Connect with us

গান বাজনা

পরিবার ও বন্ধুরা ডাকতো রবিন নামে, রুপালি গিটারে আপন করেছিলেন শ্রোতাদের

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

আইয়ুব বাচ্চু (জন্ম: ১৬ আগস্ট, ১৯৬২; মৃত্যু: ১৮ অক্টোবর, ২০১৮)

আইয়ুব বাচ্চু নামের মানুষটা নেই। তবে তাঁর সৃষ্টি করা অনেক সুর আর গান আছে। তিনি ছিলেন শ্রোতাদের খুব আপন। তাঁর অসামান্য সুরের মায়াজাল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অসংখ্য শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়েছে। তিনি ছিলেন গিটারের সমার্থক। ছয় তারের মূর্ছনা, হৃদয় নিংড়ানো গানের কথা ও সুরের অনুরণনে এক মোহমায়ায় সংগীতপিপাসুদের জড়িয়ে রেখেছিলেন কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী।

আইয়ুব বাচ্চুকে ভাবা হয় দেশের সত্যিকারের রক আইকন। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গিটারবাদক। ২৭ বছরের বর্ণাঢ্য সংগীত জীবন কাটিয়েছেন জনপ্রিয় এই তারকা। আজ (১৮ অক্টোবর) বাংলা ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম এই পুরোধার চিরবিদায়ের দিন। তাঁকে পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেছেন সংগীতানুরাগীরা। ২০১৮ সালের এই দিনে ৫৬ বছর বয়সে রুপালি গিটার ফেলে বহুদূরে আকাশে উড়াল দেন তিনি।

আইয়ুব বাচ্চু (জন্ম: ১৬ আগস্ট, ১৯৬২; মৃত্যু: ১৮ অক্টোবর, ২০১৮)

আইয়ুব বাচ্চুর জীবনের শেষ তিন দিন কেমন ছিলো? ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর রংপুর জিলা স্কুলে একটি কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করেন তিনি। কিন্তু ঢাকায় ফিরে আসতেই অসুস্থতা বোধ করেন। ১৮ অক্টোবর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বাসা থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাংলা সংগীতজগতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। ২০০৯ সালে তার হার্টে রিং পরানো হয়েছিলো। ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ায় ২০১২ সালের নভেম্বরে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেই যাত্রায় সুস্থ হয়ে সংগীতাঙ্গনে ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু এর ছয় বছর পর আর ফেরা হলো না তাঁর।

শৈশবে আইয়ুব বাচ্চু (ছবি: এবি কিচেন)

ডাকনাম রবিন
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের এনায়েত বাজারে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। তার বাবা ইসহাক চৌধুরী, মা নূরজাহান বেগম। তাঁর শৈশব কাটে চট্টগ্রামেই। পরিবার ও বন্ধুরা রবিন নামে ডাকতো তাঁকে। নিজের শুরুর দিকের প্রায় সব অ্যালবামে এই নাম ব্যবহার করেছেন তিনি।

মায়ের সঙ্গে আইয়ুব বাচ্চু (ছবি: এবি কিচেন)

এলআরবি সমগ্র
সত্তর ও আশির দশকে আগলি বয়েজ, ফিলিংস এবং সোলস ব্যান্ডে যুক্ত ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল লিটল রিভার ব্যান্ড (সংক্ষেপে এলআরবি) গঠন করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে এর পূর্ণাঙ্গ রূপ বদলে রাখা হয় লাভ রানস ব্লাইন্ড। ব্যান্ডটির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম ‘এলআরবি-১’ ও ‘এলআরবি-২’ (১৯৯২) প্রকাশিত হয়। ১৯৯৮ সালে ‘আমাদের বিস্ময়’ নামে আরেকটি ডাবল অ্যালবাম বের করেন তারা।

এলআরবির অন্য অ্যালবামগুলো হলো– ‘সুখ’ (১৯৯৩), ‘তবুও’ (১৯৯৪), ‘ঘুমন্ত শহরে’ (১৯৯৫), ‘স্বপ্ন’ (১৯৯৬), ‘মন চাইলে মন পাবে’ (২০০১), ‘অচেনা জীবন’ (২০০৩), ‘মনে আছে নাকি নাই’ (২০০৫), ‘স্পর্শ’ (২০০৭) এবং ‘যুদ্ধ’ (২০১২)। এরমধ্যে ‘সুখ’ অ্যালবামে ছিলো এলআরবির বিখ্যাত গান ‘চলো বদলে যাই’। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় এলআরবির আনপ্লাগড লাইভ অ্যালবাম ‘ফেরারি মন’।

আইয়ুব বাচ্চু (ছবি: এবি কিচেন)

একক অ্যালবাম
এলআরবির পাশাপাশি আইয়ুব বাচ্চুর একক অ্যালবাম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’। ১৯৮৮ সালে বাজারে আসে দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ময়না’। অন্যান্য এককের মধ্যে রয়েছে ‘কষ্ট’ (১৯৯৫), ‘সময়’ (১৯৯৮), ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কী’ (২০০২), ‘দুটি মন’ (২০০২), ‘কাফেলা’ (২০০২), ‘প্রেম প্রেমের মতো’ (২০০৩), ‘পথের গান’ (২০০৪), ‘ভাটির টানে মাটির গানে’ (২০০৬), ‘জীবন’ (২০০৬), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’ (২০০৮), ‘বলিনি কখনো’ (২০০৯) এবং ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫)। ২০০৭ সালে যন্ত্রসংগীত ভিত্তিক অ্যালবাম ‘সাউন্ড অব সাইলেন্স’ বের করেন তিনি।

আইয়ুব বাচ্চু (ছবি: আরিফ আহমেদ)

সিনেমার গান
অডিওর পাশাপাশি সিনেমার গানে ব্যাপক সাফল্য পান আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর গাওয়া ‘আম্মাজান’ সিনেমার টাইটেল গানটি শ্রোতাদের মন জয় করে। এছাড়া আরো বেশকিছু সিনেমার জন্য গেয়েছেন তিনি। এ তালিকায় রয়েছে– ‘লুটতরাজ’, ‘সাগরিকা’, ‘লাল বাদশা’, ‘ব্যাচেলর’, ‘রং নাম্বার’, ‘চাঁদের মতো বউ’, ‘চোরাবালি’, ‘টেলিভিশন’, ‘তেজী’, ‘এক কাপ চা’ ইত্যাদি। পাশাপাশি অনেক বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল তৈরি করেছেন তিনি। বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে তাঁকে।

আইয়ুব বাচ্চু (ছবি: তুহিন হোসেন)

ব্যক্তিজীবন
১৯৯১ সালের ৩১ জানুয়ারি ফেরদৌস চন্দনাকে বিয়ে করেন আইয়ুব বাচ্চু। তাদের ছেলে আহনাফ তাজওযার আইয়ুব ও মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব। গান-বাজনা, সংসার ও সন্তানদের নিয়ে আনন্দেই কাটছিলো তাঁর জীবন। হঠাৎ তিনি চলে গেলেন অজানায়।

আইয়ুব বাচ্চু (ছবি: এবি কিচেন)

প্রবর্তক মোড়ে ‘রুপালি গিটার’
আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে স্থাপন করা হয় একটি গিটারের ভাস্কর্য। এর উচ্চতা ১৮ ফুট। এলআরবির ‘ফেরারি মন’ অ্যালবামের বিখ্যাত গান ‘রুপালি গিটার’-এর শিরোনামে এর নাম রাখা হয়েছে।

Advertisement

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ