেওয়াটা সহজ ব্যাপার ছিলো না। নিজের পেশাগত ব্যস্ততারও বিষয় ছিলো। সেখানে এক-দুই বছর ছিলাম। পরে এক্সটার্নাল হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু পার্টটাইম শিক্ষকের চেয়ে নিয়মিত শিক্ষক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সৃজনকলায় বিশেষ করে অভিনয়, নাচ, গানের ক্ষেত্রে একক জনের একেক ধরনের ভোকাল কোয়ালিটি, উচ্চতা ও দৃষ্টি থাকে। কিন্তু আলাদা অ্যাপ্রোচ করতে হয়। সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আছেন তারা আমাকে নিয়েছেন। হয়তো নিয়মিত ক্লাস নিতে পারবো না। তবে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো যদি ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো কাজে লাগে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে পরে অন্য চাকরি করলে ঠিক আছে। কিন্তু চাকরি করার মানসিকতা থাকলে অভিনয় করাটা খুব কঠিন। তাই একটু ঝুঁকি নিতে হবে। হয়তো ব্যর্থও হতে পারে তারা। সেটি মেনে নিতে হবে।

সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয় কারা পড়বে জানি না, তবে আমার আরেকটি ইচ্ছে অ্যাক্টিং ইনস্টিটিউট করা। ছয় মাসের একটি কোর্স রেখে নতুন একটি ব্যাচ মিডিয়ায় পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে গতানুগতিক মঞ্চনাটকের জন্য নয়; সিনেমা, টেলিভিশন এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে মাথায় রেখে। বিদেশ থেকেও বিশেষজ্ঞ নিয়ে কাজ করবো বলে আশা আমার। এ বিষয়ে কয়েকজনের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। আমরা সহযোগিতাও পাবো। তাই আপাতত একটি বড় জায়গা খুঁজছি, যেখানে এমন একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা যায়। কারণ আমি মনে করি, দেশ আমাকে অনেক দিয়েছে, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।

আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। ১৯৭১ সালে নয় মাস আমরা নিজেরাই নাটক লিখে ক্যাম্পে ক্যাম্পে অভিনয় করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছি। তখন অদ্ভূত সময় ছিলো। নাটকে যখন পাকিস্তানির চরিত্রে অভিনয় করতাম এবং আমাকে মুক্তিবাহিনী ধরতো তখন জয় বাংলা স্লোগান মুখে আনার জন্য কাউকে বলতে হতো না। সব মুক্তিযোদ্ধা হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে জয় বাংলা বলতো। এভাবে অভিজ্ঞতা নিয়েই কিন্তু থিয়েটার হয়। আমার মনে হয়, আমি অনেক পেয়েছি। যতোটুকু ভালোবাসা ও সামাজিক অবস্থান পেয়েছি, বাংলাদেশ না হলে সেসব কতটুকু পেতাম তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। ‍সুতরাং সৃষ্টিকর্তা মহান। তাই আমার মনে হয়, দেশকে দেওয়ার জন্য আমার অনেক কিছু আছে। এটি আমার দায়িত্ব।

পড়া চালিয়ে যান
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আলাপচারিতা

‘ট্রেন্ডিংয়ে থাকার চেয়ে দর্শকদের কমেন্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ি’

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

কেএম সোহাগ রানা (ছবি: আকিব রহমান)

এবারের ঈদুল আজহার অন্যতম জনপ্রিয় নাটক ‘চাঁদের হাট’। ইউটিউবে বেশ কিছুদিন ট্রেন্ডিংয়ে এক নম্বরে ছিলো এটি। এখনো ট্রেন্ডিংয়ে আছে এই নাটক। এটি লিখে ও পরিচালনা করে প্রশংসিত হয়েছেন তরুণ নির্মাতা কেএম সোহাগ রানা। এর আগেও বেশকিছু নাটক পরিচালনা করেছেন তিনি। নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিনেমাওয়ালার সঙ্গে প্রায় একযুগ ধরে আছেন সোহাগ রানা। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনে আর গল্প বুনে দিন কাটে তার। ‘চাঁদের হাট’ ও নিজের স্বপ্ন নিয়ে সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় সময় দিয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘চাঁদের হাট’ মুক্তির পরপরই ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে চলে আসে। এরপর টানা কয়েক সপ্তাহ এক নম্বরেই ছিলো। এখনো ট্রেন্ডিংয়ে আছে নাটকটি। এর অনুভূতি কেমন?
কে এম সোহাগ রানা: কোনো নাটক ট্রেন্ডিংয়ে থাকা মানে দর্শকদের মধ্যে সেটি নিয়ে চাহিদা তৈরি হয়েছে। তবে অনেক সময় দেখা যায় ভালো-মন্দ যেকোনো কাজই ট্রেন্ডিংয়ে চলে আসে। কনটেন্ট যদি ভালো হয় তাহলে সেটা টিকে থাকে, ভালো না হলে এক-দুই দিনেই হারিয়ে যায়। এজন্য আমি ট্রেন্ডিংয়ে থাকার চেয়ে দর্শকদের কমেন্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ি। এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও দর্শকের ভালো লাগা ও খারাপ লাগা বুঝতে পারি। ‘চাঁদের হাট’ দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন্ডিংয়ে আছে, পাশাপাশি দর্শকদের ইতিবাচক কমেন্ট দেখে বুঝেছি নাটকটি তাদের ভালো লেগেছে। আর মানুষের ভালোবাসা পেতে কার না ভালো লাগে! দর্শকের এসব প্রতিক্রিয়া আমাকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘চাঁদের হাট’ গল্পটি মাথায় এলো কীভাবে? নাটকটি কি কোনো বাস্তব ঘটনায় অনুপ্রাণিত?
সোহাগ রানা: একটি চরিত্রকে ধরে গল্পটি মাথায় এসেছে। সিনেমাওয়ালার অফিসে একদিন ভাইয়া (মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ) এসে আমাকে বলেন, ‘ঈদ সম্পর্কিত একটা গল্প বানাও।’ তখনো জানি না কী করবো। তখন ভাইয়া বলছিলেন, ‘গরুর হাটের দালাল চরিত্র নিয়ে কিছু একটা করতে পারো।’ তার ওই পরামর্শ থেকেই গল্পের শুরু। বাকি গল্পের সিংহভাগ অংশ বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ঘটনা থেকে নেওয়া।

কেএম সোহাগ রানা (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: অনেক দর্শক এই নাটকের শেষ দৃশ্যের প্রতি আবেগপ্রবণ হওয়ার কথা আলাদাভাবে বলেছেন। এর মাধ্যমে কী বার্তা দিতে চেয়েছেন?
সোহাগ রানা: মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসার বার্তা দিতে চেয়েছি। আমরা একে অপরকে ভালোবাসলে প্রত্যেকের জীবন হবে সুন্দর। মানুষের প্রতি মানুষের মায়া আর ভালোবাসা থাকলে পুরো পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে যায়। এখন সেটারই অভাব দেখি চারপাশে।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: দর্শকদের কাছ থেকে নিশ্চয়ই ভালো সাড়া পেয়েছেন। আপনার পরিবারের লোকজন কী বললেন?
সোহাগ রানা: আম্মু আমার কাজ নিয়মিত দেখেন। তিনি আমাকে তার মতো ভালো লাগা ও খারাপ লাগা প্রকাশ করেন। ‘চাঁদের হাট’ আম্মুর বেশ ভালো লেগেছে। আমার পরিবারের বাকিরা ও কাছের বন্ধুরা আলাদা করে তাদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছে।

‘চাঁদের হাট’ নাটকের শুটিংয়ে কেএম সোহাগ রানা (ছবি: আকিব রহমান)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: নাটকের শুটিং করার অভিজ্ঞতা বলুন। হাটে কাজ করার চ্যালেঞ্জ কী কী ছিলো?
সোহাগ রানা: আমরা যখন শুটিং করি তখন প্রচন্ড গরম ছিলো। গরমেই বস্তিতে ও গরুর হাটে শুটিং করেছি। ঈদুল আজহার আগে গাবতলী গরুর হাটে শুটিং করা মানে বুঝতেই পারছেন কী ধকল গেছে আমাদের ওপর। তবে আমাদের চিত্রগ্রাহক আদিত্য মনিরসহ পুরো টিম যথেষ্ট করিতকর্মা ও সুদক্ষ, ফলে আমরা সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ভালোভাবে শুটিং সেরে আসতে পেরেছি।

‘চাঁদের হাট’ নাটকের শুটিংয়ে অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কেএম সোহাগ রানা (ছবি: আকিব রহমান)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘চাঁদের হাট’ নাটকের অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে কিছু বলুন।
সোহাগ রানা: প্রত্যেকেই দারুণ, অসাধারণ ও সহায়তাপ্রবণ। তৌসিফ মাহবুব শুটিংয়ের অনেক আগে থেকেই আমার সঙ্গে গল্প নিয়ে একাধিকবার বসেছেন, সময় দিয়েছেন। তার মধ্যে ভালো কাজের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা দেখেছি। তিনি ভালো মনের মানুষ এবং নিঃসন্দেহে একজন দারুণ অভিনেতা। ডা. এজাজুল ইসলাম ও মনিরা মিঠুর অভিনয় ছোটবেলা থেকেই দেখছি, কী অসাধারণ অভিনয় করেন তারা! আর কেয়া পায়েল দিন দিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে আগেও অনেক কাজ করেছি। সেই হিসেবে নিজের পরিবারের মতো টিম নিয়ে বেশ আনন্দে শুটিং করেছি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: এর আগে কী কী নাটক পরিচালনা করে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?
সোহাগ রানা: গত ঈদুল ফিতরে ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’র জন্য দারুণ সাড়া পেয়েছি। এতে অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব ও তাসনিয়া ফারিণ। আমার পরিচালিত অন্যান্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘অ্যাওয়ার্ড’ (ফারহান আহমেদ জোভান, তাসনিয়া ফারিণ), ‘সাদা রুমাল’ (জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, তাসনিয়া ফারিণ), ‘বিষয়টা ভালোবাসার’ (তৌসিফ মাহবুব, তানজিম সাইয়ারা তটিনী), ‘হয়নি বলা কোনো কথা’ (তৌসিফ মাহবুব, সাদিয়া আয়মান), ‘এমন একটা তুমি চাই’ (তৌসিফ মাহবুব, সাদিয়া আয়মান), ‘ওসিডি’ (শামীম হাসান সরকার, সারিকা সাবাহ), ‘শনিবার’ (শামীম হাসান সরকার, তাসনিয়া ফারিণ), ‘প্লেয়ার্স’ (সামিরা খান মাহি), মিনি সিরিজ ‘দুষ্টু ছেলের দল’ ও ‘ঠান্ডা গরম’।

কে এম সোহাগ রানা (ছবি: আকিব রহমান)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের সহকারী হিসেবে নাটকে যুক্ত হয়েছেন আপনি। শুরুতে কী ভেবেছিলেন আজকের অবস্থানে আসতে পারবেন?
সোহাগ রানা: সত্যি বলতে, অবস্থান নিয়ে কখনো ভাবিনি। ভাইয়ার মতো এতো বড় মাপের একজন পরিচালকের সান্নিধ্যে থাকা ও তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। তার মতো একজন গুণী মানুষ আমাকে সবসময় ছোট ভাইয়ের মতো পাশে রেখে যেভাবে কাজ শিখিয়েছেন তাতে আমি ঋনী হয়ে থাকবো। তার কাছে এখনো শিখছি, সবই আমার প্রাপ্তি।

কেএম সোহাগ রানা (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: এখন নতুন কী কী কাজ করছেন?
সোহাগ রানা: ‘ম্যাজিক মোমেন্ট’ নামের নতুন একটি গল্পের শুটিংয়ে যাচ্ছি। এছাড়া পরবর্তী বেশ কিছু কাজের পরিকল্পনা করছি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনার স্বপ্ন বা লক্ষ্য কী?
সোহাগ রানা: বাংলা ভাষার কনটেন্ট ও বাংলা সিনেমা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করা। স্বপ্ন দেখি এমন একটা সময় আসবে, যেদিন বিশ্বব্যাপী আমার সিনেমা নিয়ে আলোচনা হবে!

পড়া চালিয়ে যান

আলাপচারিতা

বাংলাদেশের নাটক পশ্চিমবঙ্গে তুমুল জনপ্রিয়, আমরা নিয়মিত দেখি: দর্শনা বণিক

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

ঢাকার সিনেমা, মিউজিক ভিডিও এবং বিজ্ঞাপনের পর এবার নাটক ও ওয়েব ফিল্মে কাজ করলেন ভারতের বাঙালি অভিনেত্রী দর্শনা বণিক। ঈদুল আজহা উপলক্ষে আসছে তার অভিনীত প্রথম নাটক ‘ইতিবৃত্ত’ এবং ওয়েব ফিল্ম ‘কলকাতা ডায়রিস’। এসব কাজ, বাংলাদেশের অভিনেতা-অভিনেত্রী, নিজের নতুন সিনেমা ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে কলকাতা থেকে হোয়াটসঅ্যাপে সিনেমাওয়ালা নিউজের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘ওমর’ সিনেমার ‘ভাইরাল বেবি’ গানে নেচেছেন। কেমন সাড়া পেলেন?
দর্শনা বণিক: ‘ভাইরাল বেবি’র জন্য দারুণ সাড়া পেয়েছি। সিনেমা মুক্তির সময়ও তো বটেই, এখনো অনেকে দেখা হলে বলে গানটি খুবই ভালো লেগেছে তাদের। যেকোনো সিনেমা, গান কিংবা বিজ্ঞাপনে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকে। একইভাবে সবার মন্তব্য হলো– কোরিওগ্রাফি, আমার সহ-নৃত্যশিল্পী, গান, লাইটিং, চিত্রগ্রহণ, পরিচালনাসহ সব মিলিয়ে ‘ভাইরাল বেবি’ দারুণ হয়েছে।

‘ওমর’ সিনেমায় দর্শনা বণিক (ছবি: মাস্টার কমিউনিকেশন্স)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঢাকায় সিনেমার পর এবার নাটকে অভিনয় করলেন…
দর্শনা বণিক: সত্যি বলতে, নাটকে অভিনয়ের ইচ্ছে ছিলো অনেকদিনের। যখন থেকে নাটক দেখতে ও জানতে শুরু করেছি, তখন থেকে আগ্রহ জন্মায় এবং ভেবেছি নিজে একদিন এমন কাজ করবো। বাংলাদেশের নাটকগুলো পশ্চিমবঙ্গেও তুমুল জনপ্রিয়। আমরাও ঢাকার নাটক দেখি, খোঁজ রাখি। আমার বাবার ইচ্ছে ছিল, একটা-দুটো নাটকে অভিনয় করি। সেই ইচ্ছে থেকেই ‘ইতিবৃত্ত’তে কাজ করা। এর আগে এক-দু’বার অন্যান্য নাটকের ব্যাপারে যোগাযোগ করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু সেগুলো করা হয়ে ওঠেনি। ‘ইতিবৃত্ত’তে শেষ পর্যন্ত কাজ করা হলো।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনায় ‘ইতিবৃত্ত’তে আপনার চরিত্রটি কেমন?
দর্শনা বণিক: আমার চরিত্রটি বর্তমান সময়ের আদর্শ প্রেমিকার। একটি সুন্দর প্রেমের গল্প আছে এতে। এক তরুণের ওপর মাদকাসক্তির ক্ষতিকর প্রভাব এবং তার প্রেমের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে কাহিনিতে। এ নাটকে অভিনয় করে আমার খুবই ভালো লেগেছে।

‘ইতিবৃত্ত’ নাটকে দর্শনা বণিক ও ইয়াশ রোহান (ছবি: এসবিই)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘ইতিবৃত্ত’ নাটকে আপনার সহশিল্পী ইয়াশ রোহাহানে কী কী গুণ চোখে পড়েছে?
দর্শনা বণিক: ইয়াশ রোহানের সঙ্গে খুব বেশি আড্ডা হয়নি আমার। কারণ অনেক দৃশ্য থাকায় আমাদের সারাক্ষণই শুটিংয়ে মনোযোগ দিতে হয়েছে। এর মধ্যে যতটুকু দেখেছি তাতে বলতে পারি, ইয়াশ খুব আন্তরিক ও ভালো মনের মানুষ। অভিনেতা হিসেবে তিনি দারুণ, নিজের চরিত্র ও কাজ নিয়ে সিরিয়াস থাকেন।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঢাকায় শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
দর্শনা বণিক: মোট পাঁচদিনের মতো শুটিং হয়েছে। এরমধ্যে আমার কাজ ছিলো চার দিনের। ঢাকার শহরের বিভিন্ন প্রান্তে শুটিং করেছি আমরা। এর আগে বাংলাদেশে যেসব সিনেমায় অভিনয় করেছি সেগুলোর শুটিং ঢাকার পাশাপাশি অন্যান্য জেলায় হয়েছে। এ কারণে আগের কোনোবার ঢাকাকে ভালোভাবে দেখার সুযোগ হয়নি। ‘ইতিবৃত্ত’র শুটিংয়ে গিয়ে এবার সেই সুযোগ পেয়েছি। সত্যি বলছি, আমি ঢাকা শহরের প্রেমে পড়েছি! আমার বাবার বাড়ির সবাই ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন। সেই সুবাদে ঢাকার ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছিলাম। শহরটা বড়সড়। অবশেষে ঢাকা শহর মনের মতো করে দেখতে পেলাম। ঢাকার রাস্তাঘাটের ব্যস্ততা কলকাতা শহরের মতোই অনেকটা। ঢাকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। এর সঙ্গে বর্তমান সময়ের ব্যস্ততা মিলিয়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। ঢাকায় অনেক পুরনো ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। ইউরোপীয় অনেক শহরে এমনটা চোখে পড়ে। ঢাকাকে ভালোবেসে ফেলেছি!

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আগামীতে আবার প্রস্তাব পেলে ঢাকার নাটকে কাজ করবেন?
দর্শনা বণিক: দেখুন, আমি সিনেমার মানুষ। ভারতে বিভিন্ন ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছি। তবে কোনো কারণে ছোট পর্দায় আমার কাজ করা হয়ে ওঠেনি। সবসময় সিনেমা কিংবা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আমাকে দেখেছে দর্শকরা। ২০১৮ সালে যখন থেকে অভিনয় করি, তখন ওয়েব সিরিজ সবে জনপ্রিয় হচ্ছে। আগামীতে সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ আমার মূল লক্ষ্য থাকবে। তবে ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে নাটকে কাজ না করার তো কারণ নেই।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঢাকার খাবার নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন, কোন খাবার বেশি উপভোগ করেন?
দর্শনা বণিক: ঢাকার খাবারের বৈচিত্র্য অনেক। কলকাতার জামাই ষষ্ঠীর প্রসঙ্গ টেনে যদি বলতে হয় তাহলে তার থেকেও বেশি আইটেম থাকে ঢাকায় খাবারের টেবিলে। আর আপনারা এতো আতিথেয়তা করে খাওয়ান যে খেতেই হয়! বাংলাদেশের চুইঝাল মাটন আমার ভীষণ পছন্দের।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঢাকার অভিনেতাদের মধ্যে কার কার কাজ ভালো লাগে? তাদের মধ্যে কোন কোন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে?
দর্শনা বণিক: বাংলাদেশের নাটক দেখি। ঢাকার অভিনেতাদের মধ্যে অনেকের অভিনয় ভালো লাগে। নাম বললে তো অনেকের কথা বলতে হয়, হয়তো এক-দুই জনের নাম ভুলেও যেতে পারি! সেজন্য আলাদাভাবে কারো নাম নিচ্ছি না।

বাংলাদেশের নাটক ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠিত প্রত্যেকের কাজ দেখি, খোঁজ রাখি। তাদের অভিনয় খুবই ভালো লাগে। সিনেমায় তো অবশ্যই আবার শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে। এছাড়া সিয়াম আহমেদ, শরিফুল রাজের বিপরীতেও অভিনয় করতে চাই। ছোট পর্দার কথা বললে চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, অপূর্ব ও আফরান নিশোর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে হয়। নিশো সম্ভবত এখন আর নাটক করছেন না, তাই তার সঙ্গে সিনেমাতেই কাজ করতে চাইবো। ছোট পর্দার অভিনেতাদের মধ্যে ফারহান আহমেদ জোভান আমার খুব পছন্দের। তার সঙ্গেও কাজ করার খুব ইচ্ছে হয়।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশের কয়েকজন অভিনেত্রী পশ্চিমবঙ্গে কাজ করেছেন, এখনও করছেন। এক্ষেত্রে জয়া আহসান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, তাসনিয়া ফারিণের কথা বলা যায়। ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসেও তাদের জয়জয়কার দেখা গেছে। তাদের নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
দর্শনা বণিক: জয়া আহসান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও তাসনিয়া ফারিণ প্রত্যেকেই গুণী ও ভালো অভিনেত্রী। তাদের কাজ অবশ্যই দেখি। তারা যেভাবে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, সঠিকভাবে সব বহাল রেখেছেন, নিজেদের পরিণত করছেন, আরো ভালো ভালো কাজ বেছে নিচ্ছেন; সেসব অবশ্যই শেখার বিষয়।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ঈদুল আজহায় তো আপনাকে ঢাকার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাবে। বঙ্গ’তে মুক্তি পাবে ‘কলকাতা ডায়রিস’। ওয়েব ফিল্মটির গল্প শুনি।
দর্শনা বণিক: এখানে আমার চরিত্রের নাম শর্মী। সে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। সফল উদ্যোক্তা অনামিকা সাহার অফিসে চাকরি করে শর্মী। একদিন ঢাকা থেকে কলকাতায় যাওয়া স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান পিকের সঙ্গে অনামিকাকে পরিচয় করিয়ে দেয় শর্মী। এরপর তৈরি হয় জটিলতা। অনামিকা সাহার ভূমিকায় শ্রীলেখা মিত্র ও পিকে চরিত্রে আছেন বাংলাদেশের অভিনেতা শিফাত আমিন। ‘কলকাতা ডায়রিস’ পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের রাশেদ রাহা। গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন বাংলাদেশের আরেক তরুণ খায়রুল বাসার নির্ঝর। কলকাতার নিউটাউন ও রাজারহাটে এর শুটিং হয়েছে।

‘কলকাতা ডায়রিস’ ওয়েব ফিল্মের পোস্টার (ছবি: বিগ আর এন্টারটেনমেন্ট প্রোডাকশন)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশে আপনার ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। এর প্রিমিয়ারে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন। ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের বিপরীতে ‘অন্তরাত্মা’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এটি মুক্তির ব্যাপারে কিছু জানেন?
দর্শনা বণিক: যতোদূর জানি ‘অন্তরাত্মা’ মুক্তি পাওয়ার কথা চলতি বছরেই। তবে সেটা কবে নির্দিষ্ট করে সত্যি জানি না। মূলত প্রযোজকের ওপর নির্ভর করছে মুক্তির ব্যাপার। সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত আমরা প্রত্যেকে বড় পর্দায় আসার অপেক্ষা করছি। দেখা যাক!

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সংগীতশিল্পী ইমরান মাহমুদুলের সঙ্গে দুটি মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়েছেন। এমন কাজের প্রস্তাব কি আর পেয়েছেন?
দর্শনা বণিক: ইমরানের ‘মেঘের ডানা’ ও ‘তোর নামের ইচ্ছেরা’ গানের মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়েছি। এরপর এক-দুটো কাজের প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু কোনও কারণে সেগুলো করা হয়নি। তবে ঢাকায় নিয়মিতই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শুট হতে থাকে আমার। গত ঈদেও বিজ্ঞাপনের কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও করতে চাই।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ভারতের বাংলা সিনেমার পাশাপাশি বলিউডে ও দক্ষিণী সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বাংলা, হিন্দি কিংবা অন্য ভাষার নতুন সিনেমার খবর কী?
দর্শনা বণিক: নতুন আরেকটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নাম লিখিয়েছি। সেটি হলো ভোজপুরি। সেখান থেকে আমার নতুন একটি সিনেমা আসবে। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতেও আমার কাজ চলছে। কয়েকদিন আগে ডিজনি হটস্টারে আমার অভিনীত ‘সেভ দ্য টাইগার্স টু’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। বলিউডের তিনটি হিন্দি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে।

দর্শনা বণিক (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: রান্না কি করেন? সৌরভ দাসের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে কথাবার্তা হয়?
দর্শনা বণিক: একদমই রান্না করি না। শখের বশে মাঝে মধ্যে কিছু বানাই, তবে সেটাকে রান্না বলা যায় না। সৌরভ বাংলাদেশের কাজের খোঁজখবর রাখে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সংগীতশিল্পীরা নতুন কী বের করলো দেখে। আমরা গাড়িতে সবসময় কোক স্টুডিও বাংলার গান শুনি, বাংলাদেশের গান শুনি। সৌরভেরও বাংলাদেশে কাজ করা ও ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে আছে।

পড়া চালিয়ে যান

আলাপচারিতা

বাংলাদেশি হয়ে কলকাতার সিনেমা পরিচালনা করতে পারা আমার জন্য সম্মানের: সঞ্জয় সমদ্দার

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: অপূর্ব ফটোগ্রাফি)

ওপার বাংলার সুপারস্টার জিতের অভিনয় ও প্রযোজনায় ‘মানুষ’ মুক্তি পেয়েছে গত ২৪ নভেম্বর। এর মাধ্যমে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করলেন পরিচালক সঞ্জয় সমদ্দার। তিনিই সিনেমার গল্প লিখেছেন। এখন ওপার বাংলার দর্শকদের প্রশংসায় ভাসছেন এই নির্মাতা। তবে মেয়ের অসুস্থতার কারণে দেশে ফিরে এসেছেন। সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় ১০ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: দেশে চলেন এলেন যে?
সঞ্জয় সমদ্দার: কলকাতায় একটি প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু আমার মেয়ে দিজুর অসুস্থতার কথা জানানোর পর জিৎ দাদা বলেন, ‘আগে সন্তানের খেয়াল রাখো।’ তিনি সবসময় পরিবারকে প্রাধান্য দেন। এটা তার বড় একটা গুণ।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সিনেমা মুক্তির পর জিৎ কী বললেন?
সঞ্জয় সমদ্দার: জিৎ দাদা অনেক খুশি। তিনি লাইভে আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। আমার সঙ্গে আবার কাজ করার ইচ্ছের কথাও জানিয়েছেন। তার মুখে এটা শোনার পর ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। একজন সুপারস্টারের মুখে আলাদাভাবে আমার কথা শুনে খুব ভালো লেগেছে।

সঞ্জয় সমদ্দার ও জিৎ (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: জিতের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা নিশ্চয়ই ভোলেননি?
সঞ্জয় সমদ্দার: জিৎ দাদার সঙ্গে সেই সাক্ষাৎ আজীবন মনে থাকবে। কলকাতায় গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্টের গোপাল মাদনানি দাদার রুমে বসলাম। জিৎ দাদা লাঞ্চ করে এলেন। তিনি একজন প্রাণবন্ত মানুষ। তার একটা পরিমণ্ডল আছে, যেটা ইতিবাচকভাবে ছড়িয়ে পড়ে অর্থাৎ মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়। তার যে দিকটি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো মানুষকে তিনি সম্মান করেন। সেদিন প্রথমেই জানতে চাইলেন, ‘কী খাবেন?’ একটা কিছু হলেই চলবে বললাম। তিনি বললেন, ‘খাওয়া হলো স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপার, যেকোনো একটা কিছু হলে কীভাবে হবে?’ এরপর যোগ করলেন, ‘ভাত তো খাবেন, সঙ্গে কী রাখবো আর?’ তিনি ভেটকি মাছের পাতুরি অর্ডার দিলেন। খাওয়া তো মুখ্য নয়, আন্তরিকতাই আসল। যে সময়ে পৌঁছেছিলাম তখন লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছিলো। তিনি এটি খেয়াল রেখেছিলেন। মানুষ হিসেবে তিনি সত্যিই দারুণ।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশের পরিচালক হলেও নিজের প্রথম সিনেমা বানালেন টালিগঞ্জে, তার ওপর এতে অভিনয় ও প্রযোজনা করেছেন ওপার বাংলার সুপারস্টার জিৎ। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো না ব্যাপারটা?
সঞ্জয় সমদ্দার: স্বপ্নের চেয়েও বড় দিক হলো, এটা আমার জন্য সম্মানের। আমি খুব সৌভাগ্যবান যে, এমন একটি সুযোগ পেয়েছি এবং জিৎ দাদা আমাকে ডেকেছেন। এটি সত্যিই আনন্দের। নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে একটি পরিচ্ছন্ন ও ভালো সিনেমা নির্মাণের চেষ্টা করেছি। আমার ভাবনায় ছিলো– যদি ভালো কাজ করতে পারি তাহলে অন্য পরিচালকেরা অনুপ্রাণিত হবেন। আমার সমসাময়িক কিংবা পরে যারা নির্মাণে আসবেন তাদের মনে বিশ্বাস জন্মাবে যে, পরিচালকদের কোনো সীমান্ত থাকে না। তারা সুযোগ পেলে অন্যান্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজ করতে পারবেন।

‘মানুষ’ সিনেমার দৃশ্যে জিৎ ও অয়ন্যা (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘মানুষ’ গল্পটি মাথায় এলো কীভাবে, বাস্তবের কারো জীবনে কি এটি অনুপ্রাণিত?
সঞ্জয় সমদ্দার: করোনাকালে গল্পটি আমার মাথায় আসে। তখন আমরা একে অপরের সঙ্গে ফোনেই আলাপ করতাম বেশি। সেই সময় অনেকে দেখা হলেই বলতেন, এ যাত্রায় যদি কোনোভাবে বেঁচে যাই তাহলেই শুকরিয়া। তখন বুঝলাম, মানুষের জন্য বেঁচে থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জীবনে অনেক কিছু পেতে চাই, অনেক কিছু করতে চাই; কিন্তু কখনও কখনও মনে হয় জীবনটাই তো অনিশ্চিত! ফলে আমার মনে হলো, আমাদের জীবন দর্শন কিংবা আমরা যা যা ভাবি, সেসবের কোনো কিছুই মূলত আবশ্যকীয় নয়। পরিস্থিতির সঙ্গে সবই পাল্টে যায়। সেখান থেকেই মূলত ‘মানুষ’ গল্পটি মাথায় আসে। এতে বাবা-মেয়ের আবেগঘন কিছু মুহূর্ত আছে। এগুলোর শুটিং করতে গিয়ে আমার মেয়ে দিজুকে অনেক মিস করেছি। ওর বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। সিনেমাটির শিশুশিল্পী অয়ন্যাকে দেখলে আমার মেয়ের কথা মনে পড়তো।

‘মানুষ’ সিনেমার পোস্টারে জিৎ (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সিনেমাটির টাইটেল গান আপনারই লেখা। গল্প লেখার সময় কি এই ভাবনা ছিলো?
সঞ্জয় সমদ্দার: না। সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য তৈরি করে শুটিং শুরুর পর মনে হতে থাকে, সিনেমার মেজাজ তৈরির জন্য একটি গান দরকার। তখন গানটির ভাবনা মাথায় আসে। এটি সিনেমার মেজাজ তৈরির জন্য জুতসই লেগেছে। ‘আজকে যা ঠিক কালকে তা ভুল/মানুষ নিয়তির হাতের পুতুল’ লাইন দুটির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছি, আমরা হয়তো অনেকেই অনেক কিছু ভাবলেও নিয়তিকে কখনো এড়াতে পারি না।

বিদ্যা সিনহা মিম ও সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: যৌথ প্রযোজনা ছাড়া ভারতীয় সিনেমায় বাংলাদেশের পরিচালক ও অভিনেত্রী সচরাচর দেখা যায় না। ‘মানুষ’ সেদিক থেকে ব্যতিক্রম। সিনেমাটিতে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসিপি) মন্দিরা চরিত্রে বিদ্যা সিনহা মিমকে নির্বাচনের কথা বলুন।
সঞ্জয় সমদ্দার: যখন অভিনয়শিল্পী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো তখন জিৎ দাদা উল্লেখ করেন, দেশীয় পুলিশ অফিসারের মতো দেখতে এমন একজনকে লাগবে। তিনি বলেন, ‘মিমের উচ্চতা ভালো, তার সঙ্গে আমার কাজও হয়েছে আগে।’ তখনই মিমকে চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৮ সালে জিৎ দাদার প্রযোজনায় ‘সুলতান-দ্য সেভিয়ার’ সিনেমায় অভিনয় করেছে মিম। তাকে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে বললাম, গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র আছে, যদি তুমি অভিনয় করতে চাও। মিম বললো, ‘দাদা ঠিক আছে, তাছাড়া আপনার সঙ্গে তো আমার আগেও কাজ হয়েছে।’ আমার ‘মনের মানুষ’ নাটকে ছিলো মিম। মন্দিরা চরিত্রে তাকে বেশ মানিয়েছে। মিম থাকায় খুশি হয়ে গিয়েছিলাম এজন্য যে, আমার দেশের একজন অভিনয়শিল্পীকে পাচ্ছি। আমার দেশ থেকে আমি একাই গিয়েছিলাম। যেদিন মিমের সঙ্গে শুটিং করলাম মনে হলো, দেশের একটা মানুষ অন্তত আছে!’

‘মানুষ’ সিনেমার দৃশ্যে জিৎ ও সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: পশ্চিমবঙ্গের ১১৮টি সিনেমাহলে মুক্তি পেলো ‘মানুষ’। কেমন সাড়া পেলেন?
সঞ্জয় সমদ্দার: সিঙ্গেল স্ক্রিনের সিনেমাহল থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছি। বিভিন্ন সিনেমাহল ঘুরে দেখেছি, সংলাপের মাঝে মাঝে দর্শকেরা হাততালি দিচ্ছেন। সিনেমা উপভোগ শেষে পরিচালকের প্রশংসা করেছেন অনেকে। এটি একটি পারিবারিক সিনেমা, তাই পরিবারের সঙ্গে বসে বিভিন্ন বয়সী দর্শক উপভোগ করেছেন। ৬৫-৭০ বয়সী দম্পতিরাও সিনেমাহলে ‘মানুষ’ দেখেছেন। যেমনটা চেয়েছিলাম তেমনই হয়েছে।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশে এখন ভারতীয় সিনেমা মুক্তিতে বাধা নেই। তাছাড়া ‘মানুষ’ বাংলা সিনেমা। বাংলাদেশে কি এটি মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে?
সঞ্জয় সমদ্দার: ‘মানুষ’ বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা এখনো চলছে। যদি দেশে মুক্তি পায় তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না। সিনেমাটি দেখার পর দর্শকেরা ভালো-মন্দ দুটি কথা বলবেন, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। অপেক্ষায় আছি এখনো। তবে নিশ্চিতভাবে কিছু জানি না।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: নূর)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বেশকিছু টেলিভিশন নাটক পরিচালনা করেছেন আপনি। এরপর ওয়েব সিরিজ আর ওয়েব ফিল্ম বানিয়েছেন। এবার সিনেমা নির্মাণ করলেন। পরবর্তী লক্ষ্য কী?
সঞ্জয় সমদ্দার: নতুন অনেক কাজের কথাবার্তা চলছে। এখন সিনেমা আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই থাকতে চাই। সিনেমা অনেক বড় বিষয়। দুম করে বলে দিলাম আর হয়ে গেলো– বিষয়টি মোটেও তেমন না। তবে আগামী মাসের (ডিসেম্বর) মধ্যে নতুন কিছু একটার ঘোষণা দেওয়ার ইচ্ছে আছে। আমার পাণ্ডুলিপিগুলো প্রস্তুত আছে। সবসময় বিশ্বাস করি, কাজের মধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য একটা কাজ শেষ হওয়ার পর যতো দ্রুত সম্ভব আরেকটি কাজে যুক্ত হতে চাই।

পড়া চালিয়ে যান
Advertisement

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ