Connect with us

আলাপচারিতা

‘ওটিটি হলো নিজস্ব পছন্দ, সিনেমা হলের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না’

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

তারিক আনাম খান
তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

চার দশকের বেশি সময় ধরে মঞ্চনাটক, টেলিভিশন ও সিনেমায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নন্দিত অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক তারিক আনাম খান। অভিনয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ার তার। দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই অভিনেতা এবারের ঈদ উপলক্ষে কয়েকটি কাজ করেছেন। এ তালিকায় আছে বঙ্গবিডি ওয়েবের জন্য আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘সাদা প্রাইভেট’, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের সিনেমাওয়ালার জন্য ‘নয়া লায়লা নয়া মজনু’ ও ‘লাইক ফাদার লাইক সান’ এবং প্রসূন রহমানের রচনা ও পরিচালনায় আরটিভির ওয়েব ফিল্ম ‘জিরো পয়েন্ট’। সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছেন গুণী এই অভিনেতা-নির্মাতা।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: একসময় আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়তাম। এখন ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামে চোখ বুলাই। এক্ষেত্রে আপনার মতামত কী?
তারিক আনাম খান: শুরুতেই স্বীকার করে নিতে হচ্ছে, আমি নিজেও মাঝে মধ্যে এসব করি। সত্যি বলতে সময়ের সঙ্গে মানুষ চলে, সময়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায় সবাই। কিন্তু আমি পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ায় বিশ্বাসী নই। কেননা পত্রিকা মানে ছাপা আকারে যেসব রিপোর্ট হয়, সেগুলোর একটা অথেনটিসিটি থাকে, রেকর্ড থাকে, আর্কাইভ ভ্যালু থাকে। ছাপা খবরের সঙ্গে দৃষ্টি ও মস্তিষ্কের মধ্য দিয়ে আমাদের যে সম্পৃক্ততা গড়ে ওঠে তাতে অন্য একটা জায়গা তৈরি হয়। মানুষ ব্যক্তিগত জায়গা থেকে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে। পত্রিকায় খবর পড়া নিখাদ একটা ব্যাপার। কারণ এর মাঝে দায়িত্বশীলতা থাকে। কিন্তু ফেসবুকে দায়িত্বশীলতার অভাব আছে বলে আমার মনে হয়। আমি ফেসবুকে তখনই যাই যখন মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো নিউজ আছে, বিশেষ করে সমাজের কোনো দুঃসংবাদ বা কারও সুসংবাদ পেলে সেসবের খোঁজ নিতে ফেসবুকে যাই।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: নিজের অভিনীত নাটক কি ইউটিউবে বেশি দেখেন?
তারিক আনাম খান: টিভিতে নাটক দেখার জন্য যত সময় প্রয়োজন সেটি মেলে না। শুটিং থাকে, না হয় মহড়া বা মিটিং থাকে। ইউটিউবের সুবিধা হলো, আমার নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে আছে। আমি চাইলে সকাল-দুপুর-বিকাল যেকোনো সময় দেখে নিতে পারবো। একই বিষয় ওটিটির ক্ষেত্রেও। যখন মনে চাইবে তখন দেখে নিতে পারবো। কিন্তু টেলিভিশন নাটকের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। তবে আমার কাছে এখনও মোবাইলে নাটক দেখে মজা লাগে না। নাটক এখনও টেলিভিশনের বিষয়, টেলিভিশনেই দেখা উচিত। পরিবার নিয়ে যখন দেখা হয়, ওইটার মজা আর একা ফোনের মধ্যে দেখা আকাশ-পাতাল তফাৎ। কেউ হয়তো পাশ থেকে বলবে ভালো হয়েছে, কেউ বলবে ভালো হয়নি। তবে এখন ঘাড় নিচু করে মোবাইল ফোনে দেখে বলা যায় না ভালো হয়েছে কী হয়নি। ছোট স্ক্রিন বরাবরই ছোট স্ক্রিন।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সেই ১৯৭৩-৭৪ সালে অভিনয় শুরু করেছিলেন। এখনও আপনি ফিট। প্রতিদিন ব্যায়াম করেন?
তারিক আনাম খান: যতটুকু ব্যায়াম করলে নিজের স্বাভাবিক জীবন ছন্দে রাখা যায় ততটুকুই করি। অভিনয় যেহেতু আমার পেশা, সেক্ষেত্রে নিজেকে যদি ফিট না রাখি, সেটে গিয়ে ঘুমাই, কাজের স্পৃহা না থাকে তাহলে পেশাদার জগত আমাকে গ্রহণ করবে না। এটি খুব সোজাসাপ্টা কথা। আমি অভিনয় করি এবং বিনিময়ে টাকা পাই। আমি মনে করি, পেশাদারিত্বের বড় দিক হলো নিজেকে কার্যকর এবং তৈরি করে রাখা।

শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও বর্তমান সময়ের সঙ্গে মানানসই থাকা দরকার। অভিনয়ের ২০ বছর আগের ট্রেন্ড এবং সাম্প্রতিক সময়ের ট্রেন্ড কিন্তু বদলেছে। সেই ট্রেন্ড যদি ধরতে না পারি তাহলে পিছিয়ে পড়বো। তাছাড়া অভিনয় এখন অনেক বেশি মস্তিষ্ক প্রসিদ্ধ, চিন্তা-চেতনা থেকে আসে। আগে অনেক আবেগ দিয়ে এটি হতো। বাংলাদেশের নাটক ও সিনেমা দেখেছি, এখন অনেক সূক্ষ্ণ হয়ে গেছে। সেভাবে মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে, বর্তমান সময়ের সঙ্গে মিশতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ নবীনদের সঙ্গে আমার অনেক ভালো পারস্পরিক আদান-প্রদান হয়। এটি খুব দরকার। একইসঙ্গে যেহেতু আমি একটু বয়স্কদের কাতারে চলে গেছি, তাই শারীরিকভাবে ফিট থাকা জরুরি। কিন্তু বয়সের একটা ভার তো আছেই। আমি চাইলেও পাঁচ মাইল দৌড়াতে পারবো না। তাই আমাকে নিয়ে নির্মাতাদের সেরকম করেই ভাবতে হবে।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ:সাম্প্রতিক সময়ে হাঁটুর বয়সী নায়িকাদের নায়ক হয়েছেন আপনি। এর অনুভূতি কেমন?
তারিক আনাম খান: যখন অভিনয় করি তখন আমার সহশিল্পী পিচ্চি নাকি নায়িকা তা ভাবি না। আমার কাছে প্রতিটি মানুষ সমান। আমার কাছে যেসব চরিত্র আসে সেগুলো আমার কাছে স্রেফ চরিত্র। সেগুলোকে চরিত্র হিসেবেই দেখি। আর অভিনয়টা ওই মুহূর্তে জীবন্ত করাটাই আমাদের শিল্পীদের কাজের মধ্যে পড়ে। সেজন্য এমন নয় যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে নায়িকার সঙ্গে আমাকে প্রেম করতে হবে। তখন আমার জীবনের অভিজ্ঞতা টেনে আনি। সেটি হতে পারে আমার সমবয়সী প্রেম। অভিনয়ের ক্ষেত্রে সত্যিকারের আবেগটা দিতে হলে ওই মুহূর্তে বাকি সব ভুলে যাওয়াটা জরুরি মনে হয়।

সিনেমাওয়ালা নিউজ:আপনাকে কি নির্মাতারা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পেরেছেন?
তারিক আনাম খান: বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু কাজ পাই তাতে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। এটাই আমাকে আনন্দ দেয় যে, এখনও কাজ করার সুযোগ আছে। এখন অনেকেই ভাবে আমাকে দিয়ে বড় পরিসরে কাজ করাবে। এগুলো আমাকে প্রাণিত করে, উজ্জীবিত করে। যে কারণে যেকোনো সেটে গিয়ে পরিচালক ও সহশিল্পীদের সঙ্গে অনেক কথা বলে পরিস্থিতিকে যুক্তিযুক্তভাবে স্বাভাবিক আবেগ দেওয়ার চেষ্টা করি। হয়তো সেজন্য অনেকে আমাকে নিয়ে কাজ করার কথা ভাবে।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ:এখন কী কী কাজ নিয়ে ব্যস্ত?
তারিক আনাম খান: হইচই-এর একটি কাজ তো হাতে আছেই এবং ওটিটির আরও বেশ কয়েকটি কাজ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। আমি সিনেমায় বেশি আগ্রহী। কারণ আমি মনে করি, সিনেমায় সত্যিকারভাবে নিজেকে দেখানো যায়। একটা জায়গা থেকে শুরু হয়ে একটা জায়গায় শেষ হয়। ফলে চরিত্রের পরিভ্রমণটা বুঝতে পারি। সিনেমা আমার কাছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। এতে আবিষ্কার করার সুযোগ থাকে বেশি। শারীরিকভাবে বহনের একটা ব্যাপার থাকে।

মঞ্চনাটক বা সিনেমাকে আমি নিজের মনে করি। এই দুটি শাখায় কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য পাই। বড় পর্দার ক্ষেত্রে মাথায় থাকে যে কতো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কাজটা করা যায়। সুতরাং সিনেমা আমাকে বিশেষভাবে টানে। বেশ কয়েকটি সিনেমায় কাজ করছি। অনেক সিনেমা তৈরি হয়েও আছে। এখন পর্যন্ত একটু ভিন্নধারার সিনেমাগুলো করছি। তার মানে এই নয় যে সেসবের মধ্যে বাণিজ্যিক উপাদান নেই। একেবারে গতানুগতিক বাণিজ্যিক ও পুরনো ধাঁচের কাজকে বর্জন করি। তবে আধুনিক চিন্তা-চেতনা এবং বাণিজ্যের মিশেলে কাজ করার খুব ইচ্ছে আছে। আর টেলিভিশন নাটক, ইউটিউবের জন্য কনটেন্ট, বিজ্ঞাপনেও কাজ করছি। সবচেয়ে বড় বিষয় আমার হাতে কাজ আছে।

সিনেমাওয়ালা নিউজ:প্রায় এক যুগ পর ‘গুলশান এভিনিউ’ ধারাবাহিকের দ্বিতীয় সিজন এনেছেন। আপনি এর নির্বাহী প্রযোজক। একসময় নিয়মিত বিজ্ঞাপন নির্মাণ করতেন। সিনেমা বা নাটক পরিচালনা করেননি কেনো?
তারিক আনাম খান: প্রথম কথা হলো, আমি বিজ্ঞাপন নির্মাণে বেশি যুক্ত ছিলাম। সত্যি বলতে, আমাদের মিডিয়ায় ভালো কাজ করার জন্য যত বাজেট প্রয়োজন ততটা খুব একটা মেলে না। আমি মনে করি, একজন পরিচালকের পরিশ্রম অভিনয়শিল্পীদের চেয়ে অনেক বেশি। অনেক চিন্তা-ভাবনা করতে হয় তাদের। শুটিংয়ের অনেক আগে থেকে পরিচালকের কাজ শুরু হয়। তারা সময়ের দাম কতটুকু পায় তা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। এজন্য এখন পরিচালকরা ওটিটি ও ইউটিউবসহ অন্য কোন ফর্ম্যাটে কাজ করা যায় সেসব ভাবছেন। কেউ সিনেমা পেতে চেষ্টা করছেন। এটি তখন সফল হবে যখন একজন লোককে ওই পেশার মধ্যে নির্দিষ্ট করে ফেলতে পারবো। তাকে যদি বেঁচে থাকার জন্য যেসব নূন্যতম দরকার সেগুলো দিতে না পারি তাহলে তো লাভ নেই। সেই কারণে হয়তো পরিচালনা থেকে ধীরে ধীরে পিছিয়ে এসেছি। মঞ্চের কাজ করতে গিয়ে যতটা রোমাঞ্চ অনুভব করি, ততটা উত্তেজনা এখনও টেলিভিশন মিডিয়ায় কাজ করে পাইনি। হয়তো সিনেমায় পাবো। আর বিজ্ঞাপনে অন্যরকম একটা মজা আছে। যেমন ৩০-৪০ সেকেন্ডের মধ্যে একটা গল্প বলা। মূলত বিজ্ঞাপনের কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ততা ছিলো বলেই পরিচালনায় আসা হয়নি। এখন তো পরিচালকদের মূল্যায়ন খুব কম হয়।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ:ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে কি সিনেমা হলের বিকল্প মনে করেন?
তারিক আনাম খান: আদৌ না। আমার কাছে মনে হয়, সিনেমা হল এবং ওটিটি দুটি ভিন্ন বিষয়। ওটিটি বাড়িতে দেখা মানে এটি আমার নিজস্ব পছন্দ। কিন্তু সিনেমা হলের ক্ষেত্রে আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে দেখতে হয়। এই যে একসঙ্গে ২০০-৩০০ লোক সিনেমা দেখতে বসা, সিনেমা হলের লাইট বন্ধ হওয়া, সাউন্ট সিস্টেম; এখনও পর্যন্ত তুলনা করার মতো না। টেলিভিশনে যদি হাই-ফাই সাউন্ডও থাকে, তবুও সিনেমা হলের সঙ্গে মেলাতে পারি না। সিনেমা হলের আরও অনেক ব্যাপার আছে। যেমন- সিনেমা হলে সবাই একসঙ্গে হাসতে থাকা, শ্বাস ফেলা ইত্যাদি। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এখনো পর্যন্ত বাসায় বসে দেখার মধ্যে সীমিত। এজন্য ওটিটি আমার একটা পছন্দ। আর সিনেমা হলে কিন্তু অনেক জেনে বুঝে যাই।

সিনেমাওয়ালা নিউজ:আপনার নাট্যদল নাট্যকেন্দ্রে কাজ করে তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসান ও মোশাররফ করিম তারকা হয়েছেন। এটা ভাবলে কেমন লাগে?
তারিক আনাম খান: অনুভূতি অবশ্যই ভালো। যখন মোশাররফ করিম বলে আমার কাছ থেকে শিখেছে, আমি তার গুরু, তখন দারুণ অনুভূতি জাগে মনে। অভিনয় কিংবা নাচ-গান শেখার জন্য কিন্তু গুরু লাগে। কারও না কারও কাছ থেকে শিখতে হয়। আমি নিজেও শিখেছি। কারও কাছ থেকে ‘ক’ শিখেছি, তারপর ‘ক’ দিয়ে কাক লেখা শিখেছি। কারখানা লেখা শিখেছি। বড় হয়েছি ধীরে ধীরে। আমি মনে করি, তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসান ও মোশাররফ করিমের যোগ্যতা না থাকলে তারা পারতেন না। কম মানুষকে তো আর শেখাইনি। তৌকীর, জাহিদ ও মোশাররফ অনেকদিন ধরে টিকে থেকে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের জেদ ছিলো কাজ করে যাবে। অনেকের হয়তো মাঝপথে গিয়ে ছেদ পড়েছে, ফলে অন্য পেশায় চলে গেছে। শেখার পর নিজেকে এগিয়ে নিতে প্রক্রিয়া লাগে। আমার কাজ ছিলো অভিনয়ের বেসিকটা শিখিয়ে দেওয়া। টেকনিক, বলার স্বর ও বডি লাইনিং কী হবে, কোন এক্সপ্রেশনে কী হয়; এসব বুঝিয়েছি। ভয়েস থেকে কী উৎপন্ন করতে হবে তা জানতে একজন অভিনয়শিল্পীকে নিজের এবং নিজের শরীরকে জানা থাকা চাই। সেগুলো নাট্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের শিখিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। তারপর হয়তো তারা সেসব গ্রহণ করে নিজেদের মতো করে এগিয়েছে। সুতরাং এটাই প্রক্রিয়া।

কোনো সেটে গেলে অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তারা কীভাবে নিজেদের অতিক্রম করে আরও বড় জায়গায় যেতে পারে সেজন্য যতটা সম্ভব উদ্বুদ্ধ করি। প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীকে একসময় নিজেকে অতিক্রম করতে হয়। সে যদি নিজে থেকে না এগিয়ে যায়, তাহলে শত চেষ্টা করেও তাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে নেওয়া যায় না। নিজের বোধ ও মেধা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং তাকে প্রতিটি দিনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি দেখেছি, এমন অনেক অভিনয়শিল্পী কোনো প্রস্তুতি না নিয়ে স্ক্রিপ্ট কিংবা চরিত্র না জেনে সেটের মধ্যে ঢুকে যায়। অনেকে আছে সবসময় একই রকম মেকআপ নিচ্ছে। যে মেয়েটি সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় কাজ করে তার চেহারা তো তামাটে হয়ে যাবে। সে তো আর ফর্সা থাকতে পারে না। এসব প্রস্তুতি বেশিরভাগের থাকে না। তারা না এগোতে পারলে আমি নিজেও ভালো কাজ করতে পারবো না। সেজন্য তাদের অনুপ্রাণিত রাখার চেষ্টা করি। অভিনয়ের সহজ বিজ্ঞান হলো, এটি কখনও একা করা যায় না। অ্যাক্টিং ইজ অলওয়েজ রিঅ্যাক্টিং।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ:আপনাদের সময় তো অনেক অর্থনৈতিক কষ্ট ছিল। তবুও মহড়া করেছেন। মঞ্চনাটকে আশি ও নব্বইয়ের দশকটা দারুণ ছিল। এখন মঞ্চনাটকের জনপ্রিয়তা আগের মতো নেই কেনো?
তারিক আনাম খান: আমরা যখন মঞ্চনাটক শুরু করেছিলাম সেই সময়ের সঙ্গে এখনকার অনেক পার্থক্য। ১৯৭৩ সালে যদি মঞ্চনাটক শুরু হয়ে থাকে তাহলে প্রায় ৫০ বছর হতে চললো। গত ৫০ বছরে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট ও মানুষজন অনেক পাল্টেছে। আগে বেইলি রোডে রিকশা দিয়ে খুব সহজে যাওয়া যেতো বা বাস থেকে নেমে হেঁটে যাওয়া যেতো। কিন্তু এখন সেটি খুব মুশকিল। তখন টেলিভিশিন মিডিয়া ছিলো একটা। এখন টেলিভিশনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কাজও বেড়ে গেছে। অনেক অভিনয়শিল্পী মঞ্চের গণ্ডি পেরিয়ে টেলিভিশনে কাজ করছে। যেহেতু এর সঙ্গে অর্থনীতি ব্যাপারটি জড়িয়ে পড়েছে। টেলিভিশনে কাজ করলে টাকা আসে। মঞ্চনাটকের জন্য অনেক সময় দিতে হয়, মহড়া করতে হয়, বারবার যেতে হয়, কমিটমেন্ট থাকে। আমার দৃষ্টিতে মঞ্চের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, এটি শিল্পীদের সূতিকাগার। মঞ্চ থেকে শেখার অনেক কিছু থাকে। মঞ্চনাটকে একজন অভিনেতা নিজেকে প্রতিদিন নতুনভাবে আবিষ্কার করে। নতুনভাবে চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকি নেয়। টেভিলিশন বা সিনেমা একেবারে আলাদা। এসব জায়গায় নিখুঁতভাবে কাজ করতে হয়। মহড়া করে হোক বা যেভাবে হোক জায়গাটা তৈরি করতে হয়। নির্দিষ্ট জায়গায় চোখ বন্ধ হবে তো বন্ধ হতেই হবে, পজ দিতে হলে পজ লাগবেই। এসব কারণে সিনেমা বা টেলিভিশন অভিনয়শিল্পীরা অনেক বেশি পরিণত। আমি মনে করি, আমাদের মিডিয়া তৈরির ঘর অনেক বেশি বড় হয়ে গেছে। ফলে পরিচালক, অভিনয়শিল্পী, নাট্যকারদের কোথাও একটা ঘাটতি আছে। কেউ যখন নাটক বানাতে যায় তার অভিনেতা-অভিনেত্রী দরকার ঠিক আছে, কিন্তু সর্বনিম্নটুকু দিতে পারলেই যেন হলো, সর্বোচ্চটায় কেউ যেতে পারছে না। এর কারণ আমাদের এখানে ইনস্টিটিউশন নেই। পাশের দেশ ভারতে ঠিকই আছে। তারা কিন্তু ভারতের ইন্ডাস্ট্রিকে অনেকাংশে যোগ্য করে তুলেছে। আমাদের সময়ে হুমায়ুন ফরীদি ও রাইসুল ইসলাম আসাদ আমার প্রতিযোগী ছিল, কিন্তু সেটা সুস্থ গতিতে। ওদের নাটক দেখতাম এবং নিজেকে বলতাম- আমাকে ভালো করতে হবে।

এখন আমাদের নিজেদের কনটেন্টই তো নিজেরা দেখতে পারি না কিংবা দেখা হয় না। টেলিভিশন চ্যানেলের অনেক দায়িত্ব ছিলো, কিন্তু সম্মানের সঙ্গে বলতে চাই, আমার দৃষ্টিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। বাণিজ্যকে মাথায় নিতেই হবে। কিন্তু পাশাপাশি শিল্প ও বাণিজ্যের সম্মিলনটা দরকার। বর্তমান সময়ে মানুষ কী চায় সেজন্য তৈরি থাকা প্রয়োজন। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এসব চূড়ান্তভাবে আমরা মিস করেছি বলে আমার মনে হয়। মঞ্চনাটকে সেই অর্থে এখন আমার নিজের জন্য সময় দেওয়া মুশকিল। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে বড় পর্দা এবং ওটিটিতে কাজ করবো। আমি কি মঞ্চে সময় দিতে পারবো? সেই সময় অনেকের ক্ষেত্রে সীমিত বলে মনে করি। আমার মনে হয়, মঞ্চনাটক এখন বাঁচতে পারে যদি আমরা এটি পেশাদারিত্বের সঙ্গে গ্রহণ করি। কেউ শো করলে উপার্জন হতে হবে। ছোট করে হলেও শুরুটা কিন্তু করতে হবে। দেখবেন আগামী ১০ বছরের মধ্যে চিত্রটা বদলে যাবে। বিভিন্ন ভেন্যু তৈরি করতে হবে। শুধু শিল্পকলা একাডেমির ওপর নির্ভর করলে হবে না। গুলশানে দুটি, বনানীতে একটি, ধানমন্ডিতে দুটি এবং উত্তরায় মঞ্চ দরকার। স্থানীয়রাই মঞ্চনাটক দেখতে যাবে। উত্তরার লোকজন তো শিল্পকলায় গিয়ে সময় কাটাবে না।

তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান (ছবি: কাজী সাজ্জাদ)

সিনেমাওয়ালা নিউজ:রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। এর আগেও তো শিক্ষকতা করেছেন…
তারিক আনাম খান: রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস এখনও শুরু হয়নি। আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়েছি। জাবি’তে সেলিম আল দ্বীন স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সাভারে গিয়ে ক্লাস নেওয়াটা সহজ ব্যাপার ছিলো না। নিজের পেশাগত ব্যস্ততারও বিষয় ছিলো। সেখানে এক-দুই বছর ছিলাম। পরে এক্সটার্নাল হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু পার্টটাইম শিক্ষকের চেয়ে নিয়মিত শিক্ষক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সৃজনকলায় বিশেষ করে অভিনয়, নাচ, গানের ক্ষেত্রে একক জনের একেক ধরনের ভোকাল কোয়ালিটি, উচ্চতা ও দৃষ্টি থাকে। কিন্তু আলাদা অ্যাপ্রোচ করতে হয়। সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আছেন তারা আমাকে নিয়েছেন। হয়তো নিয়মিত ক্লাস নিতে পারবো না। তবে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো যদি ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো কাজে লাগে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে পরে অন্য চাকরি করলে ঠিক আছে। কিন্তু চাকরি করার মানসিকতা থাকলে অভিনয় করাটা খুব কঠিন। তাই একটু ঝুঁকি নিতে হবে। হয়তো ব্যর্থও হতে পারে তারা। সেটি মেনে নিতে হবে।

সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয় কারা পড়বে জানি না, তবে আমার আরেকটি ইচ্ছে অ্যাক্টিং ইনস্টিটিউট করা। ছয় মাসের একটি কোর্স রেখে নতুন একটি ব্যাচ মিডিয়ায় পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে গতানুগতিক মঞ্চনাটকের জন্য নয়; সিনেমা, টেলিভিশন এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে মাথায় রেখে। বিদেশ থেকেও বিশেষজ্ঞ নিয়ে কাজ করবো বলে আশা আমার। এ বিষয়ে কয়েকজনের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। আমরা সহযোগিতাও পাবো। তাই আপাতত একটি বড় জায়গা খুঁজছি, যেখানে এমন একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা যায়। কারণ আমি মনে করি, দেশ আমাকে অনেক দিয়েছে, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।

আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। ১৯৭১ সালে নয় মাস আমরা নিজেরাই নাটক লিখে ক্যাম্পে ক্যাম্পে অভিনয় করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছি। তখন অদ্ভূত সময় ছিলো। নাটকে যখন পাকিস্তানির চরিত্রে অভিনয় করতাম এবং আমাকে মুক্তিবাহিনী ধরতো তখন জয় বাংলা স্লোগান মুখে আনার জন্য কাউকে বলতে হতো না। সব মুক্তিযোদ্ধা হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে জয় বাংলা বলতো। এভাবে অভিজ্ঞতা নিয়েই কিন্তু থিয়েটার হয়। আমার মনে হয়, আমি অনেক পেয়েছি। যতোটুকু ভালোবাসা ও সামাজিক অবস্থান পেয়েছি, বাংলাদেশ না হলে সেসব কতটুকু পেতাম তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। ‍সুতরাং সৃষ্টিকর্তা মহান। তাই আমার মনে হয়, দেশকে দেওয়ার জন্য আমার অনেক কিছু আছে। এটি আমার দায়িত্ব।

পড়া চালিয়ে যান
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আলাপচারিতা

বাংলাদেশি হয়ে কলকাতার সিনেমা পরিচালনা করতে পারা আমার জন্য সম্মানের: সঞ্জয় সমদ্দার

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: অপূর্ব ফটোগ্রাফি)

ওপার বাংলার সুপারস্টার জিতের অভিনয় ও প্রযোজনায় ‘মানুষ’ মুক্তি পেয়েছে গত ২৪ নভেম্বর। এর মাধ্যমে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করলেন পরিচালক সঞ্জয় সমদ্দার। তিনিই সিনেমার গল্প লিখেছেন। এখন ওপার বাংলার দর্শকদের প্রশংসায় ভাসছেন এই নির্মাতা। তবে মেয়ের অসুস্থতার কারণে দেশে ফিরে এসেছেন। সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় ১০ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: দেশে চলেন এলেন যে?
সঞ্জয় সমদ্দার: কলকাতায় একটি প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু আমার মেয়ে দিজুর অসুস্থতার কথা জানানোর পর জিৎ দাদা বলেন, ‘আগে সন্তানের খেয়াল রাখো।’ তিনি সবসময় পরিবারকে প্রাধান্য দেন। এটা তার বড় একটা গুণ।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সিনেমা মুক্তির পর জিৎ কী বললেন?
সঞ্জয় সমদ্দার: জিৎ দাদা অনেক খুশি। তিনি লাইভে আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। আমার সঙ্গে আবার কাজ করার ইচ্ছের কথাও জানিয়েছেন। তার মুখে এটা শোনার পর ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। একজন সুপারস্টারের মুখে আলাদাভাবে আমার কথা শুনে খুব ভালো লেগেছে।

সঞ্জয় সমদ্দার ও জিৎ (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: জিতের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা নিশ্চয়ই ভোলেননি?
সঞ্জয় সমদ্দার: জিৎ দাদার সঙ্গে সেই সাক্ষাৎ আজীবন মনে থাকবে। কলকাতায় গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্টের গোপাল মাদনানি দাদার রুমে বসলাম। জিৎ দাদা লাঞ্চ করে এলেন। তিনি একজন প্রাণবন্ত মানুষ। তার একটা পরিমণ্ডল আছে, যেটা ইতিবাচকভাবে ছড়িয়ে পড়ে অর্থাৎ মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়। তার যে দিকটি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো মানুষকে তিনি সম্মান করেন। সেদিন প্রথমেই জানতে চাইলেন, ‘কী খাবেন?’ একটা কিছু হলেই চলবে বললাম। তিনি বললেন, ‘খাওয়া হলো স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপার, যেকোনো একটা কিছু হলে কীভাবে হবে?’ এরপর যোগ করলেন, ‘ভাত তো খাবেন, সঙ্গে কী রাখবো আর?’ তিনি ভেটকি মাছের পাতুরি অর্ডার দিলেন। খাওয়া তো মুখ্য নয়, আন্তরিকতাই আসল। যে সময়ে পৌঁছেছিলাম তখন লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছিলো। তিনি এটি খেয়াল রেখেছিলেন। মানুষ হিসেবে তিনি সত্যিই দারুণ।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশের পরিচালক হলেও নিজের প্রথম সিনেমা বানালেন টালিগঞ্জে, তার ওপর এতে অভিনয় ও প্রযোজনা করেছেন ওপার বাংলার সুপারস্টার জিৎ। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো না ব্যাপারটা?
সঞ্জয় সমদ্দার: স্বপ্নের চেয়েও বড় দিক হলো, এটা আমার জন্য সম্মানের। আমি খুব সৌভাগ্যবান যে, এমন একটি সুযোগ পেয়েছি এবং জিৎ দাদা আমাকে ডেকেছেন। এটি সত্যিই আনন্দের। নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে একটি পরিচ্ছন্ন ও ভালো সিনেমা নির্মাণের চেষ্টা করেছি। আমার ভাবনায় ছিলো– যদি ভালো কাজ করতে পারি তাহলে অন্য পরিচালকেরা অনুপ্রাণিত হবেন। আমার সমসাময়িক কিংবা পরে যারা নির্মাণে আসবেন তাদের মনে বিশ্বাস জন্মাবে যে, পরিচালকদের কোনো সীমান্ত থাকে না। তারা সুযোগ পেলে অন্যান্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজ করতে পারবেন।

‘মানুষ’ সিনেমার দৃশ্যে জিৎ ও অয়ন্যা (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘মানুষ’ গল্পটি মাথায় এলো কীভাবে, বাস্তবের কারো জীবনে কি এটি অনুপ্রাণিত?
সঞ্জয় সমদ্দার: করোনাকালে গল্পটি আমার মাথায় আসে। তখন আমরা একে অপরের সঙ্গে ফোনেই আলাপ করতাম বেশি। সেই সময় অনেকে দেখা হলেই বলতেন, এ যাত্রায় যদি কোনোভাবে বেঁচে যাই তাহলেই শুকরিয়া। তখন বুঝলাম, মানুষের জন্য বেঁচে থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জীবনে অনেক কিছু পেতে চাই, অনেক কিছু করতে চাই; কিন্তু কখনও কখনও মনে হয় জীবনটাই তো অনিশ্চিত! ফলে আমার মনে হলো, আমাদের জীবন দর্শন কিংবা আমরা যা যা ভাবি, সেসবের কোনো কিছুই মূলত আবশ্যকীয় নয়। পরিস্থিতির সঙ্গে সবই পাল্টে যায়। সেখান থেকেই মূলত ‘মানুষ’ গল্পটি মাথায় আসে। এতে বাবা-মেয়ের আবেগঘন কিছু মুহূর্ত আছে। এগুলোর শুটিং করতে গিয়ে আমার মেয়ে দিজুকে অনেক মিস করেছি। ওর বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। সিনেমাটির শিশুশিল্পী অয়ন্যাকে দেখলে আমার মেয়ের কথা মনে পড়তো।

‘মানুষ’ সিনেমার পোস্টারে জিৎ (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সিনেমাটির টাইটেল গান আপনারই লেখা। গল্প লেখার সময় কি এই ভাবনা ছিলো?
সঞ্জয় সমদ্দার: না। সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য তৈরি করে শুটিং শুরুর পর মনে হতে থাকে, সিনেমার মেজাজ তৈরির জন্য একটি গান দরকার। তখন গানটির ভাবনা মাথায় আসে। এটি সিনেমার মেজাজ তৈরির জন্য জুতসই লেগেছে। ‘আজকে যা ঠিক কালকে তা ভুল/মানুষ নিয়তির হাতের পুতুল’ লাইন দুটির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছি, আমরা হয়তো অনেকেই অনেক কিছু ভাবলেও নিয়তিকে কখনো এড়াতে পারি না।

বিদ্যা সিনহা মিম ও সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: যৌথ প্রযোজনা ছাড়া ভারতীয় সিনেমায় বাংলাদেশের পরিচালক ও অভিনেত্রী সচরাচর দেখা যায় না। ‘মানুষ’ সেদিক থেকে ব্যতিক্রম। সিনেমাটিতে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসিপি) মন্দিরা চরিত্রে বিদ্যা সিনহা মিমকে নির্বাচনের কথা বলুন।
সঞ্জয় সমদ্দার: যখন অভিনয়শিল্পী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো তখন জিৎ দাদা উল্লেখ করেন, দেশীয় পুলিশ অফিসারের মতো দেখতে এমন একজনকে লাগবে। তিনি বলেন, ‘মিমের উচ্চতা ভালো, তার সঙ্গে আমার কাজও হয়েছে আগে।’ তখনই মিমকে চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৮ সালে জিৎ দাদার প্রযোজনায় ‘সুলতান-দ্য সেভিয়ার’ সিনেমায় অভিনয় করেছে মিম। তাকে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে বললাম, গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র আছে, যদি তুমি অভিনয় করতে চাও। মিম বললো, ‘দাদা ঠিক আছে, তাছাড়া আপনার সঙ্গে তো আমার আগেও কাজ হয়েছে।’ আমার ‘মনের মানুষ’ নাটকে ছিলো মিম। মন্দিরা চরিত্রে তাকে বেশ মানিয়েছে। মিম থাকায় খুশি হয়ে গিয়েছিলাম এজন্য যে, আমার দেশের একজন অভিনয়শিল্পীকে পাচ্ছি। আমার দেশ থেকে আমি একাই গিয়েছিলাম। যেদিন মিমের সঙ্গে শুটিং করলাম মনে হলো, দেশের একটা মানুষ অন্তত আছে!’

‘মানুষ’ সিনেমার দৃশ্যে জিৎ ও সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় (ছবি: গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: পশ্চিমবঙ্গের ১১৮টি সিনেমাহলে মুক্তি পেলো ‘মানুষ’। কেমন সাড়া পেলেন?
সঞ্জয় সমদ্দার: সিঙ্গেল স্ক্রিনের সিনেমাহল থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছি। বিভিন্ন সিনেমাহল ঘুরে দেখেছি, সংলাপের মাঝে মাঝে দর্শকেরা হাততালি দিচ্ছেন। সিনেমা উপভোগ শেষে পরিচালকের প্রশংসা করেছেন অনেকে। এটি একটি পারিবারিক সিনেমা, তাই পরিবারের সঙ্গে বসে বিভিন্ন বয়সী দর্শক উপভোগ করেছেন। ৬৫-৭০ বয়সী দম্পতিরাও সিনেমাহলে ‘মানুষ’ দেখেছেন। যেমনটা চেয়েছিলাম তেমনই হয়েছে।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বাংলাদেশে এখন ভারতীয় সিনেমা মুক্তিতে বাধা নেই। তাছাড়া ‘মানুষ’ বাংলা সিনেমা। বাংলাদেশে কি এটি মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে?
সঞ্জয় সমদ্দার: ‘মানুষ’ বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা এখনো চলছে। যদি দেশে মুক্তি পায় তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না। সিনেমাটি দেখার পর দর্শকেরা ভালো-মন্দ দুটি কথা বলবেন, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। অপেক্ষায় আছি এখনো। তবে নিশ্চিতভাবে কিছু জানি না।

সঞ্জয় সমদ্দার (ছবি: নূর)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: বেশকিছু টেলিভিশন নাটক পরিচালনা করেছেন আপনি। এরপর ওয়েব সিরিজ আর ওয়েব ফিল্ম বানিয়েছেন। এবার সিনেমা নির্মাণ করলেন। পরবর্তী লক্ষ্য কী?
সঞ্জয় সমদ্দার: নতুন অনেক কাজের কথাবার্তা চলছে। এখন সিনেমা আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই থাকতে চাই। সিনেমা অনেক বড় বিষয়। দুম করে বলে দিলাম আর হয়ে গেলো– বিষয়টি মোটেও তেমন না। তবে আগামী মাসের (ডিসেম্বর) মধ্যে নতুন কিছু একটার ঘোষণা দেওয়ার ইচ্ছে আছে। আমার পাণ্ডুলিপিগুলো প্রস্তুত আছে। সবসময় বিশ্বাস করি, কাজের মধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য একটা কাজ শেষ হওয়ার পর যতো দ্রুত সম্ভব আরেকটি কাজে যুক্ত হতে চাই।

পড়া চালিয়ে যান

আলাপচারিতা

ভক্তদের ভালোবাসার কথা ভাবলে নীরবে আমার চোখে জল চলে আসে: নাসিরউদ্দিন খান

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: ফেসবুক)

‘সিন্ডিকেট’ ও ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ ওয়েব সিরিজের সুবাদে অভিনেতা নাসিরউদ্দিন খানের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছে তার নতুন সিনেমা ‘প্রহেলিকা’। এতে ক্লাসিক্যাল সংগীতজ্ঞ জামশেদ চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত সিনেমাটি নিয়ে দারুণ সাড়া পাচ্ছেন তিনি। সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় ১০ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘প্রহেলিকা’য় আপনার চরিত্রের কারিশমা কী?
নাসিরউদ্দিন খান: কারিশমা কী ঠিক জানি না। এখানে আমার চরিত্রটি একটু আলাদা। সে একজন ক্লাসিক্যাল সংগীতজ্ঞ। বাকিটা দর্শকরা সিনেমাহলেই দেখছেন।

‘প্রহেলিকা’ সিনেমায় নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: রঙ্গন মিউজিক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘প্রহেলিকা’য় মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন হলো?
নাসিরউদ্দিন খান: সত্যি বলতে, তার সঙ্গে কাজ করে আমি আপ্লুত। তিনি আমাদের দেশের অনেক পুরনো এবং খুবই ভালো অভিনেতা। আমরা তাকে নানামাত্রিক চরিত্রে দেখেছি। ‘প্রহেলিকা’র শুটিংয়ে যাওয়ার আগেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। শুটিং শুরুর আগে প্রায় ৮-১০ বার আমাদের দেখা হয়েছে। আমরা রিহার্সেল করেছি, কথাবার্তা বলেছি, একজন আরেকজনকে জেনেছি। তখন বুঝলাম লোকটা অদ্ভুত! দূর থেকে অন্যরকম মনে হলেও পরে মিশতে গিয়ে দেখি মাহফুজ ভাই একজন অসাধারণ মানুষ। তিনি অন্যদের অনেক সম্মান দেন। তিনি যেহেতু একজন পরিচালকও, তার কাছ থেকে অনেক টিপস পেয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, তার কাছ থেকে সম্মান পেয়েছি। এজন্য মাহফুজ ভাইয়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘প্রহেলিকা’য় চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন আপনি। নিখাদ রোমান্টিক সিনেমায় কাজের প্রস্তাব পেলে নায়িকা হিসেবে কাকে চাইবেন?
নাসিরউদ্দিন খান: এটি স্ক্রিপ্টের ওপর নির্ভর করবে। স্ক্রিপ্টে আমার বয়স ৬০ বছর থাকলে সহশিল্পী দরকার হবে একরকম। আর আমার বয়স ৪০ বছর হলে স্বাভাবিকভাবেই আরেক বয়সের নায়িকা লাগবে। নির্দিষ্ট কোনো নায়িকা কিংবা অভিনেত্রী নয়, অবশ্যই স্ক্রিপ্টের প্রয়োজন অনুযায়ী একজন হলেই চলবে।

‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ ওয়েব সিরিজে নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনার ক্যারিয়ার অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে বলে মনে করেন?
নাসিরউদ্দিন খান: কখনোই এমন মনে হয় না আমার। কারণ সব ফলেরই পাঁকার একটা সময় থাকে। আমার ফল হয়তো তখন পেঁকেছে কিংবা পর্দার সামনে কাজ করার সময় হয়েছে।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: চাকরি করেও অভিনয় চালিয়ে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা কোথায়?
নাসিরউদ্দিন খান: একজন মানুষ একসঙ্গে ছয়-সাতটি কাজও করতে পারে। তবে কিন্তু আমি পারি না। আমাকে দিয়ে একসঙ্গে অনেক কাজ হয় না। আমার জন্য বিষয়টি মূলত জটিল।

নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে কি সিনেমা হলের বিকল্প মনে করেন?
নাসিরউদ্দিন খান: কোনো কিছুই কোনো কিছুর বিকল্প নয়। বাংলাদেশে টেলিভিশন আসার পর মঞ্চ কিংবা যাত্রায় কাজ করা অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছিলো, টেলিভিশন কি মঞ্চের বিকল্প হতে যাচ্ছে? উত্তর ছিলো, না। কারণ মঞ্চ আলাদা একটি বিষয়। একইভাবে সিনেমা আলাদা একটি বিষয়। সিনেমাহলে অনেক মানুষ একসঙ্গে সিনেমা দেখে। অন্যদিকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একা কন্টেন্ট দেখি। সুতরাং কোনোটা কোনোটার বিকল্প নয়।

নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আগামী দিনে সিনেমা কিংবা ওটিটিতে কী কী পরিবর্তন দেখতে চান?
নাসিরউদ্দিন খান: পরিবর্তন তো শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। দুই-তিন বছর ধরে যেমন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, সেটি অব্যাহত থাকলেই আমি খুশি। সিনেমা কিংবা ওটিটি দুই মাধ্যমেই এখন কন্টেন্ট নির্ভর কাজ হচ্ছে। যাচাই-বাচাই করে এবং অডিশন নিয়ে অভিনয়শিল্পী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। মেক-আপ, কস্টিউম, লাইট, ক্যামেরাসহ প্রতিটি শাখায় পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। সবাই খুব সিরিয়াসলি কাজ করছেন।

‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ ওয়েব সিরিজে নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ভাইরাল ব্যাপারটাকে কিভাবে দেখেন?
নাসিরউদ্দিন খান: কোনোভাবেই দেখি না। ভাইরাল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভাইরাল অনেক কারণে হয়। গরু আছাড় খেয়ে পড়ে গেলে সেটাও ভাইরাল হয়। সুতরাং ভাইরাল হওয়াটা মূল বিষয় নয়। কন্টেন্ট কেমন সেটাই আসল কথা।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘তৈ তৈ তৈ আমার বৈয়ম পাখি কই’ গানটা নিয়ে যখন কাজ করছিলেন তখন কি ভেবেছেন এটি এতোটা সাড়া পাবে?
নাসিরউদ্দিন খান: সত্যি বলতে, কিছুটা আশা ছিলো। অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে সাধারণত ভাবি কতোটা ভালো হলো কিংবা কতোটা সাড়া পাবে। আগে থেকে ভাবি না কাজটি অনেক মানুষের ভালো লাগবে। কিন্তু এই গানটির বেলায় আমরা কেন জানি আশাবাদী ছিলাম। এর কথা, সুরসহ সব মিলিয়ে আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কাজ করেছে যে, দর্শক-শ্রোতারা এটি পছন্দ করবে। এটি লিখেছে সন্ধি ও ম্যাক্স রহমান, সুর সন্ধির। গানটি আমাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। ‘বৈয়াম পাখি’ বাচ্চাদেরও গাইতে দেখেছি, এতোটা আশা করিনি।

নাসিরউদ্দিন খান (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনার ভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
নাসিরউদ্দিন খান: যারা আমার কাজ পছন্দ করেন, ভক্ত বলতে তাদেরই বুঝি। তাদের কথা বলে সত্যি শেষ করা যাবে না। একসময় থিয়েটার করেছি। এরপর চাকরি করতাম। পেশা বদলে পর্দার সামনে কাজ করতে এসেছি। এরপর থেকে ভক্ত-দর্শকদের কাছ থেকে যতোটা ভালোবাসা পেয়েছি সেটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। এটা ভাবলে নীরবে একান্তে আমার চোখে জল চলে আসে। খুব ভালোও লাগে। ভক্তদের কথা ভাবতে খুব ভালো লাগে। তাদের জন্য আমার দায়বদ্ধতা অনেক বেড়ে যায়। তাই কাজের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হই। শুধু আমার ভক্ত না, সবার ভখ্তদের জন্য শুভকামনা রইলো আমার। সবাই সবসময় ভালো থাকবেন, শরীরের যত্ন নেবেন, মনের যত্ন নেবেন। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।

পড়া চালিয়ে যান

আলাপচারিতা

আমার ক্যারিয়ার কিন্তু একদিনে হয় নাই, অনেক সংগ্রাম করেছি: আফরান নিশো

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমায় আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোর অভিষেক হতে যাচ্ছে বড় পর্দায়। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তি পাবে ঈদুল আজহায়। এর ফার্স্ট লুক, অফিসিয়াল পূর্বাভাস ও আইটেম গান প্রকাশের পর দারুণ সাড়া পাচ্ছেন তিনি। আলফা-আই স্টুডিওস ও চরকির প্রযোজনায় এতে মাসুদ চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। প্রথমবার রুপালি পর্দায় কাজ করা উপলক্ষে সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় ১০ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হচ্ছে শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’কে। ফলে আসন্ন ঈদুল আজহায় সিনেমাহলে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
আফরান নিশো: আমার মনে হয়, সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকলে ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য ভালো। এতে ইন্ড্রাস্ট্রির উন্নতি হবে। আমি মনে করি, প্রতিযোগিতা সবসময় ছিলো। কারণ প্রতিযোগিতা না থাকলে আমি চ্যালেঞ্জ অনুভব করি না। নাটকে কাজ করার সময়ও অন্যদের সঙ্গে আমাকে নিয়ে আলোচনা সবসময়ই ছিলো। সেটা ভিউ, ভালো কাজ কিংবা ভক্তদের ক্ষেত্রে হোক। আর ভক্তদের মধ্যে উন্মাদনা থাকবেই, কারণ তারা অনেক আবেগী। আমার কাছে মনে হয়, ভক্তদের দায়িত্বশীল থাকতে হয়। কারণ তারা আমার প্রতিনিধিত্ব করে। আমার ভক্তদের প্রতি সেই দায়িত্ববোধের জায়গাটা ধরে রাখার অনুরোধ জানাই।

আমার ক্যারিয়ারটা দীর্ঘদিনের হলেও জানি আমি সবসময় থাকবো না। এটাই নিয়ম। এর ফলে একজনের পর আরেকজন আসে। তাই আমার ক্ষুধা অভিনয়ে। আমি অভিনয় করে যাবো। একটু ভিন্নধর্মী চরিত্র পেলে আমার জন্য বরং সহজ হয়। আমার মতে, একজন অভিনয়শিল্পীকে সব ধরনের চরিত্রে কাজ করা উচিত। দর্শকদের চিন্তাধারা বদলেছে, তারা সব ধরনের কাজ গ্রহণ করছেন। এজন্য চরিত্রনির্ভর অভিনয়শিল্পীরা উঠে এসেছেন।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র পূর্বাভাস প্রকাশের পর আপনার অনেক সহকর্মী এটি শেয়ার দিয়ে শুভকামনা জানিয়েছেন। এসব দেখে কেমন লেগেছে?
আফরান নিশো: এটা আমার কাছে বিস্ময়কর ঘটনা এবং অবাক করার মতো। আমরা যারা একই অঙ্গনে কাজ করি, তাদের সবারই ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকে। কোনও কিছু ভালো লেগে গেলে হয়তো আমরা স্বেচ্ছায় বরণ করি। এছাড়া দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করলে আলাদা দায়িত্ববোধ তৈরি হয়। কোনও সহকর্মী যদি নতুন কিছুতে পদার্পণ করে তখন একটা দায়িত্ববোধের ব্যাপার চলে আসে। এতো বছর ছোট পর্দায় কাজ করার পর বড় পর্দায় আসছি বলে অনেকে হয়তো দায়িত্ব ভেবে শুভকামনা জানিয়েছে। বিয়ের সময়ও আমরা এভাবে শুভকামনা জানিয়ে থাকি।

ব্যক্তিজীবনে আমি আবেগপ্রবণ মানুষ। অপরিচিতদের সামনে আমি চাপা স্বভাবের। কিন্তু বন্ধুমহলে ও কাছের মানুষদের কাছে খুবই প্রাণখোলা। আমি সবাইকে মন থেকে ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাচ্ছি। মনে হচ্ছে, আমরা যারা একই অঙ্গনে কাজ করি, তাদের মধ্যে ভালোবাসা ফুরিয়ে যায়নি। আমরা একে অপরের প্রতি যে দায়িত্ববোধের কথা বলি, সেটি হয়তো ফুরিয়ে যায়নি। একইসঙ্গে নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়! মাঝে মধ্যে ভাবি, আমি কি অন্যদের মতো উদার কিংবা তাদের মতো দায়িত্বজ্ঞান আমার আছে কিনা। কোনো কিছুতে অন্যের পদচারণা যদি ভালো লেগে যায়, তাহলে উৎসাহ দিলে অনুপ্রাণিত হতে পারে। সেটা যে কারো ক্ষেত্রেই। আমার প্রতি অন্যদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে আমার ভালোবাসাও জাগ্রত হচ্ছে।

আফরান নিশো (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষ্ক্রিয় বলা চলে! আপনার প্রতি অন্যদের ভালো লাগা দেখে ফেসবুকে সক্রিয় হওয়ার কথা ভাববেন?
আফরান নিশো: সোশ্যাল মিডিয়া এখন এমন হয়ে গেছে যে, মানুষ অনেক জাজমেন্টাল। ধরুন একটি কবিতা লিখলাম, সেটি যদি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা হয় তাহলে মানুষ ভাববে নিশো প্রেমে ব্যর্থ! এটি যে অন্যের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে আমার ভাবনায় আসতে পারে, সেটি না বুঝে সবাই মনে করবে এটাই আমার জীবন।  হয়তো আমার এমনিতেই একটি স্ট্যাটাস দিতে ইচ্ছে হলো, সেটি আমার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত না হলেও মানুষ সেটাই ধরে নেবে। আমার বাবা, মা কিংবা ভাইয়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে লিখলেও ধারণা সেই একই হবে। এসব কারণে লিখতে একটু ভয় পাই।

তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় সবসময় কোনো কাজ ছাড়াই একের পর এক রিল দেখতে থাকা আমার কাছে রোগের মতো মনে হয়। এখনকার মানুষের এটি বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমার চিন্তা হয়, আমিও যদি এতে আসক্ত হয়ে যাই তাহলে নিজের মতো বেঁচে থাকা ও ভাবনার আনন্দ ব্যাহত হবে। যদিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা দরকার। এটিও এক ধরনের স্মার্টনেস। আমার মনে হয়, কোনো সমস্যা কিংবা ঘটনা নিয়ে মতামত জ্ঞাপন করা শিল্পীসত্তার দায়িত্ব। অনেক সময় ভাবি– চুপ করে থাকবো কেনো, বরং কিছু কথা বলি। এখন বুঝতে পারছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার একটু সক্রিয় থাকা দরকার।

আফরান নিশো (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
আফরান নিশো: আমরা অনেক বড় একটি টিম অনেক দিন ভেবে ও খেটে একটি বিন্দুতে আসতে পেরেছি। সেজন্য এই সিনেমা করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের সবার ডেডিকেশন, সময় ও অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে এতে। কেউ যদি কোনো কাজে কষ্ট করে, পর্দায় সেই প্রতিফলন পাওয়া যায়। এটা বলে বোঝাতে হয় না। আমাদের কষ্ট যদি স্ক্রিনে ফুটে ওঠে তাহলেই পুরো ইউনিট সার্থক।

আমরা যদি সব মিলিয়ে এই সিনেমায় ১০০ জন কাজ করে থাকি, প্রত্যেকের ভাবনা ছিলো একই। আমরা এতো মানুষ মিলে একবিন্দুতে এসে একটা গল্প বলার চেষ্টা করেছি। সেই গল্প দেখে মানুষ নিজেদের সংযোগ ঘটাতে পারলে, তাদের জীবনের সঙ্গে এটি মিলে গেলে কিংবা তাদের ভাবালে আমরা সফল হবো। সিনেমাটির প্রত্যেক চরিত্রই এমন যে, দর্শকরা মনোযোগ দিয়ে সিনেমাটি দেখলে নিজেদের সঙ্গে মেলাতে পারবেন। অভিজাত শ্রেণি থেকে নিম্নবিত্তসহ সবশ্রেণির দর্শকের জীবনের সঙ্গে মিলে যাবে গল্পটা। কারণ এখানে অনেক স্তর আছে।

‘সুড়ঙ্গ’র দৃশ্যে আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: মাসুদ কেন সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে?
আফরান নিশো: সুড়ঙ্গটা কিন্তু রূপক। আমরা ফার্স্ট লুক ও পূর্বাভাসে দেখেছি মাটি খোঁড়া হচ্ছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো– মাসুদ কেন সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে, কোথায় খুঁড়ছে? এর আগে কি কেউ ওর মনের মধ্যে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ফেলেছে নাকি সুড়ঙ্গটা খোঁড়াই ছিলো আর মাসুদ সেটাতে নামে, এমন অনেক প্রশ্ন কিন্তু থাকছে। এমনও তো হতে পারে, মাসুদ বিপদে পড়েনি কিন্তু তার বন্ধু বিপদে ফেলে দিয়েছে। তাহলে সুড়ঙ্গটা কে করলো? মাসুদের বন্ধু? আক্ষরিক অর্থে শুধুই খোঁড়াখুঁড়ি নয় এই গল্প। এর ভেতরে অন্য একটি সুড়ঙ্গ আছে।

‘সুড়ঙ্গ’র ফার্স্ট লুক টিজারে আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র ভেতরে শুটিং নিশ্চয়ই চ্যালেঞ্জিং ছিলো?
আফরান নিশো: আগে থেকে জানতাম– আমাকে এমন একটি জায়গায় কাজ করতে হবে, যেখানে চাইলেই দাঁড়ানো যাবে না এবং নড়াচড়া করা আমার জন্য এতো সহজ হবে না। শুধু আমার বেলায় নয়, কারিগরি কাজে সম্পৃক্ত সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। যখন ঝড় আসে আমরা আগে থেকে জানতে পারি বলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি। যেমন করোনার শুরুর সময় লকডাউনের জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। ধীরে ধীরে আমরা মেনে নিতে পেরেছি, এজন্য পরে সমস্যাটা কম হয়েছে। আমরা কোনো ব্যাপারে মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জ নিলে অর্ধেক কাজ সহজ হয়ে যায়।

‘সুড়ঙ্গ’ একটা দীর্ঘ সময়ের কাজ। তাই আমাদের কী কী সমস্যা হতে পারে সেসব আমরা আগেই আলোচনা করেছি। শ্বাসকষ্ট হলে ব্যাকআপ লাইন কী, অক্সিজেনের জোগান নির্বিঘ্ন থাকবে কিনা, প্রাকৃতিক বাতাসের সম্ভাবনা আছে কিনা ইত্যাদি নিয়ে আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি ছিলো। আমরা জানতাম, শ্বাসকষ্টের মতো যেকোনো বিপর্যয় ঘটতে পারে। শুটিংয়ে গিয়ে দেখলাম– আমি না হয় অভিনেতা হিসেবে কাজ করছি, কিন্তু ইউনিটের লোকজন আরো বেশি কষ্ট করছে। সেই বিষয়টি আমাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরো সাহস জুগিয়েছে। তখন ভাবতাম আমার চেয়েও বেশি কষ্ট করছে অন্যরা। তবে একদিনে তিনটি দৃশ্যধারণের পরিকল্পনা থাকলেও ৫-১০ মিনিট পরপর সবাই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলো আর ‘সুড়ঙ্গ’টা বেশ বড় ছিলো। ফলে সময় বেশি যাওয়ায় একদিনে দুটির বেশি দৃশ্যের কাজ করতে পারিনি।

একটা বিষয় ঠিক করেছিলাম যে, আমার সমস্যা হলেও আওয়াজ খুব একটা দেবো না। কারণ আওয়াজ ছোট থাকলে সমস্যা ছড়ায় কম। আমার সমস্যা হলেও ইউনিটকে খুব একটা বুঝতে দিতাম না। তারাও একই মানসিকতা ধরে রেখে নিজেরা কিছু বলতো না। ‘সুড়ঙ্গ’তে কাজ করা আমার জন্য নতুন একটা অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে ভালো আর আমি ধন্য যে, এমন একট ইউনিট পেয়েছি।

‘সুড়ঙ্গ’র দৃশ্যে আফরান নিশো (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘সুড়ঙ্গ’র শুটিংয়ের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা কোনটি?
আফরান নিশো: মনে রাখার মতো ঘটনা প্রতি পদে পদেই ঘটেছে। প্রথম ধাপের শুটিংয়ের একটা ব্যাপার বলি। আমরা তখন সুনামগঞ্জের নীলাদ্রি লেক এলাকায়। সেকানে থাকা-খাওয়ার খুবই কষ্ট। সহজে হোটেল পাওয়া যায় না। তাই আমরা যেভাবে কাজ করে অভ্যস্ত সেরকম পরিস্থিতি ছিলো না। আমি যেরকম ভেবেছিলাম– প্রতিদিন সবাই শুটিং শেষে রাতে আলোচনা করবো, আবার সকালে উঠে সবাই সবার চেহারা দেখবো। কিন্তু একেকজন একেক জায়গায় থাকায় সেসব হয়নি। শুটিংয়ের পর একটু আলোচনা সেরেই যে যার ঘরে চলে যেতাম। কারণ একটা রুম থেকে আরেকটি রুমের দূরত্ব ছিলো অনেক। ইউনিটের লোকজন, পরিচালক, অভিনেত্রী, অন্য অভিনয়শিল্পী, কারিগরি কাজে সম্পৃক্তসহ সবাইকে একেক জায়গায় থাকতে হয়েছে। তবে থাকার ব্যাপারে বেশ কষ্ট হলেও সবাই মুখ বন্ধ করে কাজটা করেছে। এমন সহযোগিতাপ্রবণ মনোভাব আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের কাছ থেকে সহায়তা করার মানসিকতা শিখেছি। আমার মনে হয়েছে, সবাই কষ্ট করার জন্য এক হতে পারার কোনো না কোনো কারণ আছে। নীলাদ্রিতে আমরা প্রায় ৪০ দিনের মতো শুটিং করেছি। হোটেল ভালোভাবে পেলে ২০-২২ দিনে কাজ শেষ হতো।

‘কলিজা আর জান’ গানের দৃশ্যে আফরান নিশো ও নুসরাত ফারিয়া (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘কলিজা আর জান’ গানে নাচের অভিজ্ঞতা কেমন হলো শুনি।
আফরান নিশো: গানটির কোরিওগ্রাফি করেছেন কলকাতার বাবা যাদব। তিনি নাচের মুদ্রা দেখানোর পর পর্যবেক্ষণ করেছেন আমি কীসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি কিংবা আমাকে দিয়ে কেমন নাচ হবে। এমন কোনো কঠিন মুদ্রা তিনি সাজাতে চাননি যেটি আমার জন্য কঠিন হবে কিংবা আমি মানিয়ে নিতে পারছি না। আমি নাচের ব্যাপারে অনেকটাই কাঁচা। তবুও আমি নেচেছি আর তিনি বলছিলেন, ‘হয়ে গেছে। শুধু স্পৃহার মাত্রা বাড়ালেই চলবে।’ গানটিতে আমার এতো বেশি নাচ নেই। নুসরাত ফারিয়ার নাচই বেশি। আমাকে তিনি শুধু বলেছেন, চরিত্রের মধ্যে থাকলেই চলবে।

নাচ-গানে ভরপুর বিষয়টা আমি তেমন পছন্দ করি না। আমার নাটকের ক্ষেত্রেও একটু বাস্তবিক ব্যাপার চাই বরাবরই, জানি না হয় কিনা। কিন্তু আমি চাই যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত অভিনয় করা যায়। সিনেমার ক্ষেত্রেও আমি মনে করি, যখন যে বিষয় প্রয়োজন তখনই সেটি থাকা উচিত। ‘সুড়ঙ্গ’ গল্পে আমার চরিত্রের নাম মাসুদ। শুটিংয়ে আমরা বলাবলি করতাম, মাসুদ তুমি ভালো হয়ে যাও! মাসুদ যখন স্বাভাবিক থাকে না কিংবা মদ্যপ হয়ে যায়, তখন বন্ধু তাকে আরাম-আয়েশের জন্য একটা জায়গায় নিয়ে যায়। গানটির কথায় বোঝানো হয়েছে, টাকাই মুখ্য। নারীর চেয়েও টাকার প্রতি মাসুদের নেশা বেশি। সেক্ষেত্রে আমি এটিকে আইটেম গান বলবো না! এটি গল্পের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে যৌক্তিক কারণেই জায়গা পেয়েছে।

‘সুড়ঙ্গ’তে আফরান নিশো ও তমা মির্জা (ছবি: চরকি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ময়নাকে নিয়ে কিছু বলেন।
আফরান নিশো: ময়না হলো মাসুদের বউ। ময়নাকে নিয়ে বললে স্পয়লার হয়ে যাবে। বরং তমা মির্জাকে নিয়েই বলি। আমার মনে হয়নি তার বিপরীতে প্রথমবার কাজ করছি। সে হয়তো খুব বিনয়ী ও নম্র। তমা খুব ভালোভাবে পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে নিতে পারে।

চিত্রনায়িকারা কেমন হয় আমি জানি না, কারণ আগে কখনো বড় পর্দার নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করিনি। ছোট পর্দায় মেহজাবীন চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও তানজিন তিশার ডেডিকেশন আমার দেখা। সেদিক থেকে তমাকে আলাদা লাগেনি। আমার কাছে তাকে কাছের মানুষ মনে হয়েছে। সে অনেক মিশুক। একইসঙ্গে তার মধ্যে অভিনয়ের ক্ষুধা আছে।

সেজন্য অনেক সময় নিজের দৃশ্য না থাকলেও সে বসে দেখতো, পর্যবেক্ষণ করতো। একজন নায়িকার ক্ষেত্রে এগুলো অনেক ইতিবাচক বিষয়। তারকাসুলভ ব্যাপার তার মধ্যে দেখিনি। সে ভালো মানুষ এবং কাজের প্রতি অনেক ডেডিকেটেড। একবার না হলে বারবার দেওয়ার যে প্রবণতা তার মধ্যে দেখেছি, তাতে তার প্রতি আমার সম্মান ও আস্থা বেড়েছে। আমার কাছে মনে হয়, এমন সহশিল্পী সবার কাছে কাঙ্ক্ষিত।

(বাঁ থেকে) তমা মির্জা, শাহরিয়ার শাকিল, আফরান নিশো ও রায়হান রাফী (ছবি: কানন ফিল্মস)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: রায়হান রাফীর পরিচালনায় প্রথমবার কাজ করলেন। তার সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কী ভেবে?
আফরান নিশো: আমার কাজ হলো পারফরম্যান্স দিয়ে পরিচালককে খুশি করা। ছোট হোক বড় হোক, প্রত্যেক পরিচালককে তার মর্যাদা দেই। রাফী যখন শর্টফিল্ম বানাতো তখন থেকে তার কাজ আমার ভালো লাগে। সে অনেক তরুণ, প্রাণচঞ্চল ও আত্মবিশ্বাসী। রাফির আগের শর্টফিল্মগুলো দেখার সময় থেকে তার ব্যাপারে জানতাম। সে কোরআনে হাফেজ। একজন কোরআনে হাফেজ এভাবে কন্টেন্ট বানাচ্ছে দেখে অবাক হতাম। প্রত্যেকেরই নিজস্ব দর্শন থাকে। আমি মনে করি– যেকোনো মানুষ নিজের মধ্যে একজন শিল্পীকে খুঁজে পেতে পারে, নিজেকে শিল্পী দাবি করতে পারে।

রাফীর সঙ্গে আমার অনেকবার আলোচনা হয়েছে। এর আগেও একটি সিনেমায় কাজ করার কথা ছিলো আমাদের। কিন্তু সেটি পরে হয়নি। এরপর ‘সুড়ঙ্গ’র গল্পটা এলো। রাফী অনেক আগেই আমাকে বলে রেখেছে, এই কাজটি আমাকে নিয়ে করবে। একদিন হঠাৎ সে জানায়, এবার ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমাটি বানাবে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করি, গল্পটিতে সিনেমার সম্ভাবনা আছে কিনা। সে বললো– শতভাগ আছে। কোনো কিছুতে অপূর্ণতা থাকলে নতুন কিছু সংযোজন করা হবে। সে এই সিনেমা বড় পরিসরে করতে চেয়েছে, কারণ এটা ওর স্বপ্নের মতো। পরবর্তী সময়ে আমরা অনেকবার বসে গল্প, বাজেট, কারিগরি টিমসহ সব বিষয়ে আলোচনা করি। তখন থেকে সিনেমাটিতে বড় কিছু দেখতে পেয়েছি।

রাফী নিজে বলার পাশাপাশি অভিনয়শিল্পীদের মতামত শোনে, এটা তার অনেক ভালো একটি দিক। অনেক সময় আমার ভাবনা শেয়ার করতাম। সবার কথা শুনে দিন শেষে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হয়েছে, কারণ সে সিনেমাটির ক্যাপ্টেন। রাফী পরিশ্রমী ছেলে। সে দিনে দিনে পরিণত হয়েছে। আমার ক্যারিয়ারও কিন্তু একদিনে হয় নাই, আমিও অনেক সংগ্রাম করেছি।

‘সুড়ঙ্গ’তে আমার অনেক কিছুই প্রথম। রাফীর পরিচালনায় এটি আমার প্রথম কাজ। তমা মির্জার বিপরীতে প্রথমবার কাজ করেছি। চিত্রগ্রাহক সুমন সরকারের সঙ্গে যদিও আমার পরিচয় অনেক আগে, কিন্তু সে আর আমি প্রথমবার কাজ করেছি একই সিনেমায়। আলফা-আই স্টুডিওসের প্রযোজনায় আমার প্রথম কাজ এটি।

পড়া চালিয়ে যান

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ